চার বছর ধরে রাজ্যের জেলা পরিষদগুলির স্বমূল্যায়ন শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরেরই উদ্যোগে। নির্ভরযোগ্য ও সক্রিয় পরিচালন ব্যবস্থা এবং সম্পদ সৃষ্টি ও তার সদ্ব্যবহারই এই মূল্যায়নের মাপকাঠি। ২০০৯-’১০ আর্থিক বছরের স্বমূল্যায়নে এই দুই ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্থানাধিকার করেছে যথাক্রমে পশ্চিম মেদিনীপুর ও হাওড়া জেলা পরিষদ। দু’টিই বাম-পরিচালিত। যে সময়ের মূল্যায়নের নিরিখে এই পুরস্কার, তখন রাজ্যেরও ক্ষমতায় ছিল বামেরাই। কিন্তু নিয়মমতো এখন তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারকেও উৎসাহবর্ধক তহবিল দিতে হবে এই দুই জেলা পরিষদকে। সাধারণত, রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কোনও অনুষ্ঠানেই স্বমূল্যায়নে শীর্ষে থাকা জেলা পরিষদের হাতে পুরস্কারের পাশাপাশি উৎসাহ ভাতা তুলে দেওয়া হয়।
যেখানে জঙ্গলমহলের ব্লকগুলির উন্নয়ন-কাজ নিয়ে শনিবার মেদিনীপুর সার্কিট-হাউসে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেও ডাকা হয়নি পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতিকে (বাম বলেই, অভিযোগ), সেখানে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তাদের সম্ভাব্য পুরস্কার-প্রাপ্তি ঘিরে বিশেষ কৌতূহল তৈরি হয়েছে। সক্রিয় পরিচালন ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ স্থানাধিকারের খবরে স্বভাবতই খুশি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছতে কার না-ভাল লাগে। কাজের ক্ষেত্রেও উৎসাহ বাড়ে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, চার বছর ধরেই জেলা পরিষদগুলির এই স্বমূল্যায়ন শুরু হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষই একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। তার আগে বিভিন্ন স্থায়ী সমিতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে বৈঠক, এমনকী জেলা পরিষদের বর্ধিত সভাও ডাকা হয়। সংশ্লিষ্ট সকলের অনুমোদন সাপেক্ষেই গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়। কেন এই মূল্যায়ন? জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “উন্নয়নের কাজে গতি আনতেই এই উদ্যোগ। মূল্যায়নের ফলে এক দিকে যেমন ভাল দিকগুলি বেরিয়ে আসবে, অন্য দিকে দুর্বল দিকগুলিও চিহ্নিত করা যাবে। পরবর্তীকালে, এই ভাল দিকগুলি থেকে উৎসাহিত হয়েই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে পারবেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।”
ইতিমধ্যে ২০১০-’১১ আর্থিক বছরের স্বমূল্যায়নের কাজও শুরু হচ্ছে। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের সচিব বরুণকুমার রায় এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের কাজকর্ম নিয়ে বামবিরোধীদের অভিযোগ, সিপিএম পরিচালিত এই জেলা পরিষদের কাজকর্মে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। কোনও প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে অযথা গড়িমসি করা হয়। দলবাজির নালিশ তো রয়েইছে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে পুরস্কার? জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের দাবি, সব অভিযোগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ‘নির্ভরযোগ্য সক্রিয় পরিচালন ব্যবস্থা’য় সর্বোচ্চ স্থানাধিকারের পরে তাঁদের সেই দাবিই আরও জোরালো হল। সভাধিপতির কথায়, “কোনও কাজে অযথা সময় নষ্ট করি না আমরা। কয়েকটি ক্ষেত্রে অর্থের অভাবেই কাজ ব্যাহত হয়।” |