সেই ট্র্যাডিশন... |
কোথাও আকর্ষণ প্রতিমার উচ্চতা, কোথাও ভোগের বৈচিত্র।
রয়েছে প্রতিযোগিতাও। ঘুরে দেখলেন আর্যভট্ট খান |
দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই চলে এসেছে কালীপুজো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্গাপুজোর মতো দীর্ঘ প্রস্তুতি নেওয়া হয় না। রাতারাতি মণ্ডপ তৈরি হয়। কোথাও আবার দুর্গাপুজোর মণ্ডপের ভিতরেই কালীপুজোর আয়োজন করা হয়। তবে ব্যতিক্রমও আছে।
আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের কাছে নীলমণি মিত্র রো-এর ‘সরকারবাগান অভিযান সঙ্ঘ’-এর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে শিবলিঙ্গের আদলে। ভিতরে জলাধারের উপরে শায়িত মহাদেব। প্রতিমা নটরাজের আদলে। মণ্ডপের বাইরে পোস্টারে পৌরাণিক যুগের বর্ণনা। থাকছে এক হাজার প্রদীপও। গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ-এর ‘অনুকূল স্মৃতি সঙ্ঘ’-এর পুজো এ বার ৭১ বছরে পা দিল। অন্যান্য বারের মতো এ বারও আলোকসজ্জার দিকে নজর দেওয়া হবে বলে জানান উদ্যোক্তারা। তবে তাঁরা জানান, তাঁদের পুজোয় প্রধান আকর্ষণ অন্নকূট উৎসব। |
|
৬০ কিলো দুধের পায়েস ও ৬০ কিলো চাল দিয়ে পোলাও রান্না করা হয়। এই ভোগ তৈরিতে গঙ্গাজল ফুটিয়ে ব্যবহার করা হয়। অনেকেই ভোগ খেতে ভিড় জমান। একটু দূরে ‘বৌবাজার যুবক সঙ্ঘ’-এর পুজো এ বার ৬৮ বছরে পা দিচ্ছে। এখানেও ভোগের নানা ব্যবস্থা থাকে।
আমহার্স্ট স্ট্রিটের ‘রয়্যাল ক্লাব’-এর কালীপুজোয় সাবেক মণ্ডপ। তবে মণ্ডপসজ্জায় অভিনবত্বের ছোঁয়া থাকবে বলে জানান উদ্যোক্তারা। আলোর কোলাজে নানা সাম্প্রতিক বিষয় ফুটিয়ে তোলা হবে। একই ভাবে নবীনচাঁদ বড়াল লেনের ‘পল্লিকল্যাণ সমিতি’র পুজোয় থাকছে আলোকসজ্জার নানা চমক। গোয়েন্কা কলেজের পাশে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ‘সাগ্নিক সঙ্ঘ’র পুজো এ বার ৫৪ বছরে পা দিল। এ পুজো সাবেক।
এই অঞ্চলের অন্যতম বিখ্যাত দু’টি পুজো হল ‘আমহার্স্ট স্ট্রিট সাধারণ শ্রীশ্রী কালীপুজো কমিটি’ এবং ‘নব যুবক সঙ্ঘ’-এর পুজো। প্রথম পুজোটি সোমেন মিত্রের পুজো বলে খ্যাত। এক সময়ে মণ্ডপ থেকে বিসর্জনের আলোকসজ্জা সব বিষয়ে এই দু’টি পুজোর মধ্যে চলত তীব্র প্রতিযোগিতা। রক্ষা করা হত চূড়াম্ত গোপনীয়তাও। সেই রেষারেষি এখন অনেকটাই স্তিমিত। তবে এখনও অনেকে এই পুজো দেখতে আসেন। ‘আমহার্স্ট স্ট্রিট সাধারণ শ্রীশ্রী কালীপুজো কমিটি’র পক্ষে জানান হয়, এ বার মণ্ডপকে কেন্দ্র করে তৈরি মঞ্চগুলিতে থাকছে স্বামী বিবেকানন্দের নানা ছবি।
|
|
আগামী বছর স্বামী বিবেকানন্দের জন্মের সার্ধশতবর্ষ। রীতি মেনে মণ্ডপ-সংলগ্ন মাঠে হচ্ছে যাত্রার আয়োজনও।
অন্য দিকে, ‘নব যুবক সঙ্ঘ’-এর পুজোয় কোনও থিম না থাকলেও প্রতিমা দেখার জন্যই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ভিড় জমান বলে জানালেন উদ্যোক্তারা।
বৌবাজার থেকে শ্রদ্ধানন্দ পার্ক কালীপুজো উপলক্ষে আমহার্স্ট স্ট্রিটের এই অংশটুকু প্রতি বছর আলোয় ভেসে যায়। ‘একতা সঙ্ঘ’, ‘যুবশ্রী’ ও ‘বালক সঙ্ঘ’-এর পুজোর মূল আকর্ষণ আলোকসজ্জা। পটুয়াটোলা লেনের ‘নব রবীন সঙ্ঘ’-এর পুজোর আকর্ষণ প্রতিমার উচ্চতা। এই অঞ্চলের ‘যাত্রিক সঙ্ঘ’-এর পুজো এ বার ৭৬ বছরে পা দিল। শিয়ালদহ বৈঠকখানার ‘পল্লি শ্যামাপুজো কমিটি’র এ বার ৬৮ বছর। দু’টি পুজোরই প্রতিমা সাবেক।
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের কলুটোলা থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড পর্যন্ত অংশের পুজোগুলিও নজর কাড়ে। রাস্তার দু’ধারের বাড়িগুলি আলোর মালায় সেজে ওঠে। এই অংশে রয়েছে মহম্মদ আলি পার্কের ‘৪৭ পল্লি সর্বজনীন’-এর পুজো। এক উদ্যোক্তা জানান, দুর্গাপুজোর পরে পরিকল্পনা শুরু হয়। এই পুজোর বিশেষ আকর্ষণ হল ভোগ। গোবিন্দভোগ চাল ও সোনামুগ ডালের তৈরি খিচুড়ি খেতে কয়েক হাজার মানুষ আসেন।
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|