|
|
|
|
সোনা ফলছে তোর্সাচরে |
নিলয় দাস • ফালাকাটা |
দুই দশক আগে পর্যন্ত ছিল বালির চর। শরতে কাশবনে ভরে থাকত বিঘার পর বিঘা জমি। চাষবাস দূরের কথা গ্রামবাসীরা তোর্সা নদীর ওই চরে এক সময় শুধুমাত্র গরু চরাতেন। আজ সেই মরুভূমি হয়ে যাওয়া জমিতে জেলায় ফসল ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গ্রামবাসীবা। মরশুমের শুরুতেই বাজারে ফসল পৌঁছনোয় ভাল দামে সবজি বিক্রি করে সচ্ছল ভাবে সংসার চালাচ্ছেন অসম মোড়ের কৃষকেরা। সপ্তাহের দুই দিন চরে বালির চরে জলসেচ করে জমিতে এখন কার্যত সোনা ফলাচ্ছেন ওই চাষিরা। জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে সবজি চাষে ফালাকাটা ও ধূপগুড়ি অন্যতম। গত জুলাই মাসে ফালাকাটার অসম মোড়ের কৃষকরা ফুলকপি, বাঁধাকপি-সহ নানা ধরণের শীতকালীন ফসল বাজারে নিয়ে যায়। বিক্রিও হয় ভাল দামেই। এই কথা শুনে কার্যত অবাক হয়ে গেছেন ধূপগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক দেবাশিস সর্দার। |
|
তাঁর কথায়, “গ্রিন হাউস বা পাহাড়ি জমি ছাড়া বর্ষাকালে শীতকালীন সবজি চাষ করা সম্ভব নয়। তবে ফালাকাটার কৃষেকরা কী ভাবে ৩ মাস আগে চাষ শেষ করছে তা বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। ধূপগুড়িতে এত আগে ফসল ফলার ঘটনা আমাদের জানা নেই।” ফালাকাটার ব্লক কৃষি আধিকারিক আবু বক্কর সিদ্দিকি বলেন, “ওই এলাকার কৃষকরা শীতকালীন ফসল ফলান। বাজারে আগে টাটকা ফসল পৌঁছলে দাম স্বাভাবিক ভাবে কয়েক গুন বেশি মিলবেই।”১৯৮০ সালে দাঙ্গা বিধ্বস্ত অসমের কার্বিআলং ও নওগাঁ জেলার বাঙালি ৩০০ পরিবার ফালাকাটা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। শিবিরের পাশেই ছিল চর তোর্সা ধূধূ চর। ক্যাম্পে আশ্রিত পরিবারের লোকজনেরা এলাকায় দিনমজুরি কাজ করতেন। কোনও মতে তাঁদের সংসার চলত। শিবির ছেড়ে বসবার করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের দখলে থাকা জমি জলের দরে কিনে নেন। ওই শরণার্থীরা দিনের পর দিন ব্যাপক পরিশ্রম করে কাশের বন পরিষ্কার করে বালুর চর পরিচর্যা করতে শুরু করেন। দেড় দশক আগে প্রথম বর্ষাকালে ওই জমিতে শীতকালীন ফসল ফলাতে শুরু করেন কয়েকজন। |
|
শুরুতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলো,পালং বাজারে আসতে চড়া দামে বিক্রি হতে শুরু হয়। তার পর আর তাঁদের থেমে থাকতে হয়নি। সারা বছর বালির জমিতে সবার আগে বার ফসল ফলিয়ে মাত করে দিয়েছে চর তোর্সার তীরের ওই কৃষকরা। অসমের থেকে শরণার্থী হয়ে আসা হরিপদ মজুমদার ১০ বিঘা জমির মালিক। তাঁর কথায়, “সব বালি জমি। সপ্তাহে ৩ দিন জমিতে জল সেচ না করা হলে গাছ মরে যাবে। অন্য লাকার কৃষকরা যখন বীজ বপন করেন। তখন আমরা ফসল কাটতে শুরু করি। সচ্ছল ভাবে এখন সংসার চালাচ্ছি।” ৫ বিঘা জমির মালিক রমেশ বর্মন। এবার তাঁর বালি জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। কেজি প্রতি ৭০ থেকে শেষে ২৫ টাকায় ফুলকপি বিক্রি করেছেন। তাঁর কথায়, “শীতকালীন সবজি শেষ করে ইতিমধ্যে আলু রোপণ করেছি। তার পর ঝিঙে ও গম চাষ করব। তবে জমিতে সেচ দিতে বড় খরচ। সরকারি ভাবে সেচের ব্যবস্থা করা হলে ভাল হয়।” ফালাকাটা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তরুণ রায়ের কথায়, “বহু বছর আগে ওই জমিতে মানুষ গরু চড়াত। ২০ টাকা বিঘায় জমি কিনতে চায়নি কেউ। এখন ৪০০ একর বালি জমিতে সবার আগে ফলা ফসল পাড়ি দিচ্ছে শিলিগুড়ি, কোচবিহার, বিহার সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।”
|
তোর্সার চরে চাষের ছবিগুলি তুলেছেন রাজকুমার মোদক। |
|
|
|
|
|