পুরসভার ‘ওয়েভার স্কিম’-এ সই করলেন না রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। ওয়েভার স্কিমের সবিস্তার ব্যাখ্যা চেয়ে রাজ্যপাল সেই ফাইলটি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সরকারি সূত্রের খবর, শুধু বিলের ব্যাখ্যাই নয়, ওই বিল নিয়ে বিধানসভায় যে বিতর্ক হয়েছিল, তার বিবরণীও চেয়েছেন রাজ্যপাল। উল্লেখ্য, ওই স্কিমটি আগেই বিধানসভার অনুমোদন পেয়েছিল। বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
জরিমানা এবং সুদ মকুব করে বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ের জন্য পুরসভার ওয়েভার স্কিম-সহ বিধানসভায় গৃহীত পুর-আইনের সংশোধনী প্রস্তাবের সবিস্তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে ওই সংশোধনী প্রস্তাবের ব্যাখ্যায় রাজ্যপাল মূলত জানতে চেয়েছেন ওয়েভার স্কিম সম্পর্কে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “ওয়েভার স্কিম কেন এবং আগে কখনও এই স্কিম চালু হয়ে থাকলে তার কী ফল হয়েছিল, তা সবিস্তার জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। দিন দুয়েকের মধ্যেই তাঁর কাছে সবিস্তার ব্যাখ্যা পেশ করা হবে।”
সুব্রত মুখোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন দু’দফায় ওয়েভার স্কিম চালু করে বকেয়া সম্পত্তিকর আদায় করেছিলেন। তৃণমূল পুরসভায় ক্ষমতায় আসার পরে ফের ওয়েভার চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি, সম্পত্তিকর মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে ‘এলাকা-ভিত্তিক’ কর নির্ধারণ পদ্ধতি চালু করতে চায়। তার আগে ওয়েভার-স্কিম চালু করে বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য পুরসভা এই আইন প্রয়োগ করতে চেয়েছিল। পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, বকেয়া করের পরিমাণ ২৬০০ কোটি টাকা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “সম্পত্তিকর মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালুর আগে পুরনো ব্যবস্থার সমস্ত বকেয়া আদায় করার জন্য ওই ওয়েভার স্কিম চালু করতে চাইছি।”
এ দিকে, পুরসভার পেশ করা ওয়েভার স্কিমের কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে রাজ্য অর্থ দফতরের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিশেষত, ২০০৩-’০৪ সালে ওয়েভার স্কিম চালু করার পরেও যে সব করদাতা বকেয়া মেটাননি, তাঁদের ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে রাজ্যের অর্থ দফতর। অর্থ দফতরের প্রস্তাব অনুযায়ী, বকেয়া সম্পত্তিকর আদায়ে এ দিন কড়া পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, “আর্থিক ভাবে সচ্ছল যে সব করদাতা দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তিকর দিচ্ছেন না, এ বার পুর-আইন মোতাবেক তাঁদের সম্পত্তি ক্রোক করার নোটিস পাঠানো হবে।”
এ ছাড়াও, পুরসভার প্রস্তাবিত ওয়েভার স্কিমে এক থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে, এমন সব করদাতাদের ৭৫% সুদ মকুব করার যে প্রস্তাব রয়েছে, তা নিয়েও আপত্তি তুলেছে অর্থ দফতর।
কলকাতা পুরসভাকে রাজ্যের অর্থ দফতর জানিয়েছে, গত ওয়েভার স্কিমে যে সব করদাতা বকেয়া মেটাননি, তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও অবস্থাতেই ৫০ শতাংশের বেশি সুদ মকুব করা ঠিক হবে না। এই প্রস্তাবও কার্যকর করতে রাজি হয়েছেন পুরকর্তারা। এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত বকেয়া করের ক্ষেত্রে জরিমানা ও সুদ সম্পূর্ণ মকুব করার পুর-প্রস্তাবের সঙ্গেও রাজ্য অর্থ দফতর একমত নয়। সুদ সম্পূর্ণ মকুব না-করে ন্যূনতম ১ শতাংশ সুদ আদায়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ দিন পুর-আধিকারিকেরা জানান, অর্থ দফতরের এই প্রস্তাবটি নিয়েও নতুন করে আলোচনা হবে। |