|
|
|
|
ইন্দিরা আবাস যোজনায় লক্ষ্যপূরণ হয়নি জেলায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
দরিদ্র, আশ্রয়হীন মানুষের জন্যই কেন্দ্রের গৃহ-নির্মাণ প্রকল্প ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’। ‘পিছিয়ে পড়া’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই প্রকল্পের হাল কিন্তু রীতিমতোই হতাশাজনক। তিন বছর আগে শুরু হয়ে ২০১১-১২’র চলতি অর্থবর্ষের মধ্যে যেখানে ২২ হাজার ২৩৫টি বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা ছিল, সেখানে তৈরি হয়েছে মাত্র ৯৮৪৫টি বাড়ি!
কেন এই অবস্থা? তা নিয়ে চাপানউতোরও শুরু হয়েছে সিপিএম-তৃণমূলে। বর্তমানে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। আর জেলা পরিষদে ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। ইন্দিরা আবাসের কাজ স্বাভাবিক গতিতে এগোচ্ছে না মেনে নিয়ে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অর্থের অভাবে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পুরো বিষয়টি লিখিত ভাবে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, তৃণমূলের অভিযোগ, শুধু অর্থাভাব নয়, এ ক্ষেত্রে উদ্যোগেরও অভাব রয়েছে। ইন্দিরা আবাস যোজনায় কাজের গতি-প্রকৃতি নিয়ে সম্প্রতি একটি বৈঠক হয় জেলা পরিষদে। দেখা যায়, অর্ধেক বাড়িও তৈরি হয়নি। যে সব বাড়ি তৈরি হয়েছে, তারও সবকটিতে শৌচাগার তৈরি হয়নি। অথচ এই প্রকল্পে বাড়ির সঙ্গে শৌচাগার বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রেও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ অর্থাভাবকেই দায়ী করছেন।
জেলা জুড়েই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী বহু মানুষের মাথার উপর ছাদ নেই। অন্যের জমিতে মজুর খেটে বা পাতা কুড়িয়ে সংসার চালান তাঁরা। খোলা আকাশের নীচে দিন কাটে। শীত ও বর্ষায় চরম সঙ্কটে পড়েন দরিদ্র মানুষগুলি। এই সব গরিব মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়াই লক্ষ্য ইন্দিরা আবাস যোজনায়। এক-একটি বাড়ি তৈরির জন্য বরাদ্দ হয় ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা। মোট খরচের ৭৫ শতাংশ দেয় কেন্দ্র। বাকি ২৫ শতাংশ দেয় রাজ্য। এই প্রকল্পে কাদের বাড়ি তৈরি হবে, তা খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা হয়। পরে দু’টো তালিকা তৈরি হয়। প্রথম তালিকায় থাকে তাঁদের নাম, যাঁদের জমি রয়েছে অথচ বাড়ি নেই। আর দ্বিতীয় তালিকায় বাড়ি থাকলেও পাকা নয়, এমন মানুষের নাম নথিভুক্ত হয়। হিসেব অনুযায়ী প্রথম তালিকায় নাম রয়েছে, এমন অনেকেরই বাড়ি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়নি!
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, ইন্দিরা আবাস যোজনায় যে ২২ হাজার ২৩৫টি বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা তার জন্য মোট খরচ ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি ৮৪ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ৮০ কোটি ৮৮ লক্ষ ১১ হাজার টাকা। আর রাজ্যের প্রদেয় ২৬ কোটি ৯৬ লক্ষ ৪ হাজার টাকা। চলতি বছরের ১১ অগস্ট পর্যন্ত এই প্রকল্পে কেন্দ্র বরাদ্দ করেছে মাত্রই ৬ কোটি ৪৩ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। আর রাজ্য ২ কোটি ১৪ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা। এই সামান্য বরাদ্দেরও মাত্র ৩৮ শতাংশ অর্থ খরচ করা গিয়েছে। এখনও পড়ে রয়েছে ১৯ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। যে ৯৮৪৫টি বাড়ি তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে আবার শৌচাগার রয়েছে ৬২১৭টি বাড়িতে। কেন এই পরিস্থিতি? জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শিশির মহাপাত্র বলেন, “প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবেই কাজ ব্যাহত হচ্ছে।” একই বক্তব্য জেলা পরিষদ সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের। তাঁর কথায়, “২০১০-১১ সালের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ও ২০১১-১২ সালের প্রথম কিস্তির অর্থ পাওয়া যায়নি। পুরো বিষয়টি রাজ্য সরকারের কাছে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।” জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা অরুণ মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ, “শুধু অর্থের অভাব নয়, উদ্যোগেরও অভাব রয়েছে।” |
|
|
|
|
|