|
|
|
|
শক্তি আরাধনার পীঠস্থানে থিমের কালীপুজোর রমরমা |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
কল্পনা থেকে বাস্তব, অতীত থেকে আধুনিকস্বর্গ থেকে গ্রামবাংলা, বেতাল পঞ্চবিংশতি থেকে বিশ্ব উষ্ণায়ন। শক্তি আরাধনার পীঠস্থান তমলুকের কালীপুজোয় এ বার থিমের রমরমা। ছোট-বড় মিলিয়ে একশোরও বেশি পুজো হয় পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদরে। দুর্গাপুজোর চেয়েও কালীপুজোয় মাতামাতিটা বেশি। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত শহর। বিভিন্ন পুজোকমিটিগুলোর মধ্যে চাপা রেষারেষিও আছে প্রতি বছরের মতোই।
তমলুক শহরের বাদামতলা উত্তরায়ন ক্লাবের পুজোর মণ্ডপসজ্জায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে স্বর্গের কাল্পনিক রূপ। নারকেল দড়ি, সুপুরি, আমড়া, শোলা ও সিন্থেটিক তুলোর সাহায্যে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে মণ্ডপ। মেঘের দেশে শ্বেত-শুভ্র স্বর্গে সাদা রঙের মাটির প্রতিমার পরীর রূপ। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত হস্তশিল্পী গৌরাঙ্গ কুইলা মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, “শক্তিদায়িনী শ্যামা এখানে শান্তির দেবী, স্বর্গের পরী। আলো-ধ্বনির সাহায্যে মণ্ডপের ভিতর স্বর্গীয় আবহ তৈরি করা হবে।” উত্তরায়নের সম্পাদক প্রহ্লাদ ভট্টাচার্য জানান, মণ্ডপ ও প্রতিমায় অভিনবত্ব ছাড়াও মনিপুরের নৃত্যদল ও সম্বলপুরের বাজনাদল আকর্ষণ বাড়াবে। |
|
স্টেডিয়াম গেটে জোরকদমে চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
শহরের স্টেডিয়াম গেটে কিশোর সঙ্ঘের পুজোর থিম কেরালা। কেরালার নারকেল বাগান ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ৪১তম বর্ষের এই পুজোর মণ্ডপ। হাউসবোটের আদলে মূল মণ্ডপ শান্ত জলাশয়ের উপরে। মাদুর, চুমকি ও থার্মোকলের শিল্পকর্ম দিয়ে কথাকলি নৃত্যরত মডেল থাকবে মণ্ডপের সামনে ১০টি মন্দিরে। মন্দিরের পাশে থাকছে রাজকীয় হাতির মডেল। এমনকী কুমোরটুলির প্রতিমার অঙ্গেও কথাকলি শিল্পীর সাজ। মণ্ডপশিল্পী তপন মাজি বলেন, “প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটুকরো কেরালা ফুটিয়ে তোলা হবে মণ্ডপসজ্জায়।”
হাসপাতাল মোড়ে ফাইভস্টার ক্লাবের পুজোর থিম বিশ্ব উষ্ণায়ন। উষ্ণায়নের জেরে পৃথিবীর কি দশা হতে পারে এবং এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার উপায় তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপসজ্জায়। মণ্ডপের সামনে থাকছে জ্বলন্ত পৃথিবী। পিছনে বটবৃক্ষের কাণ্ডে মোমের প্রতিমা। ২৬ হাজার চিনা মাটির কাপ, বাঁশ-বাখারি ও প্লাস্টার অফ প্যারিসের সাহায্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে থিমের মণ্ডপ। ক্লাবের সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া বলেন, ‘‘বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আমাদের এই প্রয়াস। মোমের তৈরি ১০ ফুট উঁচু প্রতিমা ও জীবন্ত বারোয়ারি অন্যতম আকর্ষণ।”
হাসপাতাল মোড়েরই বিদ্রোহী সঙ্ঘের পুজোর থিম গ্রামবাংলা। রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধ-শতবর্ষে তায় শান্তিনিকেতনের ছোঁওয়া। ২৫তম বর্ষ এ বার। আটচালার কুঁড়ে বাড়ি, বাঁশের বেড়া দেওয়া উঠোন, গাছতলায় পঠন-পাঠন সেজে উঠছে মণ্ডপ প্রাঙ্গণ। মূল মণ্ডপ দোতলা খড়ের বাড়ির আদলে। মাটির দক্ষিণা কালী। ক্লাব সভাপতি বিমল ভৌমিক জানান, রবীন্দ্র-স্মরণেই পল্লির দৃশ্যে শান্তিনিকেতনের ছোঁওয়া। কল্পনা, প্রকৃতি, বাস্তব সমস্যার পাশাপাশি এ বার পুজোর থিমে উঠে এসেছে বেতাল পঞ্চবিংশতির কাহিনীও। শহরের মালিমঙ্গল পল্লি ক্রিকেট ক্লাবের পুজোয় মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে বিক্রমাদিত্য ও বেতালের কাহিনী। বিক্রমাদিত্যের রাজ দরবারের পাশাপাশি গা ছমছমে শ্মশানের পরিবেশ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাট, খড়, পাখির পালক, কাগজ, থার্মোকল, প্লাস্টার অফ প্যারিস ও পোড়ামাটির সাহায্যে। ক্লাবের সম্পাদক শুভাশিস অধিকারী জানান, হ্যারি পটার, ফেলুদা, টিনটিনের কাহিনী নিয়ে আজকালকার শিশুরা মেতে থাকে। বিস্মৃতপ্রায় বেতাল পঞ্চবিংশতির কাহিনী তাই নতুন করে তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমরা।” |
|
|
|
|
|