ব্যাগ গুছিয়ে... দুয়ার খুলেই গঙ্গা
ট্রাম-বাস-মেট্রোর রোজকার হইচই থেকে খুব দূরে নয়। তবু এখানে এক নিশ্চিন্ত নিস্তব্ধতা। আওয়াজ বলতে শুধু কলকল শব্দে অবিরাম বয়ে যাওয়া জলরাশি।
ইট-কাঠ-পাথরের কলকাতার কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী থেকে কতই বা দূর? তবু এখানকার টাটকা বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেওয়া দুটো দিন আপনাকে আগামী অনেকগুলো দিনের অক্সিজেন দিব্যি জুটিয়ে দিতে পারে।
ঘণ্টাতিনেকের পথ পেরোলেই সামনে দিগন্তবিস্তৃত গঙ্গা। ইতস্তত পাল তোলা নৌকা, দূরে নোঙর করা জাহাজের সারি। রায়চকে আপনি স্বাগত। সপ্তাহভর ব্যস্ততার শেষে কলকাতা থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরের এই ছোট্ট জনপদের নির্জনতাটুকু মন্দ লাগার কথাও তো নয়।
নদীর পাড়ে বসেই বিকেলটুকু কাটিয়ে দিতে চাইলে গঙ্গা আপনাকে হতাশ করবে না। পাড়ে বসেই সূর্য ডোবার পালাও না হয় আসুক। তার পরে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। আপনার শনি-রবিতে যদি বাড়তি পাওনা হয় পূর্ণিমা, অনাবিল জ্যোৎস্নায় নদীর রূপ খুলবে আরও। সে স্নিগ্ধতা মেখে নিন চিন্তায় ঠাসা কপালের ভাঁজে, ক্লান্ত মনের পরতে পরতে। যদি দলবেঁধে যান, অনেক রাত অবধি না হয় আড্ডা জমল নদীর তীরেই। ক্ষতি কী!
আরও আছে। গ্রামের নিখাদ প্রকৃতি আজকাল বড় টানে শহুরে বাঙালিকে। রায়চক বা তার আশপাশে সেই শান্তির নীড়ও থাক না দু’দিনের ছুটির রুটিনে। এখান থেকেই ঘুরে আসা যায় ডায়মন্ড হারবার, হলদিয়া। নৌকাবিহারের অ্যাডভেঞ্চার ছাড়তে না চাইলে নৌকায় চেপেই না হয় ঘুরে আসুন আশপাশের কুকরাহাটি, গাদিয়াড়া। গঙ্গার পাড়ে বসে ‘সানবাথ’-এর সুযোগ তো রইলই!
১৭৮৩-তে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রায়চকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার পরে ব্রিটিশরাই এখানে তৈরি করেছিল বিশাল এক দুর্গ। স্বাধীনতার পর ক্রমশ জরাজীর্ণ হতে থাকা পরিত্যক্ত সেই দুর্গই ৯০-এর দশকে বেসরকারি উদ্যোগে হয়ে উঠেছে বিলাসবহুল এক রিসর্ট। এখন রায়চকে পর্যটকদের থাকার অন্যতম ঠিকানা হয়ে উঠেছে এই ‘ফোর্ট রায়চক’। সম্প্রতি তার ভিতরে নতুন করে তৈরি হয়েছে একটি স্পা এবং রেস্তোরাঁ।
দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্লান্তি জুড়িয়ে নিতে পারেন বিলাসবহুল স্পা-এর দেশি-বিদেশি মাসাজে। আছে টেনিস ও গল্ফ কোর্ট, আছে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার মজা। খাওয়া-দাওয়া, জমাটি আড্ডার পাশাপাশি রবিবারের সকাল জমে যেতেই পারে খেলাধুলোয়।
নিরালায় দু’জনের উইকএন্ড-যাপনই হোক বা দল বেঁধে ছুটি কাটানো, মনের মতো খাওয়াদাওয়া না হলে সব মাটি। দুটো দিন বাঙালি পদের বাইরে বেরোতে চাইলে আছে চিন, জাপান, তাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়ার হরেক সুখাদ্যের সম্ভার।
দু’দিনের প্ল্যানটা এ বার ছকে ফেললেই হয়!

কী ভাবে যাবেন
ধর্মতলা থেকে বাস রয়েছে। তবে গাড়ি নিয়ে
গেলে যাত্রার ধকল খানিকটা কম হতে পারে।
কোথায় থাকবেন
‘ফোর্ট রায়চক’ ছাড়াও আছে বিলাসবহুল ‘গঙ্গাকুটির’।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.