সুব্রত ভট্টাচার্যের মোহনবাগানে এক দিনের মধ্যেই আবার প্রত্যাবর্তন স্টিভ ডার্বির। চাঞ্চল্যকর ভাবে। ভিয়েতনাম থেকে বিস্ফোরক ই মেলের মাধ্যমে।
বুধবারের মতো বৃহস্পতিবার সকালেও বাগান ছিল সুব্রতময়। চুনী গোস্বামী থেকে চিমা ওকোরির উপস্থিতিও মধ্যেও সবার নজর ছিল সুব্রতর দিকে।
প্র্যাক্টিস শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সমস্ত নজর কেড়ে নেন সুনীল ছেত্রী। সুব্রতর প্রিয়পাত্র সুনীল অপ্রত্যাশিত ভাবে ডার্বির পাশে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখেন। আরও অবাক করে দিয়ে অধিনায়ক ব্যারেটোর উল্টো কথা বলেন সুনীল। ডার্বি দর্শন এ দেশে অচল, বলেছিলেন ব্যারেটো। সুনীল বলে দেন, “ডার্বির এ ভাবে বিদায় দুর্ভাগ্যজনক।” টেকনিক্যাল কমিটি নিয়ে তাঁর মন্তব্য আরও তীব্র, “কোচের উপর টেকনিক্যাল কমিটি, আমার জীবনে কখনও এমন ঘটেনি।”
টিডি থেকে টেকনিক্যাল কমিটি, ফিজিও থেকে ফিটনেস-- কোনও প্রসঙ্গই বাদ রাখেননি সুনীল। এবং প্রায় সব বক্তব্যেই ব্যারেটোর সঙ্গে তাঁর মতের মিল নেই। সঙ্গে আরও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, “কোচ বদল হওয়াটা যে কোনও টিমের পক্ষেই খারাপ। তা সে টুর্নামেন্টের ছ’দিন আগে হোক বা ছ’মাস পরে। কিন্তু এই ব্যাপারটা তো আমাদের হাতে নেই। সুতরাং ফুটবলারদের খেলে যেতেই হয়।” হাউটনের আমলে জাতীয় দলের ম্যানেজার প্রদীপ চৌধুরী দল ছেড়ে আসায় ভাইচুং-সুনীলরা পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন প্রদীপকে। সেই লোকই মোহনবাগানের টেকনিক্যাল কমিটিতে। সুনীল এ দিন আবার বলে দিলেন, “আমি ওঁর বিরুদ্ধে তখন কিছু বলিনি।”
বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। বরং শুরু। সন্ধের দিকে ভারতের সব সংবাদমাধ্যমে ই মেল পাঠিয়ে মোহনবাগানের বিতর্ক এক অন্য মাত্রায় নিয়ে চলে গেলেন ‘সদ্য পদত্যাগী’ কোচ স্টিভ ডার্বি। তাঁর বিশাল বিবৃতির ছত্রে ছত্রে মোহনবাগান কর্তাদের তীব্র বিদ্রুপ করে তিনি বলেছেন, “আমি প্রেস কনফারেন্সে এটা বলতে পারতাম। কিন্তু তাতে স্বাভাবিক বিশৃঙ্খলা হত। আর আমি যা বলিনি, তা লেখা হতে পারত।” তাৎপর্যপূর্ণ হল, ভারতীয় ফুটবল নিয়ে ব্যঙ্গে ভরা ই মেলে ডার্বি শুরুতেই ভাইচুংদের ফুটবল সংস্থার প্রশংসা করেছেন। বলেন, “দুটো কারণে এ সব লিখছি। আমি খেলাটাকে ভালবাসি। বিশ্বাস করি, যা মনে করি, তা বলা উচিত। আর ভারতে অনেক ফুটবলার সঙ্গত কারণে কথা বলতে ভয় পায়। এই জন্যই এফ পি এ হয়ে ভাল হয়েছে।”
রাত থেকে এ নিয়েই মোহনবাগানে মারাত্মক হইচই। সকালে এসে ফুটবলারদের ভাষণ দিয়েছিলেন চুনী গোস্বামী ও প্রদীপ চৌধুরীরা। ওডাফা-বার্নার্ডের সঙ্গে আড্ডা মারতে আসেন চিমা। সব আড়ালে চলে যায় ডার্বির ই মেল বোমায়। মোহন কর্তারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। চার কর্তা তাঁকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিলেও প্রেসিডেন্ট টুটু বসু ও সহসচিব সৃঞ্জয় বসুর বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি ডার্বি। যে দুই কর্তাকে ডার্বি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের একজন মোহন সচিব অঞ্জন মিত্র বলেন, “আমরা ওঁকে দুই বছর রেখে দিলে উনি বলতেন, আমরা ভগবান।” অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত মন্তব্য করেন, “ওঁর কথার উত্তর দিতে রুচিও নেই, সময়ও নেই।” টিডি সুব্রত ভট্টাচার্য নিজে এই বিতর্কে ঢুকতে নারাজ। বলেন, “ওঁকে আমি কোচিং করাতে দেখিনি। কিছু বলব না।”
মোহনবাগান সূত্রের খবর, ডার্বি আর্থিক সমঝোতা সূত্র মেনে পদত্যাগে রাজি হয়ে যাওয়ার পর ক্লাব কর্তারা তাঁকে ইঙ্গিতে হুশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন, “এমন কিছু বলবেন না যাতে আপনি আর্থিক সমস্যায় পড়েন।” সেই কথা মেনে অর্থ নিয়ে ‘টেকনিক্যাল কমিটি মেনে নিতে পারিনি বলে পদত্যাগ করেছি’-র মতো এক লাইনের এস এম এস পাঠিয়ে ভিয়েতনামে চলে যান। তার পর ই-মেলের মাধ্যমে এল প্রত্যাঘাত।
ডার্বির মুখে আর লাগাম লাগানোর প্রশ্ন নেই। মাঝে মাঝেই এমন মেল আসতে পারে তাঁর। কর্তারা বেশি চিন্তায় সুনীল ছেত্রীর মন্তব্য নিয়ে। সুব্রত কোচ হয়ে আসার পর সবাই যখন বলতে শুরু করেছেন ক্লাবের পরিবেশটাই বদলে গেছে, সুনীল তখন বলেন, “ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে। কিছুই বদলায়নি। তবে নতুন কোচ এলে মাঠের ভিতর যে কোনও টিমেই কিছু বদল হয়।” সুব্রত ঠিক করেছিলেন, তিনি নিজে না বলে এক এক ফুটবলারকে এক এক দিন পাঠাবেন। কর্তাদের উদ্যোগে আজ থেকেই ফুটবলারদের মুখে লাগাম পড়তে পারে সুনীল-কথার পরে।
পুরো ব্যাপারটাকে কী ভাবে দেখছেন? মোহনবাগান যাঁকে অনেক বার অতীতে ছাঁটাই করেছে, সেই অমল দত্ত ডার্বির মেলের খবর শুনে হো হো করে হাসেন প্রথমে। বলে উঠলেন, “প্রস্তর যুগের প্রশাসন বলেছেন বুঝি? প্রশাসন কোথায়? প্রশাসনই তো নেই। বলতে পারেন, অওরংজেবের শাসন।” |