দিঘার হোটেলে জুলুমবাজি
দু’রাত থাকলেও ভাড়া কিন্তু গুনতে হচ্ছে চার রাতের
লকাতার হাতিবাগানের বাসিন্দা অজয় সাহার পরিবার দু’দিনের জন্য দিঘাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু হোটেল বুক করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লেন। হোটেল কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিলেন, চার দিনের কমে বুকিং নেওয়া হবে না। অগত্যা অজয়বাবু চারদিনের টাকা দিয়ে দু’দিন থাকলেন। শুধু অজয়বাবু নন, সম্প্রতি দিঘাতে গিয়ে বেশির ভাগ পর্যটকই এমন সমস্যায় পড়েছেন। সমস্যা যে হচ্ছে তার কথা স্বীকার করেছেন দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ও দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের কর্তারা। রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতর ও পর্যটন দফতরের কাছে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে ও পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ।
বছর খানেক আগেও ‘মৃতপ্রায়’ সৈকত শহর দিঘায় পর্যটকদের যাওয়া কমে গিয়েছিল। নোংরা, ঘিঞ্জি, আবর্জনাময় সৈকতশহর আর দূরপাল্লার বাস ছাড়া যাতায়াতের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তার জেরে পর্যটকেরা ছুটি কাটাতে আর দিঘামুখো হচ্ছিলেন না। সে সময়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী হয়ে দিঘাকে তুলে আনলেন রেল মানচিত্রে। রাজ্যে ক্ষমতায় এলে দিঘাকে ‘গোয়া’ বানানো হবে বলে নির্বাচনী ইস্তাহারে ঘোষণা করলেন। এরই মধ্যে রেললাইন দিয়ে কলকাতার সঙ্গে দিঘার যোগসূত্র তৈরি হল। কলকাতার পর্যটনপ্রিয় মানুষের জন্য চালু হল কাণ্ডারী, তাম্রলিপ্ত--এমনকী দুরন্ত এক্সপ্রেসও। যোগাযোগ ব্যবস্থা ঢেলে সাজায় ফের পর্যটকেরাও ভিড় জমাতে শুরু করলেন দিঘায়।
দিঘার হোটেলের কাউন্টারে-কাউন্টারে এক সময় যাঁরা মাছি তাড়াচ্ছিলেন, তাঁরা পর্যটকদের জোয়ার সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের জানালেন, অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকা দিঘাকে গোয়ার মতো রূপ দিতে চান তিনি। এই ঘোষণার পরেই দিঘা সম্পর্কে উৎসাহী হলেন অনেক হোটেল ব্যবসায়ী। প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া হোটেল, লজগুলিতে বিনিয়োগ বাড়ানো হল। সাজানো হল নতুন ভাবে। কিন্তু পর্যটকনির্ভর দিঘার মানুষ যখন ফের আশায় বুক বাঁধছেন তখনই শুরু হল নতুন উৎপাত।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকী ভিন্ রাজ্য থেকে আসা পর্যটকেরা হোটেলে গিয়ে ঘর নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। পর্যটকেরা হোটেলে কত দিন থাকবেন, তা ঠিক করে দিচ্ছেন এক শ্রেণির হোটেল কতৃর্পক্ষ। কোথাও চার রাত, কোথাও তিন রাতের বুকিং না করলে ঘর দেওয়া হচ্ছে না। হোটেল মালিকদের একাংশের জুলুমবাজিতে এক-দু’দিনের জন্য দিঘায় আসা পর্যটকেরা সমস্যায় পড়ছেন। কলকাতাতেও দিঘার হোটেলগুলির বুকিং তিন-চার রাতের কমে নেওয়া হচ্ছে না। স্বাভাবিক ভাবেই অনেক পর্যটক তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হতে হচ্ছেন।
ওই সব হোটেল মালিকের ‘জুলুমবাজির’ কথা স্বীকার করেছেন দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোশিয়েশনের সচিব বিপ্রদাস চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “দিঘার সব হোটেলেই এমনটা ঘটে না। এক শ্রেণির হোটেল মালিক ও কর্মীরা এই কাজ করছেন। ফলে, দিঘার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। অবিলম্বে এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।” দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পষর্দের নির্বাহী আধিকারিক সৌমেন পাল জানিয়েছেন, নির্বাহী আধিকারিকের দায়িত্ব নিয়ে দিঘাতে আসার আগে তিনি নিজেই এই ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন। তাঁর কথায়, “এখনও সেই সমস্যা রয়ে গিয়েছে। এমন ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য পর্ষদের তরফে হোাটেল মালিকদের নিয়ে আলোচনায় বসা হবে।” সৌমেনবাবু এবং বিপ্রদাসবাবু দু’জনেই জানিয়েছেন, দিঘায় এসে কোনও পর্যটক এমন অবস্থার মুখে পড়লে উন্নয়ন পর্ষদে অথবা হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনে অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযুক্ত হোটেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন তাঁরা।
রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগগুলির প্রেক্ষিতে দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, “মেদিনীপুরের আমাদের দফতরের আধিকারিকদের বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে হোটেলগুলিকে জরিমানা করবে দফতর।” রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ বলেন, “এ ভাবে টাকা নেওয়া মানে তোলাবাজি করা।
এর ফলে দিঘার পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হবে। অনেক দিন পরে দিঘার পর্যটন শিল্পে নতুন গতি এসেছে। সেই ধারাকে বজায় আমাদের দফতর সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নেবে। কোনও হোটেল বা লজ এমন করলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.