বদলার সিরিজ জিতে উঠে ‘বদলা’ শব্দটাকেই ক্রিকেট অভিধান থেকে সরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানালেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। শুধু ক্রিকেট কেন, কোনও খেলাধুলোতেই এত কঠোর একটা শব্দ থাকা উচিত নয় বলে মনে করছেন তিনি। “বদলা শব্দটা খুব কঠোর। খেলাধুলোতে এ রকম একটা শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়। বিশেষ করে যেখানে স্পিরিট অব দ্য গেম নিয়ে এত কথা বলা হয়। আমার মনে হয় এ ভাবে দেখা উচিত যে, হেরে গিয়ে একটা দল কতটা সেই অন্ধকার থেকে উঠে আসতে পারল। কতটা উন্নতি করতে পারল,” মোহালিতে ম্যাচ এবং সিরিজ জিতে উঠে বললেন ধোনি। সাংবাদিক সম্মেলনে আসার পথে যাঁকে যথেষ্ট কষ্ট করতে হল। ভক্তরা এমন ভিড় করে দাঁড়িয়ে যে, প্রিয় অধিনায়কের সঙ্গে ছবি না তুলে, তাঁর অটোগ্রাফ না নিয়ে ছাড়তে রাজি নয়। ভিড়ের মধ্যে বুকে-পিঠে ধোনি লেখা সেই যুবকও এসে পড়েছে।
নিজের ক্রিকেটজীবনে কয়েক মাসের ব্যবধানে ফুল এবং কাঁটার এমন বিপরীত অভ্যর্থনা আগেও দেখেছেন ভারত অধিনায়ক। নতুন তো কিছু নয়। ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে বিপর্যয়ের পরেই যেমন। মহাতারকা থেকে আচমকা আক্রান্ত খলনায়কে পরিণত হয়ে যান তিনি। ওয়াংখেড়েতে ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার পর যার জন্য বলে ফেলেছিলেন, “সমর্থকদের মনোভাব বদল নিয়ে আমাদের ভাবলে চলে না। আগের বিশ্বকাপেই তো আমার বাড়ির উপর আক্রমণ হয়েছিল। রাঁচি ফিরতে পর্যন্ত পারছিলাম না। আজ সেই লোকগুলোই ধন্য ধন্য করছে।” |
গুরু গ্রেগের আমলে সেই অন্ধকারের সময় কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন ধোনি। কিন্তু এত দ্রুত চারপাশের আবহ পাল্টে যেতে বোধহয় তখনও দেখেননি। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে তাঁর রাস্তায় আবার কাঁটার বদলে ফুল। সচরাচর তাই মাঠের মধ্যে খুব বেশি প্রতিক্রিয়া না দেখালেও এ দিন নিজে গিয়ে স্টাম্প তুলে নিলেন স্মারক হিসেবে। পরে বললেন, “যে সব ম্যাচে আমি টিম জেতায় অবদান রাখতে পারি সেই ম্যাচের একটা স্টাম্প আমি রেখে দেওয়ার চেষ্টা করি। এখানেও ম্যাচটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। আমার আর জাডেজার মধ্যে এক জন আউট হয়ে গেলে খুব চাপ তৈরি হয়ে যেতে পারত।” তার পরেই দ্রুত যোগ করলেন, “আমাদের আরও সহজ ভাবে জেতা উচিত ছিল।”
অ্যালিস্টার কুক এ দিন ব্যাটসম্যান ধোনিকে অন্য শৃঙ্গে বসিয়ে দিয়ে গেলেন। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলে গেলেন, “সফল ভাবে ম্যাচ শেষ করার ব্যাপারে ধোনির পাশাপাশি এখন কেউ নেই।” আর মাত্র ক’দিন আগেই যাঁর কাছে শুধু বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছিল, তাঁর কাছে এ দিন ব্রিটিশ মিডিয়া জানতে চাইল, “ইংল্যান্ডে এত বাজে একটা সিরিজের কয়েক দিনের মধ্যে এ ভাবে টিমটাকে একত্রিত করে ঘুরে দাঁড়ালেন। এখন ইংল্যান্ডের বিপর্যস্ত অবস্থা। কুকের টিমকে কী পরামর্শ দেবেন?” ধোনি বললেন, “এটাই বলব যে, নিজেদের উপর আস্থা না হারিয়ে একত্রিত থাকার চেষ্টা করো।”
ইংল্যান্ডে ইয়ান বেলকে ফিরিয়ে এনে অনবদ্য উদাহরণ রেখেছিলেন ধোনি। কিন্তু দ্রুতই আবিষ্কার করেছেন যে, ইংল্যান্ড পাল্টা শিষ্টাচার রক্ষা করার ব্যাপারে অতটা আগ্রহী নয়। কোটলা থেকে দু’দলের সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এক সাংবাদিক এ দিন তাঁকে ধরিয়ে দিলেন, ইংল্যান্ড বলেছে, এটা তারা চালিয়ে যাবে। এটা নাকি তাদের স্ট্র্যাটেজি। শুনে সহাস্য ধোনি, “বলতে বাধ্য হচ্ছি, ওদের স্ট্র্যাটেজিটা তা হলে খুব খারাপ স্ট্র্যাটেজি এবং এই সিরিজে একেবারেই কাজ করেনি। পরের দু’টো ম্যাচে ওদের স্ট্র্যাটেজিটা পাল্টাতে বলুন।” তার পর যোগ করলেন, “ক্রিকেটের স্পিরিট নিয়ে এত কথা যদি বলাই হয় তা হলে মনে হয়, এটাও দেখা উচিত যে স্লেজিং যেন সীমানা অতিক্রম করে না ফেলে। টুকটাক কথাবার্তা ঠিক আছে। কিন্তু সেটা কখনওই ব্যক্তিগত আক্রমণে নামিয়ে আনা উচিত নয়।”
শুনে মনে হল, কোথাও যেন দুঃস্বপ্নের ইংল্যান্ড সফরের লজ্জা তাঁকে খোঁচা দিয়ে যাচ্ছে। নিছক সিরিজ জয় সেই খচখচানি মেটাতে পারবে না। ৫-০ জাতীয় কিছু ঘটলে তবেই যদি সাময়িক শান্তি ফিরে পান! |