তা হলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত?
হলদিয়ায় ‘আইকেয়ার ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ’ (আইআইএমএসআর)-কে ছাত্রভর্তির অনুমতি কী ভাবে দেওয়া হল, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুলল অনুমোদনকারী সংস্থা মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াই (এমসিআই)!
কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের প্রশ্ন: কলেজের নকশা আগাম দেখা সত্ত্বেও বিধিভঙ্গের ছবিটা কী ভাবে এমসিআই-পরিদর্শকদের নজর এড়িয়ে গেল? গত ২৪ মে-র পরিদর্শনের সময়ে তাঁরা কেন বুঝতে পারলেন না যে, হলদিয়ার ওই একই ভবনে মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি ডেন্টাল কলেজও চলছে? এ হেন ‘বিভ্রান্তি’র নিরসনে আলাদা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এমসিআই। উল্লেখ্য ২৪ মে হলদিয়ায় ওই পরিদর্শনের রিপোর্টের ভিত্তিতেই চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে আইআইএমএসআরে ছাত্রভর্তির নির্দেশ দিয়েছিল এমসিআই।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর: প্রথম পরিদর্শনের আগে হলদিয়ার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজটির যে নকশা রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং দিল্লিতে এমসিআই-কে পাঠানো হয়েছিল, তাতে দেখা যাচ্ছে, আইআইএমএসআর এবং সংশ্লিষ্ট বিসি রায় ডেন্টাল কলেজ গড়ে উঠবে দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা বাড়িতে। বলা হয়েছিল, ডেন্টাল কলেজটিকে পুরনো ভবন থেকে সরিয়ে নতুন বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। পুরনো বাড়িতে চলবে মেডিক্যাল কলেজ।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এমসিআই এবং ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (ডিসিআই)-র সর্বশেষ পরিদর্শনকালে দেখা যায়, দু’টো কলেজই চলছে একই বাড়িতে! ১২ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া রিপোর্টে এমসিআই-ডিসিআই তা স্বীকারও করে নিয়েছে। তা হলে নকশা দেখে রাখা সত্ত্বেও প্রথম পরিদর্শনের সময়ে এমসিআই-পরিদর্শকেরা ডেন্টাল কলেজের প্রসঙ্গ তুললেন না কেন? |
কাউন্সিলের সচিব সঙ্গীতা শর্মা সোমবার বলেন, “মাস্টার প্ল্যান আগেই পেয়ে যাওয়ার কথা। তার পরেও কেন ডেন্টাল কলেজের অস্তিত্ব বোঝা গেল না, সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। বোঝা যাচ্ছে, এমসিআইয়ের তৎকালীন পরিদর্শনে একটা গোলমাল ছিল। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শো-কজ নোটিসের জবাবে কলেজ-কর্তৃপক্ষও ব্যাপারটার ব্যাখ্যা দিতে পারেন।” কিন্তু ঘটনা হল, কলেজের পরিকাঠামোয় ত্রুটি আছে জেনেও এমসিআই যদি মেডিক্যাল কলেজটিকে অনুমোদন দিয়ে থাকে, তা হলে বিধিভঙ্গের দায় তারাও এড়াতে পারে না। অন্তত রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্য দফতরের সূত্রে এমনই মন্তব্য করা হয়েছে। আইআইএমএসআর-কর্তৃপক্ষ সূত্রের দাবি: মেডিক্যাল কলেজের বাড়িতে যে ডেন্টালের ক্লাস হচ্ছে, তা তাঁরা এমসিআই-কে জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি এ-ও বলেছিলেন যে, ডেন্টাল কলেজের নতুন বিল্ডিং তৈরি হওয়ামাত্র পুরনো ভবন খালি করে দেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে যে প্রশ্নটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হল: প্রস্তাবিত কলেজ ভবনের নকশা এমসিআইয়ের কাছে জমা পড়া সত্ত্বেও ২৪ মে একক পরিদর্শনের সময়ে পরিদর্শকেরা কেন জানতে চাইলেন না, কোনটা মেডিক্যাল কলেজের বাড়ি, আর আর কোনটা ডেন্টাল কলেজের? ওই পরিদর্শনের সময়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব ছিলেন তাপস ভট্টাচার্য। মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়গুলো ছিল তাঁর দায়িত্বে। তাপসবাবুও বলেন, “এমসিআইয়ের কাছে নকশা অনেক আগে থেকেই ছিল। ডেন্টাল কলেজের অস্তিত্ব ওঁদের তো না-জানার কথা নয়!” রাজ্যের শিক্ষা-স্বাস্থ্য অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “কলেজটির যে পরিকাঠামো নেই, তা আমরা বার বার এমসিআই-কে জানিয়েছিলাম। আমরা হুঁশিয়ার করার পরে এমসিআই আর যোগাযোগ করেনি।”
অর্থাৎ কোন তরফে কোন পর্যায়ে কতটা গলদ ছিল, তা এখনও পরিষ্কার নয়। |