দলের সংগঠন ঢেলে সাজার প্রক্রিয়া শুরু হতেই উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় যেন ঢল নামল অত্যুৎসাহী নেতা কর্মীদের। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে কখনও তা সুশৃঙ্খল ছিল, কখনও চরম বিশৃঙ্খলার জেরে সভাস্থলই পাল্টাতে হয়। সোমবার দিনভর এই চিত্রই বুঝিয়ে দিল, তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচনকে ঘিরে দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা ক্রমশ বাড়ছে। আগামী ২ নভেম্বর তৃণমূলের কেন্দ্রীয় কমিটির পুনর্গঠন হবে। তার আগে জেলা স্তরের প্রতিনিধিদের নাম সংগ্রহ করার জন্যই দলের নেতাদের এই উত্তরবঙ্গ সফর। কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরে একে একে রাজ্য, জেলা ও ব্লক কমিটি গঠন করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এদিন সকালে প্রথমে কোচবিহার, তার পরে একে একে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে কর্মীদের নিয়ে সভা করেন তৃণমূলের কেন্দ্রীয় মহাসচিব তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। |
পর্যবেক্ষক হিসাবে প্রতিটি সভায় হাজির ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। কোচবিহারে রবীন্দ্র ভবনে কর্মীদের ভিড় এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে সভাস্থল বদলে রাস্তায় আটকে সভা করতে হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। আলিপুরদুয়ারে সভাস্থলে ঢুকতে হয় পিছনের দরজা দিয়ে। মুকুলবাবু বলেন, “রবীন্দ্র ভবনে যত লোক ধরে তার থেকে পাঁচগুণ মানুষ বাইরে ছিলেন। সেই জন্যই বাইরে সভা করতে হয়েছে। সাংগঠনিক নির্বাচন প্রক্রিয়াতেও ভোটার তালিকার দরকার হয়। সেটা আপনাদের বুঝতে হবে।” দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রতবাবু বলেন, “দলে বিশৃঙ্খলা নেত্রী বরদাস্ত করবেন না। সহকর্মীদের নিয়ে মানুষের কাছে যেতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থে কেউ দলকে ব্যবহার করতে পারবে না।” কোচবিহার রবীন্দ্র ভবনে সকাল থেকে কর্মীদের ভিড়ে উপচে পড়ে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সামনেই কর্মীদের দাবি, পাল্টা দাবি নিয়ে তরজা শুরু হয়। পরিস্থিতি এমন হয় যে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীকে মাইকে দাঁড়িয়ে বলতে শোনা যায় জেলা নেতৃত্বের সম্মান হানি হয়, এমন কিছু করবেন না। তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব না-হওয়ায় এক ঘণ্টায় শহরের জেনকিন্স স্কুল মোড়ের ধারে মঞ্চ তৈরি করে মাইক লাগিয়ে সভার আয়োজন হয়। তাতে দুপুর ১২টা থেকে ঘণ্টা খানেক সিলভার জুবিলি অ্যাভিনিউ এবং লাগোয়া ব্যস্ততম রাস্তায় যানজট দেখা দেয়। জেলার তৃণমূল নেতা তথা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “অসংখ্য কর্মী চলে আসায় সভার জায়গা বদল করতে হয়েছে।” |
আলিপুরদুয়ার সার্কিট হাউসের অ্যানেক্স ভবনে ভিড়ের চাপে সামনের দরজা দিয়ে না ঢুকতেই পারেননি দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। পরে তিনি শৌচাগারের ট্যাঙ্ক টপকে পিছন দরজা ঢোকেন। পিছনের দরজা দিয়ে বের হতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন নিগমের চেয়ারম্যান। ইলেকট্রিকের তার ধরে সামলান। এখানে মুকুলবাবু জানান, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের জেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক নিবার্চন আলাদা ভাবে হবে। আলিপুরদুয়ারের জন্য আলাদা জেলা সভাপতি নিবার্চনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। জলপাইগুড়িতে সভাটি হয় রবীন্দ্র ভবনে। কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক নির্বাচনে ব্লক থেকে সর্বোচ্চ তিনজন প্রতিনিধির নাম চাওয়া হয়। ‘মমতা হাওয়ার’ সুফল কেন জলপাইগুড়িতে কেন মিলল না সেই প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়। তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্মীদের। |