সম্পাদকীয় ১...
গদ্দাফির বিদায়
লিবিয়ার মঞ্চ হইতে মুয়ম্মর গদ্দাফির অপসারণ ঘটিল। দীর্ঘ ৪৩ বছরের স্বৈরশাসনের অবসানে ইহা ঘটিল দেশবাসীরই একাংশের হাতে তাঁহার ভয়াবহ হত্যার মধ্য দিয়া। ইরাকের একনায়ক সাদ্দাম হুসেন যেমন তাঁহার নিজের শহর টিকরিত-এর একটি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আত্মগোপন কালে ধরা পড়েন, রাজধানী ও ক্ষমতাকেন্দ্র হইতে উৎখাত এবং পলাতক গদ্দাফিও তেমনই তাঁহার জন্মভূমি সির্তে-র একটি নর্দমায় লুকাইয়া থাকা অবস্থায় জনতার দ্বারা বেষ্টিত হন। সাদ্দাম হুসেনের বেলায় একটা ‘বিচার’-এর আয়োজন হইয়াছিল, গদ্দাফিকে তৎক্ষণাৎ প্রহারে নিহত করা হয়। একনায়কদের এমন পরিণতি হয়তো অপ্রত্যাশিত নয়, তবে আরব দুনিয়ায় এগুলি নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী ঘটনা। বিশেষত স্বদেশবাসীর হাতে লিবিয়ার একনায়কের মৃত্যু আরব বসন্তের প্রেক্ষিতকে আরও ধারালো করিয়াছে।
অথচ মুয়ম্মর গদ্দাফি সেই বিরল একনায়কদের অন্যতম, যিনি দেশবাসীর মঙ্গলের জন্য প্রভূত কাজ করিয়াছেন। তাঁহার শাসনকালেই দরিদ্র, জনজাতীয় দ্বন্দ্বে জর্জরিত এবং ঔপনিবেশিক পুঁজির দ্বারা শোষিত লিবিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে মাথা তুলিয়া দাঁড়ায়। লিবিয়ার প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য, বিশেষত তাহার অফুরন্ত তরল সোনার ভাণ্ডার এ ব্যাপারে গদ্দাফির সহায়ক হয় ঠিকই। তবে তিনি যে সেই সম্পদ দেশবাসীর নাগালে আনিয়া দিতে সফল হন এবং রুটি ও আচ্ছাদনের, আবাসন ও কর্মসংস্থানের অভাব অনেকটাই মিটাইতে সক্ষম হন, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু তাঁহার এই জনতোষণ শেষ পর্যন্ত তাঁহার স্বৈরাচারকে নিরঙ্কুশ করিতে পারে নাই। কেননা সুলভে সব কিছু পাইতে-পাইতে জনসাধারণ সেগুলিকে তাঁহাদের প্রাপ্য অধিকার বলিয়া গণ্য করিতে থাকেন, তাহা অর্জনের জন্য পরিশ্রমের দায় বা কষ্ট স্বীকার করেন না এবং তাঁহাদের চাহিদাও উত্তরোত্তর আরও বাড়িতেই থাকে। ভারতের মতো যে-সব দেশে রাজনীতিকরা জনমনোরঞ্জনের পিচ্ছিল পথকেই ক্ষমতারোহণের এবং ক্ষমতাসীন থাকার নিশ্চিত সড়ক মনে করেন এবং তদনুযায়ী কেবল ভর্তুকি, অনুদান আর অনুগ্রহ বিলাইয়া আখের গুছাইতে চান, তাঁহাদের কাছে গদ্দাফির পরিণতি শিক্ষামূলক প্রতিভাত হওয়া উচিত। কেবল বিনি পয়সার ভোজের আয়োজনই জনসাধারণের কল্যাণের একমাত্র ব্রত হইতে পারে না। রুটির অভাব মিটিয়া গেলে সে স্বাধীনতা চায়, গণতন্ত্র চায়, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য চায়, যাহার কিছুই কোনও একনায়কের পক্ষে মঞ্জুর করা সম্ভব নয়।
মুয়ম্মর গদ্দাফির জমানা দেশবাসীর অন্ন-বস্ত্র-আবাসনের সংস্থান করিলেও গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদের রাজনৈতিক উদারতা দান করিতে পারে নাই। স্বভাবতই বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক বিভেদ কাজে লাগাইয়াই তাঁহাকে নিজের শাসন দীর্ঘায়িত করিতে হয়। বেশ কিছু জনজাতি গদ্দাফির নিজস্ব গোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বৈভবে ক্ষুব্ধ হইতে থাকে। রাষ্ট্রীয় দমননীতি সেই ক্ষোভকে বিদ্রোহের চেহারা দেয়। তথাপি লিবিয়ায় গদ্দাফি-বিরোধীদের বিদ্রোহ সফল হওয়ার আশু সম্ভাবনা থাকিত না, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমী দুনিয়ার উদ্যোগে ‘নেটো’ সমরজোট ক্রমাগত বিদ্রোহীদের অস্ত্রসজ্জিত করা এবং গদ্দাফির সামরিক ঘাঁটি ও অস্ত্রাগার ধ্বংস করার কাজ গত কয়েক মাস ধরিয়া নিয়মিত করিয়া না যাইত। ইহা নিঃসন্দেহে লিবিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বাহিরের হস্তক্ষেপ। হয়তো এ ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশে-দেশে স্বৈরাচারীদের অপসারণ এ যুগে দুঃসাধ্য। ইরাকের সাদ্দাম হুসেন, আফগানিস্তানের মোল্লা উমর, পানামার নরিয়েগা কিংবা বসনিয়ার স্লোবোদান মিলোসেভিচদের হাত হইতে ওই সব দেশের মানুষরা অব্যাহতি পাইতেন না, যদি তাঁহাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা বাহির হইতে হস্তক্ষেপ না করিত। আন্তর্জাতিক বয়কটের ফলেই উত্তর কোরিয়া, ইরান ও মায়ানমারের মতো স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের দমননীতি শিথিল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতেছে। তবু একটি প্রশ্ন উঠিতে পারে। পশ্চিমের মুক্ত দুনিয়া তাহার নিজের সমর্থিত স্বৈরাচারীদের বেলায় এত সহিষ্ণু ও উদার কেন? পাকিস্তানের কথা আপাতত থাকুক, আরব মুলুকেই এমন কয়েক ডজন স্বৈরাচারী তো এখনও মার্কিন আশীর্বাদ লইয়া করিয়া খাইতেছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.