ঝাড়গ্রামে সভা করে মাওবাদীদের সাত দিনের চরমসীমা দিয়ে যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতে খুশি হয়েছিল কেন্দ্র। এ বার এ রাজ্যের জঙ্গলমহল এলাকায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলিতে সমস্ত ধরনের সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
জঙ্গলমহল এলাকায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে এসেছিলেন গত কালই পশ্চিম মেদিনীপুরে গিয়েছিলেন জয়রাম রমেশের ব্যক্তিগত সচিব আর ভিনিল কৃষ্ণ। পরে রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গে বৈঠক করেন ভিনিল। তাঁর দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ মমতাকে চিঠি লিখে জয়রামের আশ্বাস, জঙ্গলমহল এলাকায় কোনও প্রকল্পে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না কেন্দ্র। রাজ্য প্রকল্পগুলির ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন করলেই দ্রুত তা মঞ্জুর করবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখ্যসচিব-ভিনিল বৈঠকে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।
• প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় জঙ্গলমহল এলাকার ১১টি ব্লকে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, রাজ্য প্রস্তাব পাঠালে তাদের পক্ষে ওই প্রকল্পের ছাড়পত্র দিতে কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু এত বড় মাপের প্রকল্প রূপায়ণ করতে গেলে আরও বেশি সংখ্যায় ‘প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিট’ (পিআইইউ) গড়তে হবে রাজ্যকে।
• বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে সম্প্রতি জেলাগুলিতে পঞ্চায়েত পিছু প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট অফিসার এবং এক জন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে এ বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ করলে দ্রুত অর্থ মঞ্জুর করে দেবে কেন্দ্র।
• জাতীয় গ্রামীণ জীবনধারণ প্রকল্পে চাকরিমুখী প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ঝাড়গ্রামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক ধাপ এগিয়ে মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত, রাজ্য চাইলে যুবকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে দেশের অন্য প্রান্তের কেন্দ্রগুলিতে পাঠাতে পারবে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের সাহায্য দেবে জয়রামের মন্ত্রক। • জঙ্গলমহল এলাকায় ইন্দিরা আবাস যোজনায় অতিরিক্ত সাহায্য দেওয়া হবে। বার্ধক্য ও বিধবা ভাতা যাঁদের পাওয়ার কথা, তাঁদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে বিশদে রিপোর্ট পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রক।
• জেলা প্রশাসন পরিকল্পনা পাঠালে পরিস্রুত পানীয় জল ও ‘ওয়াটারশেড ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পেও বিশেষ সাহায্য দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্যের পাশাপাশি আগের বাম সরকারের ধাঁচে গত কাল ফের রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াকে আইএপি-র আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। জঙ্গলমহলের মোট ২৩টি ব্লককে মাওবাদী প্রভাবিত বলে চিহ্নিত করেছে রাজ্য। কিন্তু আইএপি এখন পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১টি ব্লকে চালু রয়েছে। রাজ্য দীর্ঘ দিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছিল যে জঙ্গলমহলের কেবল একটি জেলায় উন্নয়ন হলে বাকি অংশে সেই বৈষম্য থেকেই যাবে। ফলে যে উদ্দেশ্যে ওই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, তা ব্যর্থ হবে।
রাজ্যের যুক্তি নীতিগত ভাবে মানলেও মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জয়রাম বলেন, “বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া আইএপি-র আওতায় আসবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে শুধু যোজনা কমিশনই।” রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, কাল রাজধানীতে জয়রামের সঙ্গে এই নিয়ে বিশদে আলোচনার কথা রয়েছে মমতার। |