কলকাতাকে লন্ডনের ধাঁচে গড়ে তোলার পথে আরও এক ধাপ এগোল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাজ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গঙ্গার ধারে ‘কলকাতা আই’ গড়ে তোলা হবে। ঠিক যেমন টেমস নদীর তীরে ‘লন্ডন আই’। প্রকল্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর নীচে, হাওড়ার দিকে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন (এইচআরবিসি)-এর ৪ একর জমি। এই বিশাল নাগরদোলায় চেপে ছোঁয়া যাবে মহানগরীর আকাশরেখাকে।
লন্ডনের আদলে কলকাতার শ্রী ফেরাতে শুরু থেকেই তৎপর মুখ্যমন্ত্রী। শহরে পর্যটক টানতে ব্রিটিশরা যেমন টেমস নদীকে বেছে নিয়েছেন, মমতাও তেমনই ‘পাখির চোখ’ করেছেন গঙ্গাকে। দূষণের দায়ে কাঠগড়ায় থাকা গঙ্গার সৌন্দর্যায়নে এখন একাধিক পদক্ষেপ করছে রাজ্য। তারই অন্যতম এই ‘কলকাতা আই’।
প্রকল্প রূপায়ণে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে প্রশাসন। আন্তর্জাতিক টেন্ডারে সাড়া দিয়েছে বহু সংস্থা। মহাকরণ সূত্রে খবর, তাদের মধ্যে রয়েছে লন্ডন, সিঙ্গাপুরের বিশেষজ্ঞ সংস্থাও। নভেম্বরে টেন্ডার খোলার পরে সব দিক বিবেচনা করে বরাত দেওয়া হবে। সরকারের আশা, আগামী বছরের শুরুতে নির্মাণ শুরু হয়ে যাবে। একটানা কাজ হলে ২০১৪ সালে চালু হয়ে যাবে ‘কলকাতা আই’।
‘লন্ডন আই’ তৈরি হয় ১৯৯৯ সালে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩৫ মিটার উচ্চতার ওই নাগরদোলার ৩২টি কেবিনে (ক্যাপসুল) একসঙ্গে ৮০০ লোক উঠতে পারেন। তাতে চেপে এক বার চক্কর দিতে সময় লাগে আধ ঘণ্টা। বলা হয়, ‘লন্ডন আই’-তে না উঠলে পর্যটকদের লন্ডন ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থাকে। |
টেম্স থেকে দেখা ‘লন্ডন আই’। ছবি: বুধাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় |
পর্যটকদের কাছে ‘কলকাতা আই’-এর আকর্ষণও সেই পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চায় নতুন সরকার। নকশা অনুযায়ী, ১৫০ থেকে ১৮০ মিটার উঁচু এই নাগরদোলায় একত্রে অন্তত ৫০০ জন উঠতে পারবেন। ৩০-টির মতো কাচের কেবিনের এই নাগরদোলা এক বার চক্কর দিতে সময় নেবে প্রায় এক ঘণ্টা।
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘কলকাতা আই’ থেকে বিপুল রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা থাকায় কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রক সর্বাধিক ৫০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে। বিনামূল্যের জমিটি হবে সরকারের অংশীদারিত্ব। প্রকল্প গড়বে বেসরকারি সংস্থা। তারা বিনিয়োগের টাকা তুলবে বি ও টি পদ্ধতিতে।
প্রকল্প সম্পর্কে রাজ্যের নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনা এবং উৎসাহেই আমরা এটা করতে পারছি।”
অন্য দিকে, টেমসের আদলে গঙ্গার সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতে ব্রিটেনের বিদায়ী হাইকমিশনার রিচার্ড স্ট্যাগ। এ ব্যাপারে ব্রিটেনের তরফে রাজ্যের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন তিনি। সোমবার মহাকরণে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গেও বৈঠক করেন এই ব্রিটিশ কূটনীতিক। স্ট্যাগ বলেন, “নতুন সরকার সম্ভাবনার নয়া সুযোগ তৈরি করেছে। আমরা সেই সুযোগ নিতে আগ্রহী।” |