হাতির হানা রুখতে পরিখা নয়াগ্রামে
ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে দলমার হাতিদের জঙ্গলের গভীরে আটকে রাখতে উদ্যোগী হল বন দফতর। এ জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার নয়াগ্রামের জঙ্গলে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে এলাকাবাসীকে দিয়ে ‘এলিফ্যান্ট প্রুফ ট্রেঞ্চ’ কাটার কাজ শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলক ভাবে ১ কিলোমিটার পরিখা খনন করা হয়েছে রায়বেড়ায়। খরচ হয়েছে ৬ লক্ষ টাকা। যে দিক দিয়ে হাতি ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে, পরিখার সে দিকে দু’টি স্তরে বিশেষ কাঁটাজাতীয় গাছ ও ক্যাক্টাসের বেড়া দেওয়া হয়েছে। ‘অ্যাগেভ’ গাছ হাতিরা এড়িয়ে চলে। তাই ওই কাঁটাগাছ লাগানো হয়েছে পরিখার সামনে। দেওয়া হয়েছে ফণিমনসার বেড়াও। পরিখার অপর প্রান্তে বোল্ডারের গার্ডওয়াল তৈরি করা হয়েছে।
বন দফতরের আশা, এই পদ্ধতিতে নয়াগ্রামের রায়বেড়া, দুলকিশোল, শীতলপুরা, খানামুড়ি, তুফুরিয়া, কমলাপুরের মতো ১৫-২০ টি গ্রামে হাতির হামলা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। খড়্গপুরের ডিএফও মিলনকান্তি মণ্ডল বলেন, “নয়াগ্রামের জঙ্গলে হাতির পালের ঢোকা আটকানো সম্ভব নয়। তাই লোকালয়ে হাতির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পরিখা খননের ব্যবস্থা হয়েছে। আপাতত যে পরিখা খনন করা হয়েছে, তাতে হাতির পাল বাধা পেয়ে নির্দিষ্ট এলাকাটি এড়িয়ে গেলে বোঝা যাবে প্রকল্পটি সফল হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আরও ৪ কিমি এলাকা জুড়ে পরিখা খনন করা হবে।” এ ছাড়া হাতিদের খাদ্য সংস্থানের কথা মাথায় রেখে জঙ্গলের মধ্যে ৪০ হেক্টর জায়গায় বাঁশগাছ লাগিয়েছে বন দফতর। পাশাপাশি আখের বদলে বিকল্পে চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। মিলনবাবুর কথায়, “২০ হেক্টর জমিতে আখের পরিবর্তে এ বার কাঁচালঙ্কা ও মাদ্রাজি ওল চাষ করেছেন কয়েক জন চাষি। এতে লাভের অঙ্ক প্রায় সমান। ক্ষতি নেই। কারণ, হাতির পাল লঙ্কা ও ওল খায় না।”
নিজস্ব চিত্র।
প্রতি বছরই নয়াগ্রামে হানা দেয় দলমার দামালরা। বিস্তীর্ণ এলাকায় ধান, শীতকালীন সব্জি ও ব্লকের প্রধানতম অর্থকরী ফসল আখ খেয়ে-মাড়িয়ে নষ্ট করে তারা। সম্পত্তির ক্ষতি, এমনকী প্রাণহানিও ঘটে। গত বছর বন দফতরকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতে হয়েছে ৩৫ লক্ষ টাকা। হাতির হামলা ঠেকাতে গত চার বছরে কলমাপুকুরিয়া-নয়াগ্রাম-খড়িকামাথানির জঙ্গল লাগোয়া ১৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চতুর হাতির দল তা অতিক্রম করে ঘুরপথে লোকালয়ে ঢুকেছে। কয়েক জায়গায় আবার তার চুরি হয়ে গিয়েছে।
বুধবার রাতে সদর ব্লকের গুড়গুড়িপালের দিক থেকে একশোটির মতো হাতির পাল মনিদহের কাছে কংসাবতী পেরিয়ে ঝাড়গ্রামের চুবকা, মানিকপাড়া ও সর্ডিহা হয়ে খড়্গপুরের কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের জটিয়া-নিশ্চিন্তার জঙ্গলে পৌঁছেছে। পথে চুবকার গুড়িয়াডাঙা গ্রামের ১৫টি মাটির বাড়ি ভাঙচুর করে হাতির দল। প্রায় ৩০ বিঘা খেতের ধানেরও ক্ষতি করে। এ বার তারা নয়াগ্রামের দিকে যাবে, এ ব্যাপারে বন দফতর এক রকম নিশ্চিত। শ’খানেক হাতির পালে প্রায় কুড়িটি শাবক রয়েছে। বন দফতরের অনুমান, পালে শাবক থাকায় কিছুটা রয়েসয়ে ২-৩ দিনের মধ্যেই সাঁকরাইল এলাকা হয়ে সুবর্ণরেখা পেরিয়ে হাতিরা নয়াগ্রামের চাঁদাবিলার বনাঞ্চলে ঢুকে পড়বে। এ বারও হাতিরা নয়াগ্রামে আসছে জেনে উৎকন্ঠায় রয়েছেন এলাকাবাসী। নয়াগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক দুলাল মুর্মু বলেন, “হাতির হামলায় প্রতি বছর চাষের মরসুমে এলাকার অর্থনীতি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বনমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.