হলদিয়ার বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ‘আইকেয়ার ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইএমএসআর)-এর ভাগ্য নির্ধারণ পিছিয়ে গেল। একই বাড়িতে মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ তৈরি করে হলদিয়ার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন-কর্তৃপক্ষ বিধি ভেঙেছেন বলে ১২ অক্টোবর জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বিধিভঙ্গের শাস্তি কী হতে পারে, মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) এবং ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিআই)-কেই তা বৈঠকে বসে ঠিক করতে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। উল্লেখ্য সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ ওই দুই কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি। ‘আইকেয়ার’ নামে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেডিক্যাল কলেজটি তৈরি করেছে, সেটিরও চেয়ারম্যান লক্ষ্মণবাবু।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো ‘ব্যবস্থা গ্রহণের’ সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার দিল্লিতে বৈঠকে বসেছিল এমসিআই এবং ডিসিআই। তাতে অবশ্য ‘শাস্তির’ কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং এ দিনের বৈঠকে স্থির হয়েছে, হলদিয়ার ওই মেডিক্যাল কলেজ-কর্তৃপক্ষকে বিধিভঙ্গের জন্য কারণ দর্শানোর (শো কজ) নোটিস দেওয়া হবে। কলেজ-কর্তৃপক্ষকে যার জবাব দিতে হবে আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে। এবং সেই জবাবের ভিত্তিতেই আইআইএমএসআরের ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এমসিআই এবং ডিসিআই।
নিজেদের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কাউন্সিল কী বলছে?
এ দিন এমসিআই-ডিসিআই বৈঠকের শেষে এমসিআইয়ের তরফে কাউন্সিলের সচিব সঙ্গীতা শর্মা বলেন, “আমরা আইআইএমএসআর-কর্তৃপক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা শেষ সুযোগ দিতে চাই। তাই ওদের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।”
অর্থাৎ সদ্য চালু হওয়া বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজটির প্রথম বর্ষে যে ৮০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ জানতে তাঁদেরও অত দিন অপেক্ষা করতে হবে। এমসিআই সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখলেও আইআইএমএসআরে অবশ্য পূর্ব ঘোষণামতো পুজোর পরে এ দিন ক্লাস শুরু হয়েছে। পড়ুয়ারা রবিবারই আবাসিক কলেজটিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এবং এ দিন ছাত্রছাত্রী বা অভিভাবক দিল্লির বৈঠক নিয়ে কারও মধ্যেই বিশেষ হেলদোল চোখে পড়েনি। জলপাইগুড়ির মামনি সাহা যেমন বললেন, “আজ ভাল ক্লাস হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কলেজ-কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে কোনও কথা বলেননি। আমরাও ভাবছি না।” কলেজ-কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে নিশ্চিন্ত আছেন প্রথম বর্ষের ছাত্রী মনীষা সামন্তের বাবা, নন্দকুমারের বাসিন্দা মনোরঞ্জনবাবুও। যাঁর কথায়, “মেয়ে জানিয়েছে, ক্লাস ঠিকঠাক হয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষের উপরে ভরসা রাখছি।”
কিন্তু বিধিভঙ্গের দায়ে আইআইএমএসআরের অনুমোদন যদি শেষমেশ বাতিলই হয়, তখন ওই ৮০ পড়ুয়ার দায় কে নেবে?
এই প্রশ্নে ইতিমধ্যে বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকেই শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিতে হবে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে। ২০১০-এ এমসিআইয়ের পরিদর্শনের আগে রাজ্যের তরফে এমসিআইকে লিখিত ভাবে বলাও হয়েছিল যে, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজটিতে কোনও সমস্যা হলে সরকারই ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব নেবে। তবে ‘পরিবর্তিত’ পরিস্থিতিতে রাজ্য কী করবে, তা এমসিআইয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরেই পরিষ্কার হবে। |