রাজ্যে পালাবদলের পরে প্রথম বার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীকল্যাণ সমিতির সভায় এসে রোগী ও ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন দুই মন্ত্রী। সোমবার কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টচার্য ও কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় হাসপাতালে পরিদর্শন ও বৈঠকে যোগ দিয়ে বেরনোর সময়ে ওই বিক্ষোভ হয়। রবিরঞ্জনবাবু অবশ্য দাবি করেন, “কোনও বিক্ষোভ হয়নি। কয়েক জন ছাত্র ও রোগী আমাদের কাছে কিছু সমস্যার কথা জানাতে এসেছিলেন। আমরা তাঁদের কথা শুনেছি।’’
সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ বর্ধমান মেডিক্যালের সেমিনার রুমে রোগীকল্যাণ সমিতি বৈঠকে বসে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সরিৎ চৌধুরী, হাসপাতাল সুপার গদাধর মিত্র, ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ, জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামানিক প্রমুখ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দুপুর ২টো পর্যন্ত বৈঠক করে দুই মন্ত্রী বের হতেই ডাক্তারির এক দল ছাত্র তাঁদের ঘিরে ধরেন। তাঁদের অভিযোগ, হস্টেলের ছাদ দিয়ে জল পড়ে। দরজার ফাঁক দিয়ে সাপ ঢোকে। পানীয় জলের সুব্যবস্থা নেই। বারবার সুপার বা অধ্যক্ষকে বলেও কাজ না হয়নি। এর পরেও কাজ না হলে মন্ত্রীরা কলেজে এলেই তাঁদের ঘেরাও করা হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়। সুপার ও অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে মন্ত্রী তাঁদের আশ্বাস দেন। |
প্রসূতিকে ফিরিয়ে দেওয়া থেকে এড্স রোগীকে বাইরে থেকে রক্তপরীক্ষা করিয়ে আনতে বলা বর্ধমান মেডিক্যালে কর্তব্যে গাফিলতির একের পর এক অভিযোগ উঠেই চলেছে। এড্স রোগী যেখানে ভর্তি ছিলেন, এ দিন মন্ত্রীরা সেই রাধারানি ব্লকে পরিদর্শনে যেতেই রোগীর আত্মীয়েরা তাঁদের ঘিরে ধরেন। তাঁদের অভিযোগ, পরিষেবা বেহাল। দিনের পর দিন মেঝেয় পড়ে থাকতে হয় রোগীদের। রক্ত মেলে না। সিটি স্ক্যান করাতে যেতে হয় বাইরে বেসরকারি ক্লিনিকে। রায়নার বেলসরের সাবিনা খাতুনের আক্ষেপ, “কয়েক দিন আগে আমার বোনকে ভর্তি করানো হয়েছে। কিন্তু বলা হচ্ছে রক্ত নেই, আমাদের পয়সা দিয়ে রক্ত কিনতে হবে।” গলসির আদ্রাহাটির বাসিন্দা নিহার মাঝির ক্ষোভ, “বাবার মাথায় চোট লেগেছিল। স্ক্যান কারতে বলা হয়েছে। কিন্তু শুনছি, হাসপাতালের বাইরে খোসবাগানে গিয়ে টাকা দিয়ে স্ক্যান করাতে হবে। কেন সরকারি হাসপাতালের এই অবস্থা?”
মন্ত্রীরা আশ্বাস দেন, রোগীদের অভিযোগ ও দাবি-দাওয়া বিবেচনা করা হবে। এর পরেই পুলিশ গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়। পরে দুই মন্ত্রী জানান, হাসপাতাল চত্বরে পরিচ্ছন্নতা, নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ, পুলিশি নিরাপত্তা, জীবনদায়ী ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা, নতুন ভবন নির্মাণ ও কয়েকটি বিভাগের সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ফের রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠক হবে। হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে টাকা চাওয়া হবে।” |