|
|
|
|
মহাশক্তির আরাধনায় থিম চক্ষুদানের আর্জি |
বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য • ময়নাগুড়ি |
অন্ধজনে দেহ আলো----মহাশক্তি আরাধনায় দৃষ্টিদানের আকুতি। মণ্ডপের একদিক তাই আলোকিত। অন্যদিক অন্ধকার। আলোর উৎসব যারা পরখ করতে পারেন না তাঁদের জগতটা কেমন! খুশির দিনে আমরা কী ওঁদের কথা মনে রাখি! ওই মানুষদের জন্য কী কিছুই করণীয় নেই আমাদের! আত্মকেন্দ্রীক সমাজে বিপন্ন এমন কিছু জরুরি বিষয়কে সামনে রেখে অভিনব ভাবনায় পুজো আয়োজন করেছে ময়নাগুড়ির ‘মুনলাইট ক্লাব’। ভাবনার কেন্দ্রে যেখানে দৃষ্টিহীনদের আলো দানের আর্তির বিচ্ছুরণ সেখানে মরনোত্তর চোখ দানের আবেদন থাকবে না হয় নাকি! মণ্ডপে পৌছে তাই উৎসবের দিনেও মুহূর্তের জন্য মনের গভীরে তিরতির করে বইবে সামাজিক দায়বদ্ধতার সেই অমোঘ প্রশ্নের স্রোত। অনুভব করবেন জগতের রূপ ও সৌন্দর্য অধরা রয়ে গিয়েছে যাদের কাছে তাঁদের জন্য কর্তব্যের ঝলকানি। দীপাবলীর খুশি যে মানুষদের মনপ্রাণ ছুঁতে পারে না। আলোর উৎসবেও ভুবন ডুবে থাকে নিকষ কালো অন্ধকারে। ভাবনায় উঁকি দিয়ে যাবে ওই অসহায়দের জন্য কিছু করার বাসনা। কী করবেন ভাবছেন? মণ্ডপে চক্কর কাটলে পেয়ে যাবেন উত্তর। কাজটা কঠিন নয়। শুধু প্রয়োজন ইচ্ছে পূরণের সচেতনতা। কী সেই কাজ!
যে চোখ দিয়ে আমরা প্রকৃতির রূপ লাবণ্য উপভোগ করি। দীপাবলী উৎসবের আয়োজন দেখে খুশিতে মেতে উঠি। প্রিয়জনকে কাছে ডেকে নেই। খবরের কাগজ পড়ি। দূরদর্শনের পর্দায় নজর রেখে বিশ্বের হালচাল জানি। সেই চোখ দান করে খুব সহজে দৃষ্টিহীনের আঁধার দশা ঘোচাতে পারি। আপনার দান করা চোখ দিয়ে সেও পারে জগতকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে। শুধু তাই নয়! আপনিও মরণের পরে বেঁচে থাকবেন দৃষ্টিহীনের ফিরে পাওয়া চোখের আলোতে। মুনলাইটের পুজোয় পৌছে দেখবেন প্রায় ৪০ ফুট চওড়া মণ্ডপ আড়াআড়ি ভাবে আলো-আঁধারে বিভক্ত। ফাইবার গ্লাসের তৈরি চোখ, বেলুন, প্রজাপতি সহ রকমারি মডেল দেখে উপলব্ধি করতে অসুবিধা হবে না---মরণের পরে চোখ দানের মতো পবিত্র কাজ অন্যটি হতে পারে না। মণ্ডপের আলো ঝলমলে পরিবেশে বর্ণময় যে সমস্ত মডেল দেখবেন সবই পাবেন আঁধারেও। আলোকিত দিকটা আপনার মতো দর্শণার্থীদের জগৎ। আঁধারটা দৃষ্টিহীনদের। ওই স্পষ্ট বিভাজন রেখা ছুঁয়ে যেতেই প্রশ্নরা পাখা মেলবে---আঁধার ঘোচাতে কী করবেন ঠিক করেছেন! পুজো কমিটির সম্পাদক অনুপ পাল বলেন, “আমরা একটু সচেতন হলে খুব পারি ওই দুই জগতের বিভাজন রেখা মিলিয়ে দিতে।” কলকাতার শিল্পী স্বপন পাল অভিনব ভাবনায় প্লাই বোর্ড, চট, সিমেন্ট দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছেন। দর্শণার্থী যেন সহজে থিম অনুধাবন করতে পারেন সে জন্য জটিলতা রাখা হয়নি সজ্জায়। ‘সহজ কথা সহজে’ বলার মতো প্রতিটি বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। মণ্ডপ ঘুরে দেখার পরেও যদি কৌতুহল থাকে সেটা মেটাতে বাইরে চোখের চিকিৎসা সংক্রান্ত শিবির তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন আয়োজকরা। সেখানে গেলে আপনি জানতে পারবেন কেমন করে এবং কোথায় চোখ দান করবেন? |
|
|
|
|
|