|
|
|
|
‘ফেরার’ প্রধান, অচলাবস্থা আরামবাগের পঞ্চায়েতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সিপিএমের এক পঞ্চায়েত প্রধান ‘ফেরার’। তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় চার মাস। নিয়ম অনুযায়ী, উপপ্রধানকে প্রধানের দায়িত্ব সামলানোর লিখিত নির্দেশ দিয়েছেন বিডিও। কিন্তু ‘পদ্ধতিগত’ ত্রুটির কথা উল্লেখ করে উপপ্রধান সেই দায়িত্ব নেননি। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত রকম আর্থিক উন্নয়ন স্তব্ধ আরামবাগের মাধপুর পঞ্চায়েতে। গ্রামোন্নয়নের সব রকম কাজও বন্ধ। এমনকী, টাকা বকেয়া থাকায় পঞ্চায়েত দফতরের বিদ্যুৎ এবং টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিষয়টি হুগলি জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক অরুণ রায়কে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন আরামবাগের বিডিও মৃণালকান্তি গুঁই। সেটাও ১২ অক্টোবরের ঘটনা। কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে ব্লকে কাছে কোনও নির্দেশ আসেনি। অরুণবাবু বলেন, “বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছি ব্লক প্রশাসনকে। তারপরে পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের সব ক’টিই বাম পরিচালিত। গত লোকসভা ভোটের পর থেকে পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে তৃণমূল। বিধানসভা ভোটের পরে অবিরাম ঘেরাও বিক্ষোভ হয়েছে। মাধবপুর পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দু’টি রাস্তা তৈরি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের দাবি ছিল, সংশ্লিষ্ট রাস্তা দু’টির অস্তিত্বই নেই। অথচ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের তরফে দুর্নীতি প্রমাণও হয়। গত ২৫ জুলাই প্রধান মুজিবর, পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক অরুণ কোনার-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন বিডিও। পঞ্চায়েত আধিকারিক তথা নির্বাহী সহায়ক অরুণবাবু ধরা পড়েন। পুলিশ জানায়, প্রধান পলাতক। তিনি অবশ্য ক’দিন আগে থেকেই পঞ্চায়েতে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়ে অরুণবাবু কাজে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু মামলাটি বিচারাধীন থাকায় তিনি আর্থিক লেনদেন-সংক্রান্ত কোনও কাগজপত্রে সইসাবুদ করতে পারেন না। পঞ্চায়েতের নিয়ম অনুযায়ী, আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রধান এবং নির্বাহী সহায়কই সই করতে পারেন।
পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ীই গত অগস্ট মাসে উপপ্রধান সুস্মিতা দে-কে প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেন বিডিও। উপপ্রধান বলেন, “বিডিও নির্দেশ দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আমাকে তো আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।আমি বলেছি, এ ব্যাপারে লিখিত রেজ্যুলিউশন হওয়া দরকার যে আমাকে এ দিন থেকে প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হল।” সেই রেজ্যুলিউশন এখনও পর্যন্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সুস্মিতাদেবী। তিনি বলেন, “এখন যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, যত দিন না লিখিত রেজ্যুলিউশনের ভিত্তিতে কাগজপত্র হাতে পাচ্ছি, তত দিন পর্যন্ত আর্ধিক ব্যাপারে স্বাক্ষর করব না।” বিডিও জানান, রেজ্যুলিউশন-সংক্রান্ত ব্যাপারে তিন তিনটি বৈঠক ডেকেছি। কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্যেরা হাজির না হওয়ায় তা হয়নি।” এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতে কিছু শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে মাত্র। এ দিকে উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে পড়ায় এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। এই পঞ্চায়েতে সদস্য ১৫ জন। তাঁরা দু’এক জন অনিয়মিত ভাবে অফিসে এলেও অধিকাংশই আসেন না। বিধানসভা ভোটের পরে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের জেরে সন্ত্রাস, নিরাপত্তার অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। |
|
|
|
|
|