চার দিন কেটে গিয়েছে। লিবিয়ার মিসরাতা শহরের সেই বাজারের হিমঘরটায় আজও রাখা রয়েছে মুয়ম্মর গদ্দাফির দেহ। একই জায়গায় রাখা আছে তাঁর ছেলে মোতাস্সিম এবং লিবিয়ার প্রাক্তন সেনাপ্রধান আবুবকর ইউনিসের দেহ। অথচ সেই দেহগুলির অন্ত্যেষ্টি কবে হবে? আর কারাই বা সেই দেহগুলি নিয়ে গিয়ে কবরের ব্যবস্থা করবে? স্পষ্ট উত্তর মেলেনি আজও।
দেহ তিনটির শেষকৃত্য নিয়ে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ভিতরে নানা মত বিরোধ ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। সরকারের একটি অংশ চাইছে, সির্তেতেই কবর দেওয়া হোক দেশের প্রাক্তন একনায়ককে। মৃত্যুর আগে গদ্দাফি নিজেও নাকি এমনটাই চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সরকারেরই আর একটি অংশ তা করতে দিতে চাইছে না। আর এই টানাপোড়েনে ওই হিমঘরের পরিস্থিতি দিন দিন অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ছে। মৃতদেহগুলি দেখতে এখনও ভিড় লেগে রয়েছে। ভিড়ের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম নিরাপত্তারক্ষীরা দিনের বেশির ভাগ সময়টাই হিমঘরের দরজা খুলে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। আর তার ফলে হিমঘরের ফ্রিজারগুলি ঠিকঠাক কাজ করছে না। আর এত দিনের পুরনো মৃতদেগুলি আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত কালই অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, প্রয়োজনে গদ্দাফির পরিবারের হাতে তাঁর মৃতদেহ তুলে দিতে রাজি আছে সরকার। কিন্তু দেশে পট পরিবর্তনের পরে গদ্দাফির পরিবারের কারা, কোথায়, কী অবস্থায় রয়েছেন কেউ জানেন না। এই অবস্থায় দেহগুলির অন্ত্যেষ্টি কবে হবে তার উত্তরও জানা নেই।
এর মধ্যে গত কাল সির্তের একটি পরিত্যক্ত হোটেল থেকে মোট ৫৩ জনের পচাগলা দেহ উদ্ধার করেছে একটি মানবাধিকার সংস্থা। কমপক্ষে পাঁচ-ছ’দিন আগে ওই ৫৩ জনকে গুলি করা হয়েছে বলে ধারণা। আর সব ক’টি দেহ গদ্দাফি সমর্থকদের বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বিদ্রোহ থেমে যাওয়ার পরে তাঁরা আজ সকালেই ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। আর এসেই দেখছেন, ওই হোটেলে এতগুলি দেহ এক জায়গায় জড়ো করা ছিল। মানবাধিকার সংস্থাটির সদস্যরা জানাচ্ছেন, নিহতদের মধ্যে অনেকেরই হাত পিছন দিকে বাঁধা ছিল। সেই অবস্থাতেই তাঁদের গুলি করা হয়েছে।
লিবিয়ার ন্যাটো বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আজ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কিউবার প্রাক্তন প্রধান ফিদেল কাস্ত্রো। মুয়ম্মর গদ্দাফিকে যে ভাবে মারা হয়েছে, তারও তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার গদ্দাফির মৃত্যু হয়েছে। আর আজই প্রথম বারের জন্য মুখ খুলেছেন কাস্ত্রো। কিউবার সরকারি সংবাদপত্রে তাঁর নিজস্ব কলামে কাস্ত্রো লিখেছেন, “গদ্দাফির মৃতদেহ দেখা নিয়ে লিবিয়ায় যা উচ্ছ্বাস হচ্ছে, দেখে মনে হচ্ছে যেন কেউ যুদ্ধ জেতার ট্রফি সাজিয়ে রেখেছে।” |