|
|
|
|
দেশের ‘দরিদ্রতম’ জেলা শিক্ষার হারে রাজ্যে প্রথম স্থানে |
বিমান হাজরা • রঘুনাথগঞ্জ |
দেশের দরিদ্রতম জেলাগুলির শীর্ষে মুর্শিদাবাদ। মঙ্গলবার, দিল্লিতে এমনই মন্তব্য করেছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
অভাব-দীর্ণ সেই জেলাই কিন্তু শিক্ষার অগ্রগতির হারে রাজ্যে শীর্ষ স্থান দখল করে সবাইকে চমকে দিয়েছে। সদ্য প্রকাশিত ২০১১ সালের জনগণনা বা সেনসাস-এর খসড়া রিপোর্ট সে কথাই বলছে।
এখানেই শেষ নয়, সংখ্যলঘু প্রধান এই জেলায় জন্ম নিয়ন্ত্রণের হারও চোখে পড়ার মতো। এই দু’টি পরিসংখ্যানই পিছিয়ে পড়া শিল্পহীন এই জেলাটির উপরে নতুন আলো ফেলেছে।
দেশের ৬৪০টি পিছিয়ে পড়া জেলার অন্যতম মুর্শিদাবাদ। সংখ্যালঘু প্রধান মুর্শিদাবাদের উন্নয়নের প্রশ্নে তাই একটু বাড়তিই ‘নজর’ দিয়েছিলেন এই জেলার জঙ্গিপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিরোধীরা তা নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। মঙ্গলবার তারই জবাবে মুর্শিদাবাদকে দেশের ‘দরিদ্রতম’ জেলা বলে উল্লেখ করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রণববাবু।
‘দরিদ্রতম’ সেই জেলাই কিন্তু জনগণনার খসড়া রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের ১৯টি জেলাকে পিছনে ফেলে শিক্ষার হারে (১৩.১৮ শতাংশ) শীর্ষে। গত দু-বছর ধরে একাধিক কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা বেসরকারি সংস্থার শিক্ষাকেন্দ্রকে এই জেলায় তুলে আনার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন প্রণববাবু। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন সেই তালিকায় শেষ সংযোজন।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও এই জেলায় কমেছে ২.৬৯ শতাংশ। স্থানীয় বিড়ি শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দা মৌলবী আব্দুর রহমান এক সময় সরকারি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। এখন অবসর নিয়েছেন। তাঁর মতে, “শিক্ষার হার বাড়ার ফলেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। শিক্ষা নিয়ে এখন সাধারণ শ্রমিক পরিবারেও যথেষ্ট আগ্রহ। বহু পরিবারে স্কুলমুখী এই শিশুরাই প্রথম ‘লারনার’। বাবা মায়ের চেতনা বেড়েছে তাঁদের জীবনের দুঃখ কষ্টের অভিজ্ঞতা থেকে। পাশাপাশি এই চেতনা তাঁদের ছোট পরিবারের কথা ভাবাচ্ছে। আগের মতো ১০-১২টি ছেলেমেয়ের ভরা সংসার আর্থিক কারণেই তাঁরা আর চাইছেন না।”
জন্ম নিয়ন্ত্রণে অনেকটাই যে সাফল্য এসেছে এ জেলায় তা স্বীকার করেন মাদ্রাসা শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদক নুরে খোদাও। তাঁর কথায়, সাচার কমিটির রিপোর্টে দেকা গিয়েছে, এক সময় পুরুলিয়াতে ৯৫৪ জন ছাত্র প্রতি একটি স্কুল গড়ে উঠলেও মুর্শিদাবাদে ১৮৫০ জন ছাত্র পিছু ছিল একটি স্কুল। গত ৫-৬ বছরে স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে। মুর্শিদাবাদে নাচনা বলে একটি পিছিয়ে পড়া গ্রাম আছে, যেখানে অর্ধেকের বেশি ছেলেমেয়ে স্কুলে যেত না। গ্রামে মাদ্রাসা হওয়ায় এখন বহু ঘরের ছেলেমেয়ে মাধ্যমিক পাশ।”
জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রচারে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মার খেয়ে ফিরতে হচ্ছে, এমন ঘটনাও বছর কয়েক আগেও বিরল ছিল না এই জেলায়। নুরে খোদা বলেন, “কট্টরবাদীদের প্রভাব কমেছে। মাদ্রাসাগুলিতেও বিজ্ঞান শিক্ষার আগ্রহ বেড়েছে। তারই সুফল জেলায় শিক্ষার হার বৃদ্ধি।” |
|
|
|
|
|