কাজে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে এক চিকিৎসককে শো-কজ করে বেতন বন্ধ করে দিলেন হাসপাতাল সুপার। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মণ্ডলের ওই কড়া পদক্ষেপের ঘটনায় জেলার হাসপাতাল মহলে আলোড়ন পড়েছে। অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম পার্থসারথি কাঞ্জিলাল। তিনি বালুরঘাট হাসপাতালের জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল (জিডিএম) চিকিৎসক পদে তিনি কর্মরত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সপ্তাহে তিনদিন ডিউটি হলেও তা তিনি ঠিকমত করতেন না। পুজোর মাসে তাঁকে হাসপাতালেই পাওয়া যায়নি। অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে হাসপাতাল সুপার ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এর আগেও কাজে ফাঁকির অভিযোগে গত জুন, জুলাই মাসে পার্থসারথিবাবুর বেতন বন্ধ ছিল। হাসপাতাল সুপার বলেন, “ওই চিকিৎসককে বহুবার সতর্ক করা হয়। শোকজ করা হয়েছিল। ঠিকমত ডিউটি করবেন বলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় জুন-জুলাই মাসের বেতন তিনি পান। কিন্তু গত ২ মাস তিনি ঠিকমত ডিউটি করেননি।” শোকজ করে বেতন বন্ধ করে স্বাস্থ্য ভবনে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন সুপার। পাশাপাশি, তিনি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতিকেও চিঠি দিয়ে পদক্ষেপের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত কুমার মণ্ডল বলেন, “ঘটনার কথা জানি। ওই চিকিৎসককে জেলা থেকে তুলে নিতে স্বাস্থ্য ভবনে বার্তা পাঠানো হয়েছে।” অভিযুক্ত চিকিৎসক উত্তর ২৪ পরগণার দমদম ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসিন্দা। বছর তিনি আগে তাঁকে বালুরঘাট হাসপাতালের জিডিএম-র দায়িত্বে পাঠানো হয়। পার্থসারথিবাবু অবশ্য বলেন, “আমার কোনও দোষ নেই। আমাকে ঠিকমত ডিউটি দেওয়া হত না। সুপার একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।” রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নিয়েই চিকিৎসকদের দায়িত্বশীল হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। প্রয়োজনে ফাঁকিবাজ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। বালুরঘাট হাসপাতাল সুপারের এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন ডান ও বাম চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা। অভিযুক্ত পার্থসারথিবাবু বাম মনোভাবাপন্ন চিকিৎসক সংগঠনের সদস্য বলে জানা গিয়েছে। তবে ওই সংগঠনের জেলা সম্পাদক সমীরণ মণ্ডল বলেন, “পার্থসারথিবাবু আমাদের সংগঠন করতেন না। হাসপাতাল সুপারের পদক্ষেপের বিরোধিতার কোনও প্রশ্নই নেই।” একইভাবে তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত প্রোগ্রেসিভ হেলথ সার্ভিস ডক্টর অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি জ্ঞানপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই চিকিৎসককে বহুবার দায়িত্বশীল হতে বলা হয়েছিল। সুপারের সিদ্ধান্তকে আমরা সমর্থন জানাই। উনি আমাদের সংগঠন করতেন না।” হাসপাতাল সূত্রের খবর, বাম আমলে সিপিএম নেতৃত্বের স্নেহভাজন হয়ে ওঠা হাসপাতালের কয়েক চিকিৎসক ছুটি ছাড়াই বালুরঘাটের বাইরে চলে যেতেন। কিন্তু সেই সময় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও সময় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চলতি বছরের ১ জুন হাসপাতাল থেকে বাড়ি যান পার্থসারথিবাবু। ৭ জুন হাসপাতালে গিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাগদালিনা মুর্মু দেখেন, ওই চিকিৎসক ১০ জুন অবধি হাজিরা খাতায় সই করে দিয়ে গিয়েছেন। তার পরে জুলাই মাসের পরে তাঁর বেতন বন্ধ করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ ওঠে। |