ওয়েভার স্কিম নিয়ে খোদ রাজ্যপাল প্রশ্ন তোলার পরেই কর আদায়ে উদ্যোগী হল কলকাতা পুরসভা। বকেয়া কর আদায়ে সোমবার পুরসভা থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে এসি মার্কেট এবং রক্সি প্রেক্ষাগৃহে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এসি মার্কেটের পুর-কর বকেয়া পড়ে ছিল ৩৭ কোটি টাকা। সেই টাকা উদ্ধার করতে সকালে কর্মী পাঠিয়ে সেখানকার দখল নেয় পুরসভা। অন্য দিকে, লিজের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় এ দিনই রক্সি সিনেমা হল ও তার সম্পত্তিরও দখল নেওয়া হয়। কর্মীদের বার করে দিয়ে হলে তালা দিয়ে দেন পুর-কর্তৃপক্ষ। তবে পুরসভা সূত্রে খবর, বিকেলে এ সি মার্কেট কর্তৃপক্ষ পুরসভায় গিয়ে বকেয়া পুর-করের কিছু টাকা ও সেই সঙ্গে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রিম চেক-সহ মোট ৫ কোটি টাকা জমা দিয়ে আসেন।
এ দিন দার্জিলিং থেকে কলকাতা পৌঁছেই এ খবর পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথেই এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয় মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। কর আদায় করতে গিয়ে দীপাবলির মরসুমে যেন ওই দুই ভবনের ব্যবসায়ীরা কোনও সমস্যায় না পড়েন, সে দিকে নজর রাখতে মেয়রকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই পুর-কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, এ সি মার্কেট এবং রক্সিতে ঘর ভাড়া নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁরা সেখানেই থাকবেন। শুধু এত দিন ভাড়া বাবদ যে টাকা তাঁরা মার্কেট বা হল কর্তৃপক্ষকে দিতেন, এখন থেকে তা জমা দিতে হবে পুরসভায়। |
পুর-কর বকেয়া। এসি মার্কেটে পুরসভার হানার পরে পুলিশ পাহারা। |
মেয়র বলেন, “সম্পত্তিকর আদায় না হলে পুরসভার কাজ চলবে কী করে? তাই বকেয়া উদ্ধারের জন্য সম্পত্তির দখল নেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, এখন বকেয়া কর ২,৬২১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকার বেশি। ওই টাকা পুরসভার প্রাপ্য হয়েছে ৩, ৫৯, ৭৬৪টি সম্পত্তি থেকে। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বকেয়া কর প্রাপ্য রয়েছে ৩০১ জনের কাছে।
শোভনবাবু আরও জানান, রক্সি ও তার লাগোয়া সম্পত্তির মালিক কলকাতা পুরসভা। ওই সম্পত্তি ৯৯ বছরের জন্য এক ব্যক্তিকে লিজ দেওয়া হয়েছিল। তার মেয়াদ ফুরিয়েছে ২০০৫-০৬-এ। তার পর থেকেই সেটির লিজ নবীকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হচ্ছে।
রক্সি-সহ ওই সম্পত্তি এত দিন যাঁকে লিজ দেওয়া ছিল, সেই সুনীত সিংহের অবশ্য দাবি, “পুরসভা ২০০৮-এ আমাদের জানায় ওই সম্পত্তির লিজের মেয়াদ শেষ, তা নবীকরণ করতে হবে। সেই মতো আমরা পুরসভার সঙ্গে আলোচনা শুরু করি। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই গত অগস্টে রক্সির গায়ে পুরসভার পক্ষ থেকে ‘এই সম্পত্তি পুরসভার’ বলে একটি নোটিস লটকে দেওয়া হয়। তার পরে সেপ্টেম্বরে পুরসভা আমাদের চিঠি দিয়ে জানায়, ওই সম্পত্তির লিজ নবীকরণ করতে হলে ২২ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা দিতে হবে। সঙ্গে বছরে ভাড়া দিতে হবে ৭ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা।” এখন রক্সি-কর্তৃপক্ষ পুরসভাকে বছরে ৭০০০ টাকা ভাড়া দেন। |
লিজের মেয়াদ ‘ফুরোনোর’ অভিযোগে রক্সি সিনেমায় তালা
দিতে পুলিশকে নিয়ে পুর-অভিযান। সোমবার দুপুরে। |
সুনীতবাবুর আরও অভিযোগ, “পুরসভার কাছে জানতে চাই, কীসের ভিত্তিতে পুরসভা লিজের জন্য ওই বিপুল অর্থ ধার্য করছে। তাতেই পুর-কর্তৃপক্ষ রেগে গিয়ে শনিবার দুপুরে চিঠি পাঠিয়ে জানায় ২৪ ঘণ্টায় সমস্ত মালপত্র সরাতে হবে। না হলে পুরসভা সম্পত্তির দখল নেবে। আজ সকালে ৫০-৬০ জন পুরকর্মী আমাদের কর্মীদের মারধর করে বার করে দেয়। আমিও সেখানে ছিলাম।”
সুনীতবাবুর অভিযোগের জবাবে মেয়র অবশ্য বলেন, “লিজ নবীকরণের জন্য দেয় টাকা এবং বছরে নির্দিষ্ট ভাড়ার প্রস্তাব পাঠানোর পরে ওঁরা আর আগ্রহ দেখাননি। তাই আজ ওই সম্পত্তির দখল নেওয়া হয়।” অন্য দিকে, যাঁরা বহু টাকা পুর-কর বাকি রেখেছেন তাঁদের অবিলম্বে বকেয়া মেটাতে এ দিন আবেদন করেন শোভনবাবু। অন্যথায়, তাঁদের সম্পত্তিও পুরসভা দখল নেবে বলে জানান তিনি।
|