দুষ্কৃতী-দাপটে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা
পেশাদার দুষ্কৃতীরাই দল পাকাচ্ছে। সেই দলে থাকছে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দুষ্কৃতীরা। সেই দলই ডাকাতি করতে যাচ্ছে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে।
এই তিনটি আশঙ্কাই সত্যি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা থেকে পুলিশ প্রশাসন। তৈরি হয়েছে উদ্বেগও। নদিয়া জেলা বাস মালিক সংগঠনের সহ সম্পাদক অসীম দত্ত বলেন, “একটার পর একটা ডাকাতির ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ এই জেলায় বাসে ডাকাতি হয়েছে অনেকবার। এখন স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পেশাদার দুষ্কৃতীরা যোগ দিচ্ছে বলে আরও বেশি চিন্তায় পড়েছি। কারণ, সেক্ষেত্রে বড় একটা দুষ্কৃতী দল এক সঙ্গে জুটলে তারা যে কোনও নৃশংসা ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে।” তিনি বলেন, “স্থানীয় দুষ্কৃতীরা জানে, ধরা পড়ে যাওয়ার বা চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু অন্য জেলা থেকে কেউ এলে, তার সেই আশঙ্কা অনেক কম হবে। তবে এখন যে ক’টি ডাকাতি হয়েছে, তাতে কোথাও অহেতুক প্রাণহানি বা রক্তপাত হয়নি। পেশাদার দুষ্কৃতীরা কাজ সেরেই পালাচ্ছে।”
অখিল ভারত স্বর্ণকার সমিতির নদিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক অক্ষয় ভট্টাচার্য বলেন, “সব থেকে যেটা আশঙ্কার বিষয়, অনেক সাধারণ মানুষও দুষ্কৃতীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। এমন কেউ কেউ রয়েছেন, যারা অন্য পেশার মানুষ বলে পরিচিত, কিন্তু নিয়মিত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। তারাই খুঁটিনাটি খবর দিচ্ছে দুষ্কৃতীদের।” শান্তিপুর তাঁতবস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারক দাসেরও একই বক্তব্য। তিনি বলেন, “ডাকাতেরা আগে থেকেই কী করে সব তথ্য পেয়ে যাচ্ছে? ফুলিয়ায় তারা ট্রেনের সময় পর্যন্ত হিসেব করে ডাকাতি করেছে। অতএব বুঝতে হবে, তাদের কাছে সব খুঁটিনাটি খবর থাকছে। সেটা তারা পাচ্ছে এলাকার কারও কারও কাছ থেকেই।” তাঁর কথায়, “আমরা বিশ্বাস করে দোকানে বা ব্যাঙ্কে ঢুকতে দিচ্ছি, এমন কেউ কেউ দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ভিতরের খবর দিয়ে দিচ্ছে।” অক্ষয়বাবু বলেন, “এর ফলে কখন কার দোকানে কতটা সোনা রয়েছে, সে খবরও বাইরে চলে যেতে পারে। কোন দোকানে সোনা কী ভাবে রাখা হয়, সে খবরও দুষ্কৃতীরা পেয়ে যেতে পারে। তাই আমরা অনেক সতর্ক হয়েছি। কিন্তু এই ব্যাপারে প্রশাসনের আরও তৎপর হওয়া উচিত। তবে প্রশাসন এই ব্যাপারে আশ্বাসও দিয়েছে।”
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় যারা ধরা পড়েছে, তাদের কাছ থেকেই পুলিশ জেনে যেতে পারে, দুষ্কৃতীদের এই জাল কতটা গভীর পর্যন্ত ছড়ানো। তারকবাবু বলেন, “উত্তর ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এক গ্রামের এক দুষ্কৃতী ডাকাতি করে যাচ্ছে নদিয়া বা মুর্শিদাবাদে এসে। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া তা কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই বোঝাই যাচ্ছে, বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতীদের এই জাল ছড়িয়ে পড়েছে। এটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর একটা বিপদের কথা।” অসীমবাবু বলেন, “আগে নদিয়া মুর্শিদাবাদে অনেক ক্ষেত্রে সীমান্তের ওপার থেকে দুষ্কৃতীরা এসে ডাকাতি করে পালাত। এখন এই রাজ্যেরই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুষ্কৃতীরা আসছে।” তাঁর কথায়, “এখনকার ডাকাতির সময় দেখা যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা খুবই ঠান্ডা মাথায় কাজ সারছে। তাই এর পিছনে কোনও পাকা মাথা রয়েছে কি না, তার খোঁজ করুক পুলিশ।” পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এখন আধুনিক প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগের অনেক সুবিধা হয়ে গিয়েছে। অপরাধীরাও সেই সুযোগটা নিচ্ছে। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “দুষ্কৃতীদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগটা হয় প্রধানত জেলে। সেখানে নানা জায়গা থেকে নানা ধরনের অপরাধীরা যায়। তারা সেই যোগাযোগটা বাইরে এসেও বজায় রাখে।” কোনও বড় দাঁও মারার সুযোগ পেলে সেই এলাকার দুষ্কৃতীরা তারপরে তার পরিচিত বাইরের দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অনেক সময় নিজেরা প্রচ্ছন্ন থেকে বাইরের দুষ্কৃতীকে দিয়েই কাজটা করায়। পুলিশ সুপার বলেন, “এই দুষ্কৃতীরা এখন কেউই একই জায়গায় পরপর অপরাধমূলক কাজ করছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.