|
|
|
|
কংগ্রেস নেতাকে গুলি করে, কুপিয়ে খুন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাদুড়িয়া |
ফোন পেয়ে ‘একটু ঘুরে আসছি’ বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। পরে গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ ফিরল বাড়িতে। বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থানার কাটিয়াহাটে একটি ধানখেত থেকে দেবকুমার অধিকারী (৩৫) নামে ওই কংগ্রেস পঞ্চায়েত সদস্যের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আটুরিয়া পঞ্চায়েতের এই কংগ্রেস নেতার খুনের প্রতিবাদে শুক্রবার কাটিয়হাট পুলিশ চৌকিতে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় জনতা। বন্ধ রাখা হয় দোকান, বাজার। স্থানীয় একটি অটো ইউনিয়নেরও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দেবকুমারবাবু। বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে ধানখেতে একটি মৃতদেহ পড়ে আছে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তা উদ্ধার করে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। খুনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।” |
|
নিহত দেবকুমারের শোকার্ত মা-বাবা। |
প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও দলের জেলা পর্যবেক্ষক অজয় ঘোষ বলেন, “দলের একজন প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিলেন দেবকুমার। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই সময় বেছে বেছে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের খুন করা হচ্ছে। খুনের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এলাকা দিয়ে সীমান্তের পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল শুরু হওয়ার পরে তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য শুরু হয়। ক্রমশ তা বাড়তে থাকায় এলাকায় একটি পুলিশ চৌকি তৈরি হয়। তা সত্ত্বেও দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কমেনি। দেবকুমারবার এ সবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। কয়েক মাস আগে স্থানীয় পোলতার বিলে কয়েকটি ইটভাটা তৈরি নিয়ে দলের একাংশের সঙ্গে তাঁর বিবাদ শুরু হয়। তার প্রেক্ষিতে তাঁর নেতৃত্বে পঞ্চায়েতে দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়। অনাস্থায় হেরে যান প্রধান। এ নিয়েও দলের মধ্যে অস্বস্তিকর অবস্থায় ছিলেন দেবকুমার। এ ছাড়া কিছুদিন আগে বাড়ির কাছে একটি জমিতে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সেই সময় তাঁকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে বাড়ির লোকের অভিযোগ। খুনের কারণ হিসাবে সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি ফোনে জানায়, কাটিয়াহাট বাজারের কাছে মাঠপাড়ায় একটি ধানখেতে এক যুবকের মৃতদেহ পড়ে আছে। পুলিশ গিয়ে দেখে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ দেহ পড়ে আছে। শরীরে ভোজালির আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ। |
|
দেবকুমার |
পুলিশ জানিয়েছে, অসুস্থ বাবা-মা ছাড়া নিকটআত্মীয় বলতে কেউ ছিলেন না দেবকুমারের। জয়কুমার নামে তাঁর এক দাদা থাকলেও বছর দশেক আগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। ফলে বাড়ির একমাত্র রোজগেরে মানুষ ছিলেন দেবকুমার। এক সময় বসিরহাট মহকুমা ছাত্র পরিষদের সভাপতি ছিলেন। মা কল্যাণীদেবী বলেন, “বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে নাগাদ বাড়ি ফিরে আমাকে ভাত বাড়তে বলে স্নান করতে যায়। স্নান সেরে খেতে বসার পরে হঠাৎ ফোন আসে। এখনই আসছি বলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায়। ছেলে বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে ৩-৪ জন ছেলে এসে ওর নাম ধরে ডাকাডাকি করতে থাকে। বাড়িতে নেই বলায় চলে যায়। অনেক রাতে পুলিশের কাছে জানতে পারি ছেলে খুন হয়েছে।” সম্পর্কে দেবকুমারের মামী সরস্বতদেবী পুলিশকে জানান, “দিন কয়েক আগে একটি জমিতে পাঁচিল দেওয়া নিয়ে এক প্রতিবেশী ওকে খুন করার হুমকি দেয়।’’ বাদুড়িয়া যুব কংগ্রেসের সম্পাদক উত্তম মণ্ডল বলেন, “এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দু,্কৃতীদের দৌরাত্ম্য চলছে। দেবকুমার তার বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষকে নিয়ে প্রতিবাদে নেমেছিলেন। এতে কিছু মানুষের স্বার্থহানি হচ্ছিল। আমাদের ধারণা তারাই এই খুনের ঘটনায় জড়িত।’’
|
ছবি: নির্মল বসু। |
|
|
|
|
|