সব বজ্র-মুষ্টিই এক দিন খুলে যায়!
গদ্দাফি-হত্যার খবর পেয়ে এই প্রতিক্রিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার।
ওসামা বিন লাদেনের পরে মুয়ম্মর গদ্দাফি। ছ’মাসের মধ্যে দুই ‘স্বৈরাচারী’ খতম। স্বভাবতই এই ঘটনাকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আজ হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “গত কয়েক মাসে বেশ কয়েক জন আফগান স্বৈরাচারী নিহত হয়েছেন। পৃথিবী এখন বিন লাদেন ও গদ্দাফি-মুক্ত।” ন্যাটো বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়ে আজ প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, “স্বৈরাচারের কালো ছায়া লিবিয়া থেকে সরে গিয়েছে। এ বার সে দেশের মানুষকে গণতান্ত্রিক লিবিয়া গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করতে হবে।” আর আফগানিস্তানে সফররত মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন বলেন, “দারুণ খবর! লিবিয়ায় এ এক বিরাট পরিবর্তন।”
গদ্দাফি-জমানার অবসানকে এক নতুন মার্কিন রণনীতির জয় হিসেবেও দেখছেন কূটনীতিকরা। জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বিশেষ মাথা ঘামান না, ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ বহু বার উঠেছে। কিন্তু সেই ভাবমূর্তি অনেকটাই পাল্টে দিতে পেরেছেন ওবামা। ওসামা বিন লাদেন, আনোয়ার আল-আওলাকি-সহ বেশ কয়েক জন শীর্ষ আল কায়দা নেতাকে হত্যার ‘সাফল্য’ তো রয়েছেই। রয়েছে পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায় ‘আরব বসন্তে’র হাওয়াও। দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসকদের হটিয়ে গণতন্ত্রকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা। অবশ্যই মার্কিন মদতে।
ওবামা-প্রশাসনের নতুন রণনীতিটি কী?
লিবিয়ার উদাহরণ দেখলেই তা স্পষ্ট হবে। ন্যাটোকে যে ভাবে আমেরিকা মদত জুগিয়েছে, তা ইরাক বা আফগানিস্তানে মার্কিন হানার থেকে অনেকটাই আলাদা। লিবিয়ায় সরাসরি সেনা না পাঠিয়ে বিমান হানার ওপর নির্ভর করেছে মার্কিন বাহিনী। বহুল ব্যবহার করা হয়েছে ড্রোন। এবং ‘মার্কিন বন্ধু’, অর্থাৎ স্থানীয় বিক্ষোভকারীদের উপর অনেকটাই নির্ভর করা হয়েছে। ওবামার নিজের ভাষায়, “আমরা এই সব বিক্ষোভকারীদের পেছন থেকে সাহায্য করব।” এই মন্তব্য মার্কিন কংগ্রেসে সমালোচিত হলেও এখন দেখা যাচ্ছে, ওবামার রণনীতিই আপাতত জিতল। |
মার্কিন বিদেশ মন্ত্রকের প্রাক্তন এক কর্তা ওয়েন হোয়াইট বলেছেন, “এটা ওবামার বিশাল জয়।” লিবিয়ায় ন্যাটোর অভিযানে মদত দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্টকে বহু সমালোচনা শুনতে হয়েছে। তার প্রধান কারণ অবশ্য দেশের অর্থনৈতিক দূরবস্থা। মার্কিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ওবামা-প্রশাসনকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছিল, আগে দেশের অর্থনীতি সামলাও, তারপর অন্য দেশের পরিস্থিতিতে নাক গলাতে যেও। কিন্তু আজ গদ্দাফি-হত্যার খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে সুর নরম করেছে মার্কিন কংগ্রেস। আগামী বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রোমনির কথায়, “এটা খুব দরকার ছিল। গদ্দাফি না থাকায় এই পৃথিবী আরও বাসযোগ্য হল।”
লিবিয়া অভিযানের বিরোধিতা করেছিলেন রিপাবলিকান সেনেটর চাক গ্রাসলি। আজ কিন্তু তিনি বলেন, “লিবিয়ায় জাতীয় ঐক্য ফিরিয়ে আনা এ বার অনেক সহজ হবে।” ওবামাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আরিজোনার রিপাবলিকান সেনেটর জন ম্যাককেন। গত নির্বাচনে তিনি ওবামার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। আজ তিনি বলেন, “মানতেই হবে, ওবামা-প্রশাসন দারুণ কাজ করেছে।”
মার্কিন কূটনীতিকরা মনে করেন, আগামী বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই ‘সাফল্য’কে প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করবে ডেমোক্র্যাটরা।
কিন্তু এই সাফল্য ভোটবাক্সে কোনও প্রভাব ফেলবে কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই। কারণ সফল বিদেশনীতির থেকে আমেরিকার সাধারণ মানুষ অনেক বেশি চিন্তিত দেশের অর্থনীতি নিয়ে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা এখনও করে উঠতে পারেনি ওবামা-প্রশাসন। বিন লাদেন হত্যার পরে ওবামার জনপ্রিয়তা ৬ শতাংশ বেড়ে ৪৩ শতাংশে পৌঁছেছিল। গদ্দাফির মৃত্যু সে রকম কোনও প্রতিক্রিয়া হবে বলে মনে হয় না।
তাই ইয়েমেন, মিশর বা সিরিয়া নয়, দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ওবামা ফিরবেন কি না, তা বলবে আমেরিকার ঘরোয়া পরিস্থিতিই। |