|
|
|
|
বিস্তর খোঁজ সত্ত্বেও মিলল না সেই বালা |
অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য ও প্রবাল ধর • কলকাতা |
হন্যে হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতের বালা খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। যে মহিলার হেঁচকা টানে বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে বালা খুলে গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে, খোঁজ চলছে তাঁরও।
পুলিশ জানায়, বুধবার বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে বৈঠক করে গাড়িতে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলাশাসকের কার্যালয়ের গেটের বাইরে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েকশো মানুষ। তাঁদের নিরাশ না করে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে এগোতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিশ জানায়, দু’দিক থেকে উৎসাহী দুই মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর দু’হাত ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন। সেই সময় হঠাৎই তাঁর পা জড়িয়ে প্রণাম করতে যান এক মহিলা। টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বাঁ হাতে ছিল ঘড়ি, ডান হাতে বালা। যে দুই মহিলা তাঁর দু’হাত ধরেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে দেখে তাঁরা আরও শক্ত করে মমতার হাত ধরে রাখেন। পরে দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর দু’হাত থেকে ঘড়ি ও বালা নেই। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মী ঘড়িটি খুঁজে পেলেও, বালার খোঁজ এখনও মেলেনি। বালাটি মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন তাঁর মা গায়ত্রীদেবী।
বালার খোঁজ শুরু হয়ে যায় বুধবার বিকেল থেকেই। জেলাশাসকের কার্যালয় থেকে চাঁপাডালির মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’দিকে বালা খুঁজতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। বৃহস্পতিবারও সেই তল্লাশি অব্যাহত ছিল। যে চশমাপরা মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর ডান হাত ধরে রেখেছিলেন, তাঁর নাম-ঠিকানা অবশ্য জানা যায়নি। পুলিশ ওই মহিলার খোঁজ চালাচ্ছে। ওই মহিলার টানেই মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে বালা খুলে গিয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ।
অন্য দিকে, যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণাম করতে গিয়েছিলেন, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে প্রীতি দলুই (পাল) নামে সেই মহিলা বুধবার রাতেই আত্মগোপন করেন। পুলিশ জেনেছে, তাঁর বাড়ি নিউ ব্যারাকপুরের তালবান্দায়।
তৃণমূলের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার অভিযোগ করেছেন, ওই মহিলা সিপিএমের কর্মী। তাঁর পরিবারও সিপিএমের। প্রীতিদেবীর বাপের বাড়ি বারাসতের সরোজ পার্ক এলাকার মানুষও জানিয়েছেন, ওই মহিলার ভাইয়েরা সিপিএমের সমর্থক। এই ঘটনার তদন্তের দাবি করেছেন তিনি।
পুলিশ খোঁজ না পেলেও বছর চল্লিশের প্রীতি এ দিন তাঁর এক প্রতিবেশীর বাড়িতে বসে জানান, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁর দু’টি সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যার কথা একটি কাগজে লিখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিতে গিয়েছিলেন।
কী তাঁর সমস্যা? এ দিন ওই মহিলা জানান, ২০০৫ সালে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের দু’টি কন্যাসন্তানও হয়। তাঁর স্বামী কারখানা চালানোর জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণের টাকা সময়ে শোধ করার জন্য ব্যাঙ্ক তাঁকে নোটিশ দেয়। ভয় পেয়ে তাঁর স্বামী আত্মহত্যা করেন। পরে প্রীতি ওই কারখানা বিক্রি করে ঋণের কিছুটা শোধ করেন। বাকি টাকার জন্য ব্যাঙ্ক এখনও তাঁর কাছে তাগাদা করছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রীতি। বছর তিনেক আগে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন ওই মহিলা। ফের তাঁর এক কন্যা সন্তান হয়। সম্প্রতি তিনি জানতে পেরেছেন, দ্বিতীয়বার তিনি যাঁকে বিয়ে করেছেন, সেই ব্যক্তি এর আগে অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন। প্রীতির দাবি, নিজের এই সব দুঃখের কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতেই তিনি বুধবার বারাসতে জেলাশাসকের কার্যালয়ের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। মমতাকে প্রণাম করতে তিনি হাঁটু গেড়ে বসতেই পিছন থেকে সজোরে তাঁকে কেউ ধাক্কা মারে। তাতে তিনি নিজেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দুই হাঁটু জড়িয়ে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রীরও পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।
মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে এসেছিলেন শীলা রায় নামে এক বিধবা মহিলাও। জেলাশাসকের গেটের সামনে গাড়ি থেকে মমতা নামতেই তিনি তাঁর বাঁ হাত ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন। তিনি বলেন, “দিদি (মমতা) পড়ে যাচ্ছেন দেখে আমি ওঁর হাত ধরে টেনে রাখতে যাই। কিন্তু এত ধস্তাধস্তি হচ্ছিল যে আমিও প্রায় পড়ে যাচ্ছিলাম।” |
|
|
|
|
|