মনোরঞ্জন ২...
চারু বনাম চারু
‘চারুলতা’। ১৯৬৪।
চারু সন্তানহীনা। কিন্তু সুখের অন্য উপাদানে মোড়া। সঙ্গী বলতে উদাস কাজ-পাগল স্বামী ভূপতি। যে থেকেও নেই। প্যাশনের চোরা স্রোত সেখানে তৃপ্তিহীন। অন্য সঙ্গী নেই এমন নয়। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। বারান্দায় ঝোলা ‘মা’-ডাকা টিয়া। রুমালে নিপুণ নকশা-কাটার শৈলি। আর দূরবিন। এবং অবশ্যই অমল। ধুতি-পাঞ্জাবি।
তবু, চারুর সব থেকে বড় সঙ্গী একাকিত্ব।
‘চারুলতা ২০১১’।
চৈতি সন্তানহীনা। সুখের অন্যান্য উপাদানে মোড়া। জিন্স, লং স্কার্ট, স্কার্ফ। সঙ্গী এক উদাস কাজ-পাগল স্বামী বিক্রম। যে থেকেও নেই। অন্য সঙ্গী নেই এমন নয়॥
কাট। আউটডোর। পুরী।
সমুদ্রতটে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মতোই চৈতির বুক-জুড়ে উথাল-পাথাল। এক দিকে স্বামী বিক্রম, অন্য দিকে প্রেমিক সঞ্জয়। কাকে ছেড়ে কাকে রাখবে সে?
শীর্ষ রায়ের লেন্সের সামনে সমুদ্রের ঝোড়ো হাওয়ায় ঘিয়ে রংয়ের গাদোয়ালের আঁচল আর খোলা চুলের ঢাল সামলাচ্ছে চৈতি। মানে ঋতুুপর্ণা সেনগুপ্ত। এই সময়ের চারু। “চরিত্রটা এক সংবেদনশীল আধুনিক মহিলার। রক্ত-মাংসের। সে যেমন ভাল সংসার বা রান্না করে, তেমনই ফাটিয়ে পার্টিও করে। ফেসবুকে চ্যাট করে। ভাল গান গায়। নাচে।” তাঁর চারুলতা সম্বন্ধে এটাই ঋতুপর্ণার বিশ্লেষণ। আজকের ‘চারু’ এই মেয়ে স্বামীকে ভালবাসে। কিন্তু স্বামীর উদাসীনতা তাকে অস্থিরও করে। তবু সামাজিক বন্ধন লঙ্ঘন করা যায় কই? ঋতুপর্ণা বলছেন, “অনেক পরত আছে চরিত্রটার।”
নতুন চারু। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
সমুদ্রতটে চৈতির একটু দূরেই দাঁড়িয়ে বিক্রম। অর্জুন চক্রবর্তী। শটের জন্যে রেডি। “বিক্রম কাগজের সম্পাদক। বৌকে সময় দিতে পারে না । কিন্তু এটা জেনে-বুঝে অবহেলা না। একটু কর্কশ কিন্তু খাঁটি মনের চরিত্র তো,” বলছেন অর্জুন।
উনিশ শতকের চারু আজ বেঁচে থাকলেও কি এ রকমটাই ঘটত? চৈতির মতো?
“আলবাত,” বলছেন অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়। ‘চারুলতা ২০১১’র পরিচালক।
সেই জন্যই কি সব ছেড়েছুড়ে শেষ পর্যন্ত সত্যজিৎ রায়ের ক্লাসিককে নিয়ে টানাটানি? “একশো বছর আগে যা ছিল তার থেকে কিছুই তো বদলায়নি। আমার খালি মনে হত এই তিনটে চরিত্রকে যদি আজকের প্রেক্ষিতে ফেলে দেওয়া যায়, তা হলে তারা কী ভাবে রিঅ্যাক্ট করবে? তাই এই ছবি বানাচ্ছি। এটাকে যুগ বদলের মধ্যে দিয়ে মানুষের চরিত্রের পর্যালোচনাও বলতে পারেন,” বলছেন অগ্নিদেব। আরও বলছেন যে, “এটা ‘চারুলতা’র অন্ধ রিমেক নয়। বরং বলা ভাল ‘চারুলতা’র প্রতীক অর্থাৎ নিঃসঙ্গতাকে ব্যাখ্যা করছি।”
তাই যখন চৈতি ওরফে ‘চারুলতা ২০১১’ তার স্বামী বিক্রমের চরম উদাসীনতা থেকে মুক্তি পেতে ইন্টারনেটে নিজেকে খুঁজতে হন্যে, তখনই প্রায় তল পাওয়ার মতো হাজির সঞ্জয়। মানে ‘অমল’। ইথারের তরঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্য। তার পর ক্রমশ কাছে আসা। “মন এবং শরীর দু’টোই যেখানে উপোস করে আছে, সেখানে একটা সুন্দর কথোপকথনও অনেকটা খোরাক জোগায়। সেখান থেকেই চৈতির সঙ্গে সঞ্জয়ের সম্পর্কের সূত্রপাত,” বলছেন ঋতুপর্ণা।
আর মাস্টারবেশন? আছে তো এ ছবিতে!
“ওটা বিষাদ এবং রূপক হিসেবে এসেছে। চরম একাকিত্ব আর নৈরাশ্য থেকে নিজেকে নিজের মুক্তি দেওয়া,” ঋতুপর্ণার উত্তর। কিন্তু বাংলা ছবির এই খুল্লমখুল্লা সময়ে নিজেকে কতটা খুলে ধরলেন নায়িকা? “অভিব্যক্তি যেটুকু তা প্রকাশ পেয়েছে একমাত্র আমার চরিত্রের মুখে। অভিনয়ের মাধ্যমে,” বলছেন ঋতুপর্ণা।
ঋতুপর্ণা না হয় অভিব্যক্তি দিয়ে সারলেন কিন্তু অভিব্যক্তি বা অভিনয় দিয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবেন এ ছবির অমল মানে সঞ্জয় মানে দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়? চরিত্রটা শুনে ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন, স্পষ্টই বলছেন দিব্যেন্দু। “আমি তো অভিনেতা নই। তার ওপর সামনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়। তবে কাজটা করতে গিয়ে দেখলাম, অগ্নিদা আমার সংলাপের থেকে শরীরী ভাষা এবং প্রতিক্রিয়ার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। বলা যেতে পারে আমি অভিনয়ের থেকে ‘বিহেভ’ করেছি বেশি,” বলছেন দিব্যেন্দু। সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন সুদীপা মুখোপাধ্যায়।
কাট। বাস্তব।
চারু-অমল। ঋতুপর্ণা-দিব্যেন্দু।
‘আসল’ চারু বা অমল কী বলছেন তাঁদের ক্লাসিকের নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে?
“দেখুন, অত দিন আগের কথা তো, অত-শত মনে নেই। অন্তত ৪০০ ছবি করেছি। আমি অভিনেতা, অভিনেতার কাজ হল, অভিনয় করে যাওয়া,” বলছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সে কী! ৪০০ ছবির থেকে ‘চারুলতা’ স্পেশ্যাল, আলাদা নয়? “সে তো ‘সংসারসীমান্তে’ও স্পেশ্যাল। আর আজকাল তো হরদম রিমেক হচ্ছে।
যে যে রকম ছবি বানাতে চায় বানাবে,” নিরাসক্ত বক্তব্য ‘অমল’-এর।
আর চারু?
“দেখুন, রিমেক বা বিশ্লেষণ যাই বলুন, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এখানে সত্যজিৎবাবুর ‘চারুলতা’র কথা উঠবেই, আর সেই ‘চারুলতা’কে ছাপিয়ে যেতে হবে এই ছবিকে। না হলে, এই কাজের সঠিক মূল্যায়ন হবে না,” বলছেন মাধবী মুখোপাধ্যায়।
অর্থাৎ, চারু বনাম চারু-র পালা শুরু।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.