স্বপ্নে দেবী চাইলেন কাঠের মূর্তি
পুজো মন্দির থেকে কয়েক পা হাঁটলেই সমুদ্রা পুকুর। টলটলে জলের এই পুকুরে কালীপুজোর দিন জাল নিয়ে নামে জেলেরা। পাড়ে তখন দাঁড়িয়ে বহু কোতুহলী মানুষ। জালে প্রথমে যে মাছ ওঠে, দ্রুত সেটি নিয়ে যাওয়া হয় ঠাকুর ঘরে। ওই মাছ দিয়ে রাঁধা হয়, দেবী ভবতারিণীর ভোগ। কালনার দেয়ারা গ্রামে নাথ পরিবারের পুজোয় এই রেওয়াজ বহু বছরের।
বাঘনাপাড়া পঞ্চায়েতের মধ্যেই দেয়ারা গ্রাম। গ্রামের মাঝামাঝি জায়গায় নাথ পরিবারের বাস। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই পরিবারের শিশুবালা কালীমন্দির। এই মন্দিরেই রয়েছে দেবী ভবতারিণীর দারু মূর্তি। মন্দির লাগোয়া লম্বা আটচালা। দীপান্বিতা অমাবস্যায় ভবতারিণীর পুজো দেখতে এই আটচালায় ঢল নামে স্থানীয় মানুষের। প্রচলিত ইতিহাস থেকে জানা গিয়েছে, পরিবারের সদস্য ফকিরচন্দ্র নাথ এই পুজোর প্রবর্তক। তিনি ভগিনী শিশুবালার বাড়িতে শুরু করেন দেবীর আরাধনা। প্রথমে দেবীর মূর্তি তৈরি করা হত মন্দির সংলগ্ন পুকুরের মাটি দিয়ে। নিয়ম মেনে বিসর্জনও হত মাটির সেই মূর্তির। কিন্তু জনশ্রুতি, তিন দশক আগে এই পরিবারেরই এক সদস্য পৃথ্বিনাথ নাথ স্বপ্নে দেখেন, দেবী পুজো চাইছেন দারুমূর্তিতে। এমনকী, মূর্তির জন্য কোথা থেকে কাঠ জোগাড় হবে, তার নির্দেশও স্বপ্নেই দেন দেবী। সেই মতো ঠিক হয়, পুকুর পাড়ে একটি নিম গাছের গুঁড়ি দিয়ে মূর্তি গড়া হবে। শোনা যায়, কালনা ২ ব্লকের এক শিল্পীকেও মূর্তি গড়ার জন্য স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন দেবী। তিনিই নাথ পরিবারের ঠাকুরঘরে এসে মূর্তি গড়েন। তবে দারুমূর্তিতে পুজো শুরু হওয়ার পর থেকে বিসর্জনের রেওয়াজ ভেঙেছে নাথ পরিবারে। প্রতি বারই কেবল পুজোর আগে নিয়ম করে হয় দেবীর অঙ্গরাগ।
নাথ পরিবারের ভবতারিণী পুজোয় রয়েছে বিশেষ একটি রেওয়াজ। পুজোর দ্বিতীয় দিন প্রসাদ পেতে এই বাড়িতে হাজির হন বহু মানুষ। সূর্যাস্ত পর্যন্ত যত মানুষই আসুন না কেন, তাঁদের কাউকেই ফেরানোর রীতি নেই। নিয়ম মেনে প্রত্যেকের পাতে তুলে দিতে হয় মাছ। পুজো উপলক্ষে হয় হোমযজ্ঞ। এর জন্য মন্দিরে রয়েছে একটি স্থায়ী হোমগর্ভ। বহু মানুষ পুজো উপলক্ষে মানত করেন। সেই মানত রক্ষা করতে সমুদ্রা পুকুর থেকে মন্দির পর্যন্ত আসেন বুক হেঁটে।
ভবতারিণীর পুজো স্থায়ী ভাবে চালানোর জন্য পরিবারের তরফে তৈরি করা হয়েছে, একটি ট্রাস্টি বোর্ড। এই বোর্ডের হাতে রয়েছে কিছু সম্পত্তি। তার আয়েই চলে পূজার্চনা। ট্রাস্টি বোর্ডের এখনকার ম্যানেজার মীরারানি দেবী বলেন, “পুজোয় জাঁকজমক কিছুটা কমেছে বটে। কিন্তু আজও পুজোর সময় বাড়িতে আসা ভক্তদের প্রসাদ না খাইয়ে ছাড়া হয় না।”
পুজোকে কেন্দ্র করে গল্পের শেষ নেই নাথ পরিবারে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, এক বার এক চোর ঢুকেছিল দেবীর মন্দিরে চুরি করতে। সে বার ধান-ভর্তি একটি লক্ষ্মীর ঝাঁপির মধ্যে রাখা ছিল রুপোর মুদ্রা-সহ দেবীর কিছু গয়না। কিন্তু সে সবের কিছুই খোয়া যায়নি। চোর ধরা পড়েছিল অন্য বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে। পরে সে নিজের মুখেই স্বীকার করে, লক্ষ্মীর ঝাঁপি খোলার পরেই চোখ ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল তার। গোটা ঝাঁপি হাতড়ে তাই ধান ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। পরিবারের সদস্যেরাও পরের দিন ঠাকুরঘরে ঢুকে দেখেন, চার দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ধান। আর সব গয়নাই অক্ষত রয়ে গিয়েছে ঝাঁপিতে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.