|
|
|
|
‘শয়তানটা মরেছে’, বাজি ফাটিয়ে উচ্ছ্বাস লিবিয়ার |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
মুয়ম্মর গদ্দাফির ছবিটার উপরে নাগাড়ে লাথি মেরে চলেছেন গুটিকয় বন্দুকধারী। যতটা বিকৃত করে দেওয়া যায় ওটাকে!
গদ্দাফি আর নেই এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না দেশটার! তাই হয়তো উচ্ছ্বাসটাও মাত্রাছাড়া। ৪২ বছরের সর্বময় শাসকের শেষ হওয়ার দিনে সেই অবিশ্বাস মেশানো উল্লাসেরই বিচিত্র প্রকাশ দেখল লিবিয়া-সহ গোটা বিশ্ব।
গত কালই গদ্দাফির একমাত্র ঘাঁটি সির্তেয় ঢুকে পড়েছিল বিদ্রোহীরা। চলছিল ‘শেষ যুদ্ধ’। আজ সকালেও ইতিউতি গুলির শব্দের মাঝে ঘরবন্দিই ছিল সির্তে।
স্থানীয় সময় বিকেল চারটেয় হঠাৎ খবর, বিদ্রোহীদের কব্জায় এসে গিয়েছে সির্তে। ধৃত গদ্দাফি!
আতঙ্কের গুলির শব্দ এক মুহূর্তে বদলে যায় উল্লাসের বিস্ফোরণে। ঘরবন্দি শহর মুহূর্তে নেমে আসে রাস্তায়। শুরু হয়ে যায় লিবিয়ার ‘স্বাধীনতার উৎসব।’ সির্তের চতুর্দিকে দাঁড়িয়ে আধভাঙা বাড়িঘর। তার উপরেই বিদ্রোহীদের তরফ থেকে উত্তোলন করা হয় লাল-কালো-সবুজ রঙের নতুন জাতীয় পতাকা।
এর মধ্যেই টেলিভিশনের পর্দায় গদ্দাফির রক্তাক্ত মৃতদেহের ছবি। উল্লাসের পারদ চড়ল আরও খানিকটা। রোদ ঝলমলে আকাশে তখন অজস্র বাজির রোশনাই। গাড়ির মাথায় উঠে শিশুর মতো উচ্ছ্বাসে নাচছেন রণক্লান্ত সৈনিকরা। গায়ে জড়ানো জাতীয় পতাকা। মাঝে মাঝে হাতে ধরা বন্দুক থেকে শূন্যে গুলি ছোড়া। যেন আরও এক বার বিশ্বাসটা ঝালিয়ে নেওয়া যে অবশেষে হয়েছে লক্ষ্যপূরণ! একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চলছে অভিনন্দন জানানোর পালা। লিবিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্যমন্ত্রী মাহমুদ শাম্মাম বললেন, “কত দশক ধরে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে আছি। আল্লাকে অজস্র ধন্যবাদ যে এই দিনটা দেখার জন্য আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন!” |
|
গদ্দাফির মৃত্যুর পরে সির্তে শহরে বিদ্রোহীদের উল্লাস। ছবি: এএফপি |
বাঁধভাঙা উল্লাসের আর এক চিত্র মিলল রাজধানী ত্রিপোলিতেও। গদ্দাফির নিহত হওয়ার খবর ত্রিপোলি ‘সেলিব্রেট’ করল যত জোরে সম্ভব গাড়ি আর জাহাজের হর্ন বাজিয়ে! যারা এখনও জানে না এই বহু প্রতীক্ষিত খবর, তাদেরও যেন সামিল করার চেষ্টা। তিল ধারণের জায়গা নেই ত্রিপোলির শহিদ স্কোয়্যারে। সেই ভিড়েই মিশে ছিলেন মাইকেল জে আরিঘি। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ইরাক-আফগানিস্তানে কাটিয়েছেন আরিঘি। সেখানকার যুদ্ধও দেখেছেন নিজের চোখে। তার সঙ্গে তুলনা টেনে বললেন, “এখানকার মেজাজটাই আলাদা। এটাই সত্যিকারের মানুষের জয়।” উত্তেজনায় ভাল করে কথাই বলতে পারলেন না বছর পঁচিশের এক যুবক। কোনও মতে বললেন, “শয়তানটা অবশেষে মরেছে! আর কিচ্ছু চাই না। এ বার সব ঠিক হয়ে যাবে।” আর এক জন তার সঙ্গে জুড়ে দিলেন, “লিবিয়ার মানুষের চোখের দিকে তাকান। স্বস্তি ছাড়া আর কিছু দেখতে পাবেন না।” আশপাশ থেকে আরও হাজার কণ্ঠ গর্জে উঠল, “আমরা মুক্ত।” ওঁদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘মুক্তি’র পর এ বার কী তবে দেশটাকে নতুন করে গড়ার কাজে যোগ দেবেন তাঁরা? ইতস্তত কয়েকটা মুহূর্ত। তার পরই দু’পাশে মাথা নাড়তে নাড়তে উত্তেজিত জবাব, “জানি না, এই মুহূর্তে কিচ্ছু ভাবতে পারছি না। ভাবতে চাই-ও না।”
এটাই আসলে গদ্দাফির শেষ হওয়ার দিনে লিবিয়ার সামগ্রিক চিত্র। যেখানে কান পাতলে শোনা যায় শুধু তিনটে শব্দ মুক্তি, উল্লাস, উৎসব। ভবিষ্যৎ? বহু দূর! |
|
|
|
|
|