দীপাবলির এখনও এক সপ্তাহ বাকি। কিন্তু দিল্লির গল্ফ লিংক-এর ২২ নম্বর বাড়িটায় আজ থেকেই রোশনাই!
সন্ধ্যায় মুয়ম্মর গদ্দাফির মৃত্যু সংবাদের ‘পাকা’ খবর আসার পর থেকেই রীতিমতো উৎসব নয়াদিল্লিতে অবস্থিত লিবিয়ার এই দূতাবাস ভবনটিতে। নিকটবর্তী লিবিয়ান রেস্তোরায় ঘনঘন শোরবা (স্যুপ), জুমিতা (ময়দা, অলিভ অয়েল আর চিলি সস দিয়ে তৈরি এক ধরনের নোনতা পিঠে)-সহ আরও চার-পাঁচ রকম লিবিয়ান পদের অর্ডার যাচ্ছে! রোজকার বিদ্যুতের আলোর বদলে বিস্তীর্ণ গাড়ি বারান্দা সাজানো হয়েছে সে দেশের ঐতিহ্যবাহী তেলের বাতি দিয়ে। পতপত করে উড়ছে লিবিয়ার পুরনো পতাকা, যা কিনা ব্যবহার হত ১৯৫১ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত। লাল, কালো এবং সবুজ রঙ এর পতাকা, যার মধ্যে একটি তারকাচিহ্ন। গদ্দাফির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরুর পর থেকেই ন্যাশনাল ট্র্যানজিশনাল ফোর্স (এনটিসি) এই পতাকাকেই নিজেদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছিল।
সব মিলিয়ে লিবিয়ার দূতাবাসের আজকের ছবিটা একটি কথাই বলছে। তা হল, গদ্দাফির মৃত্যু সংবাদ আসাটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। দু’মাস আগে ত্রিপোলিতে পালা বদলের সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির গল্ফ লিংকের লিবিয়ার দূতাবাসেও ঘটে গিয়েছিল নিঃশব্দ বিপ্লব। গদ্দাফির অনুগামী আমলাদের দূতাবাসে ঢোকা কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়। চত্বরের দখল নেয় এনটিসি-পন্থীরা। টেনে নামিয়ে দেওয়া হয় গদ্দাফি নেতৃত্বাধীন গ্রেট সোশ্যালিস্ট পিপল্স লিবিয়ান আরব জামাহিরিয়ার সবুজ পতাকা। কারা ছিলেন এর নেতৃত্বে? সূত্রের খবর, ত্রিপোলির নির্দেশে দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি জালাল ই বেরামের নেতৃত্বে পাঁচ জন এনটিসি-পন্থী আমলা দূতাবাসের দখল নেন। |
প্রথম স্ফুলিঙ্গটা জ্বলেছিল গত ২১ ফেব্রুয়ারি। সে দিন লিবিয়ার রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানো হয়। প্রতিবাদে উত্তাল হয় এখানকার দূতাবাসও। তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের কাউন্সেলার আমের মোহামেদ আব্দুল সালাম তৎক্ষণাৎ একটি বিবৃতি পাঠান আল জাজিরা টিভি চ্যানেলকে। যার বক্তব্য, ‘লিবিয়ার মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা শহিদ হয়েছেন, তাঁদের শ্রদ্ধা, সম্মান জানাই। আমরা ঘোষণা করছি যে, আমরাই আজ লিবিয়ার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছি। লিবিয়ার মানুষের রক্ত অত্যন্ত মূল্যবান। দরকষাকষিতে আমরা যাব না। অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে এই বিপ্লব সফল হবেই।’ তবে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে অগস্ট, এই ছ’মাস কিন্তু এনটিসি-পন্থী আমলারা ঢুকতে পারেননি দূতাবাসে। তখনও একা কুম্ভের মতো দুর্গ আঁকড়ে বসেছিলেন গদ্দাফি-পন্থী রাষ্ট্রদূত রামাদান আল বাবা। ত্রিপোলিতে গদ্দাফি-জমানার পতনের পরেই বদলে যায় ছবিটা। পদত্যাগ করতে বাধ্য হন রামাদান।
লিবিয়ার দূতাবাসে উৎসবের ছোঁয়া লাগলেও নয়াদিল্লি কিন্তু গোটা বিষয়টির উপর সতর্ক নজর রাখছে। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ ‘বন্ধু’ মুয়ম্মর গদ্দাফির হত্যা নিয়ে সরকারি ভাবে মুখ খুলতে চাইছে না সাউথ ব্লক। কিন্তু সেই সঙ্গে গদ্দাফি হত্যার কোনও নিন্দাও কিন্তু করা হয়নি। গদ্দাফির সঙ্গে ভারতের আগাগোড়াই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও ২০০৯-এর ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হোক বলে মন্তব্য করে দিল্লিকে অস্বস্তিতে ফেলে দেন তিনি। এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে দিল্লি এক বিবৃতিতে শুধু বলেছে, ভারত ‘লিবিয়ার মানুষের’ সঙ্গে রয়েছে এবং ‘সে দেশের পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে’ সব রকম সাহায্য করতে চায়। প্রকারান্তরে বোঝানো হয়েছে, লিবিয়ার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি পূর্ণ সমর্থন নয়াদিল্লির রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “সামরিক অভিযান এবং খুনের ঘটনাকে সমর্থন না করা হলেও অন্য কোনও দেশের মানুষ যদি সামগ্রিক ভাবে তাদের অধিকার প্রয়োগ করে, আমাদের সে ক্ষেত্রে কিছু বলার নেই। তা ছাড়া কী ভাবে এই ঘটনাটি ঘটল সে ব্যাপারে কোনও নিশ্চিত রিপোর্ট এখনও আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। সে সব খতিয়ে দেখেই যা বলার বলা হবে।” |