|
|
|
|
|
|
ফের প্রহর গোনা |
পিরামিড থেকে বিড়লা তারামণ্ডল। কী নেই আলোর উৎসবের আঙিনায়?
সন্ধান করলেন দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ |
রোদ্দুরের রং অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। পেঁজা তুলোর মতো শরতের মেঘ আর নেই। দুর্গাপুজোর রেশ এখনও কাটেনি, এর মধ্যেই কিন্তু হাওড়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে শক্তি আরাধনার তোড়জোড়।
কালীপুজোর রাতে নিজের ভূতের সঙ্গে মোলাকাত হলে কেমন হয়? কালীপ্রতিমা দর্শন করতে এসে নিজের ভূত দেখতে চাইলে আপনাকে আসতেই হবে ‘কাসুন্দিয়া তালতলা স্পোর্টিং’ ক্লাবে। ৫১তম বর্ষে তাদের থিম ‘নিজের ভূত’।
পাহাড়, জঙ্গলের পশু-পাখির সঙ্গে বড় হওয়া ‘মোগলি’ এ বার উঠে আসছে কদমতলার দিনু লেনে। এখানকার ‘সিটিবিএস’-এর কালীপুজোর ভাবনায় ‘মোগলি’। বিভিন্ন মডেলের মাধ্যমে ওই চরিত্রটি তুলে ধরা হবে। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে থাকবে আবহ। এ বছর কালীপুজোয় মিশরের পিরামিড দেখতে হলে যেতে হবে ‘দক্ষিণ ব্যাঁটরা ভ্রাতৃ সঙ্ঘ’-এ। থার্মোকল, রং ব্যবহার করে তাদের ৭৭তম বর্ষের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। পিরামিডের ভিতরে থাকছে মমির ও সেই সময়ের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মডেল।
বাংলার হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন হস্তশিল্প এ বার মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করছে ‘হাওড়া নেতাজি সঙ্ঘ’। কদমতলা পাওয়ার হাউসের সামনের এই পুজোর পুরো মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে দরমা দিয়ে। থাকবে বিভিন্ন পটচিত্রও। ‘ধাড়সা ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন’-এর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আদলে। জেলের ভিতরে ঢুকে দেখা যাবে কয়েদিরা কী ভাবে শক্তির আরাধনায় ব্রতী হয়েছেন। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে মাটির ও ফাইবারের তৈরি
বিভিন্ন মডেল। |
|
বিড়লা তারামণ্ডলের আদলে মণ্ডপ তৈরি করে চমক দিতে প্রস্তুত হচ্ছে রামজি হাজরা লেনের ‘শক্তি সঙ্ঘ’। উদ্যোক্তারা জানান, এই মণ্ডপের ভিতরে নক্ষত্রমণ্ডলীর মধ্যেই দেখা মিলবে প্রতিমার। ৪৯তম বর্ষে আটচালা মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে শিবপুর জাতীয় সঙ্ঘ। বেলগাছিয়া কে রোডের ‘সুকান্তনগর কিশোর সঙ্ঘ’র ৪৭তম বর্ষের থিম ‘শ্রীমার আঙিনায় শ্যামা’।
থিম বৈচিত্রে না হাঁটলেও হাওড়া জুড়ে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুজো। যেমন, প্রতি বছরের মতো এ বারও গোটা এলাকা চন্দননগরের আলোয় সাজাতে চলেছে ‘কদমতলা বিজলী বালক সঙ্ঘ’। ১৫ ফুট উচ্চতার প্রতিমা তৈরি করে এ বারও দর্শনার্থীদের চমক দিতে চলেছে ‘শিবপুর বেলতলা স্পোর্টিং ক্লাব’।
দশমহাবিদ্যার আরাধনায় ব্রতী হচ্ছে ‘শিবপুর বিজয়ী সঙ্ঘ’। এখানে পাথরের তৈরি প্রতিমা সারা বছরই পূজিত হয়। বিশেষ আকর্ষণ অন্নকূট উৎসব। কদমতলা বসন্তরায়তলার ‘শ্যামা সঙ্ঘ’র ৭৭ বছরের পুজো সাবেক। এখানে প্রতিমা স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত। ‘ইছাপুর নতুনপল্লি শ্যামা পুজো কমিটি’র প্রতিমা স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত। ৭৫তম বর্ষে বিশাল মণ্ডপ তৈরি করে একশো লোককে এক সঙ্গে বসিয়ে পুজো দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে মধ্য হাওড়ার হৃদয়কুঞ্জ ব্যানার্জি লেনের ‘নেবুতলা সেবাদল’। কদমতলা শ্যামা সঙ্ঘের পুজোর এ বার ৮০ বছর। দেশপ্রাণ শাসমল রোডের দক্ষিণ ব্যাঁটরা ‘বালক সঙ্ঘ’র পুজো সাবেক। ওই অঞ্চলেই দক্ষিণ ব্যাঁটরা ‘বড় কালী’ পুজোর প্রতিমা দেখতে মানুষের ঢল নামে। |
|
দুর্গাপুজোর মতো কালীপুজোতেও পিছিয়ে নেই বালি, বেলুড়। কালীপুজো উপলক্ষে জিটি রোডের উপরে চারটি আলোর গেট তৈরি করেছে ‘বেলুড় অগ্নিশিখা ক্লাব’। মণ্ডপ ও স্থানীয় একটি পুকুরের চার দিক সাজানো হচ্ছে চন্দননগরের আলো দিয়ে। আলো ও যন্ত্রের মাধ্যমে দেখা যাবে জ্ঞানেশ্বরী
রেল দুর্ঘটনা।
বালি ‘বালক সঙ্ঘ’র পুজোর এ বার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। নেপালের একটি মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। ভিতরে থাকবে দশমহাবিদ্যার চিত্র। থাকবে চন্দননগরের আলোকসজ্জা। এখানে চার ফুট উচ্চতার দক্ষিণাকালী মূর্তিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া সোনা ও রূপোর গয়না দিয়ে সাজানো হয়।
বালি ‘কল্যাণেশ্বর সম্মিলনী’র এ বার ৯৫তম বর্ষ। হীরক রাজার দেশের যন্তরমন্তর ঘরের আদলে তৈরি মণ্ডপের ভিতরে ঢুকেই দর্শনার্থীদের ভৌতিক পরিবেশে পড়তে হবে। বালি বাদামতলার ‘বিবেকানন্দ সঙ্ঘ’র মণ্ডপ জুড়ে
পাটের কারুকার্য।
বালি গোস্বামী পাড়ার ‘ফাইভ স্টার’-এর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে নাটমন্দিরের আদলে। বালির পশ্চিম সাঁপুইপাড়ার (চাঁদমারী) ‘পল্লি উন্নয়ন সমিতি’রও সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে মাদুর, কুলো, বেত, ঝুড়ি, কড়ি দিয়ে। এ ছাড়া রবীন্দ্রনাথ, শ্রীরামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, গোপাল ভাঁড়ের আদলে জীবন্ত মডেলও থাকছে। বালির ‘বিনয় বাদল দীনেশ স্মৃতি পল্লি’র মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে গুজরাতের অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে।
কাপড় ব্যবহার না করে শুধু বাঁশ দিয়েই কাল্পনিক মন্দির তৈরি করছে নিশ্চিন্দার ‘পঞ্চচক্র’ পুজো কমিটি। মণ্ডপসজ্জায় পোড়া মাটির কাজ। এখানে গরদের লাল পাড় সাদা শাড়ি পরা কালীমূর্তির চার হাতে কোনও অস্ত্র থাকছে না। নিশ্চিন্দা ‘অগ্রণী সঙ্ঘ’র পুজোয় নৌকায় বসে বৈঠা টানতে দেখা যাবে প্রতিমাকে। পাশে থাকবেন শিব। থাকছে চন্দননগরের আলো।
দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ বানাচ্ছে নর্থ ঘোষপাড়া ‘ইয়ং অ্যাসোসিয়েশন’। ওই এলাকারই ‘কিশোর দল’-এর (বাঁকপুকুর) পুজোর থিম ‘শক্তি ও শান্তির আরাধনা’। শুধু বাঁশ ও মাটির সরা, পুতুল দিয়ে তৈরি মণ্ডপের চারধারে থাকবে ত্রিশূল। ২৪ ফুট উচ্চতার কালীপ্রতিমার পুজো হবে বালি নিশ্চিন্দা পূর্ব পাড়ার ‘নেতাজি ব্যায়ামাগার’-এ। পুজোকে কেন্দ্র করে বসছে মেলা। প্রেসিডেন্সি কলেজের আদলে মণ্ডপ বানাচ্ছে জগদীশপুরের দেবীরপাড়া-১ নম্বর এলাকার ‘নতুন দল’। এখানে কালীর পাঁচটি রূপ দেখা যাবে।
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|