|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
নির্মোহ, বিরল রবীন্দ্রচর্চা |
বইপোকা |
কবিবর যাহাতে হাত দিবেন তাহাই সোনা হইবে। বাঙালির রবীন্দ্রচর্চা এমত এক পূর্বধারণার উপরেই এখনও পর্যন্ত অনেকাংশে প্রতিষ্ঠিত। কবিগুরুর ডাক্তারিও অধিকাংশত আপ্লুত প্রশংসা পাইয়াছে। চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথকে যুক্তি-তর্কের ভিত্তিতে নির্মোহ ভাবে দেখার কাজটি রবীন্দ্রচর্চায় প্রায় উপেক্ষিতই ছিল। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গ্রন্থ সেই ধারায় প্রথা ভাঙিয়াছে। ডাক্তার শ্যামল চক্রবর্তী তাঁহার রবি ঠাকুরের ডাক্তারি (সাহিত্য সংসদ, ১৫০.০০) বইয়ে চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথের শুধু সাফল্যের চর্বিতচর্বণ করেন নাই, খুঁজিয়াছেন তাঁহার ব্যর্থতা, হোমিয়োপ্যাথি সম্পর্কে অন্ধ সংস্কার এবং তার ফলাফলের দিকটিও। সাতটি অধ্যায়ে চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথের ব্যবচ্ছেদ করিয়াছেন তিনি। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, ‘মৃণালিনীর মৃত্যু ও রবীন্দ্রনাথ’ অধ্যায়টি। সেখানে ঠিক কোন অসুখে মৃণালিনীর মৃত্যু হয়েছিল সে সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ অনুমান আছে, আছে এই তথ্যভিত্তিক ইঙ্গিতও যে মৃণালিনীর মৃত্যুর জন্য অনেকাংশে দায়ী রবীন্দ্রনাথই। চক্রবর্তী মহাশয় লিখিতেছেন, ‘স্ত্রীর চরম অসুস্থতায় এক আশ্চর্য আত্মবিরোধের, দ্বন্দ্বের শিকার রবীন্দ্রনাথ। একদিকে স্ত্রীকে পাখার বাতাস করে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা, অন্যদিকে হোমিয়োপ্যাথি আঁকড়ে ধরে থেকে আধুনিক চিকিৎসার কোনো সুযোগ না-নেওয়া।’ কপিরাইট-উত্তরপর্বেও রবীন্দ্রচর্চায় এমন নির্মোহ গবেষকের দৃষ্টি বিরল। এই সার্ধশতবর্ষে এই বোধোদয় হইলেই মঙ্গল যে রবীন্দ্রনাথ ঋষি নহেন, ঋষিপ্রতিমও নহেন, রক্তমাংসের মানুষ। তদুপরি, পুরাকথাও বলে, ঋষিরাও রক্তমাংসেরই মানুষ। |
|
|
|
|
|