দুর্নীতি দমনে কেন্দ্র এ বার নজর দেবে বেসরকারি ক্ষেত্রেও
কের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার কেন্দ্র এ বার বেসরকারি ক্ষেত্রে ঘুষ দেওয়ার মতো অপরাধকেও ফৌজদারি অপরাধের তালিকায় রাখার কথা ভাবনা চিন্তা করছে। আজ দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কর্তাদের সামনে এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন, তাঁর সরকার দুর্নীতি দমনে কঠোর পদক্ষেপ করার পথেই এগোচ্ছে।
গত দেড় বছরে একের পর এক দুর্নীতির ঘটনায় সরকারের কিছু মন্ত্রীর পাশাপাশি দেশের কর্পোরেট জগতের একাংশের নাম জড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ছিল সব মহলেই। বিভিন্ন ভাবে প্রভাব খাটিয়ে এরা কী ভাবে কাজ ‘উদ্ধার’ করে, তারও একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এই অবস্থায় আজ গোয়েন্দা সংস্থাগুলির এক সম্মেলনে যোগ দিতে এসে প্রধানমন্ত্রী সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, “বেসরকারি ক্ষেত্রের ঘুষ দেওয়ার ব্যাপারটাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে যাতে গণ্য করা হয়, সে জন্য আইন বদল করার কথা ভাবছি।” দুর্নীতি প্রশ্নে আর একটি অভিযোগের ক্ষেত্র হল সরকারি বরাত দেওয়ার বিষয়টি। এই ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সব মিলিয়ে বিরোধী দলগুলি বা অণ্ণা-শিবির যা-ই বলুক, তাঁর সরকার যে দুর্নীতির বিষয়টিকে কোনও ভাবেই হালকা করে দেখছে না, তা আজ আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ক’দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরার পথে বিমানে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়েছিলেন, একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগের ধাক্কায় হারানো জমি উদ্ধার করতে সক্রিয় হচ্ছে তাঁর সরকার। শুধু তা-ই নয়, অণ্ণাদের আন্দোলনের প্রশংসা করে ‘ওঁর আন্দোলনের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে’ বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, অকারণ আক্রমণাত্মক হয়ে সরকারের ভাবমূর্তিতে আর আঁচ লাগতে দিতে নারাজ তিনি। সে দিনই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘দেশের মানুষের আকাঙ্খার কথা মাথায় রেখে’ তাঁর সরকার দুর্নীতি দমনে সব রকম কঠোর পদক্ষেপ করতে চায়। আজও সেই সূত্র ধরেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ‘লোকপাল নিয়ে বিক্ষোভ দেশের সরকারি ব্যবস্থাকে পরিচ্ছন্ন করার বিষয়টিকে জাতীয় অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে তুলে এনেছে’। দুর্নীতিগ্রস্তদের দ্রুত এবং কঠোর শাস্তি দেওয়ার বিষয়টির উপরেও এ দিন গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে গোয়েন্দা-কর্তাদের বলেছেন তিনি।
দুর্নীতি-প্রশ্নে হঠাৎ এতটা আক্রমণাত্মক হলেন কেন প্রধানমন্ত্রী? আসলে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার গঠনের বছরখানেক পর থেকেই একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগের ধাক্কায় রীতিমতো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে মনমোহন সিংহের সরকার। একে হাতিয়ার করেই সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামে বিরোধীরা। তার সঙ্গে যোগ দেয় অণ্ণা-শিবির। পরিস্থিতি সামলাতে অবশেষে মাসখানেক আগে হাল ধরেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। তখনকার মতো সামাল দেওয়া গেলেও প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ বাড়াচ্ছিল তাঁর সরকারের ভাবমূর্তির ক্ষতি। প্রায় আড়াই বছর পরে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে ভাবমূর্তি উদ্ধার না করলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যে কঠিন, তা ভালই বুঝেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই এ ভাবে সুর চড়িয়েছেন তিনি। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, আগামী কয়েক মাস দুর্নীতি প্রশ্নে সরকারের কঠোর মনোভাব প্রকাশ্যে তুলে আনতে পারলে যেমন ভাবমূর্তি অনেকটা সামাল দেওয়া যাবে, তেমনই বিরোধীদেরও মুখ বন্ধ করা যাবে। এই অঙ্কেই দুর্নীতি ঠেকাতে সরকারের নীতি-সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করলেও অণ্ণা-প্রসঙ্গে অকারণ আক্রমণাত্মক হয়ে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে চাননি তিনি।
সব রকম ভাবে চেষ্টা চালিয়েও সরকারের পক্ষে দুর্নীতি পুরোপুরি ঠেকানো যে কার্যত অসম্ভব, তা এ দিন মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “দুর্নীতির সুযোগ কমানোর পথ আটকাতে যত চেষ্টাই করি না কেন, দুঃখজনক বাস্তব এটাই যে, আমরা একেবারে নিশ্ছিদ্র কোনও ব্যবস্থা করতে পারি না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.