সমস্যা ছিল, ভাঁড়ারে কয়লা প্রায় নেই। এ বার হঠাৎ এসে হাজির কয়লা বোঝাই ২১টি রেক! পর দিন অবশ্য আবার যে কে সেই। রেকের পরিমাণ নেমে এল পুরনো ১২তেই।
কয়লার অভাবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা লোডশেডিং চলছে রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার একসঙ্গে ২১টি কয়লা-বোঝাই রেক এসে পৌঁছল রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের পাঁচ উৎপাদন কেন্দ্রে। নিগমের কর্তারা তো হতবাক। কারণ, এক দিনে এতগুলি কয়লার রেক শেষ কবে রাজ্যের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে এসেছে, তা মনে করতে পারছেন না তাঁরা।
তা হলে কি রাজ্যের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার সমস্যা মিটে গেল? নিগমের কর্তারা এখনই কিছু বলতে নারাজ। বিদ্যুৎ দফরের এক মুখপাত্র জানান, রবিবার ২১টি রেক এলেও সোমবার সেই সংখ্যাটা কমে গিয়েছে। ১২টির বেশি রেক আসেনি। মঙ্গলবার ক’টা আসবে, তা-ও বলা যাচ্ছে না। ওই মুখপাত্র বলেন, “কোনও কারণে অনেকগুলি মালগাড়ি পথে আটকে ছিল। ঘটনাচক্রে একেবারে ২১টি রেক একই দিনে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। রাজ্যের পুরো প্রয়োজন মেটানোর মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে প্রতিদিন নিয়ম করে ১৭ গাড়ি কয়লা দরকার। সোমবারই মাত্র ১২টি মালগাড়ি পেয়েছি। মঙ্গলবার আবার ক’টা পাব বলতে পারছি না।”
একসঙ্গে ২১টি রেক আসায় রবিবার ও সোমবার সন্ধ্যায় নিগম তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। রবিবার চাহিদা কম থাকায় রাজ্যে কোনও বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল না। সোমবার বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ ছিল মাত্র ১০০ মেগাওয়াট। কিন্তু এই স্বস্তি সাময়িক বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, দু’দিনে ৩৩ রেক কয়লা এসে পৌঁছনোর পরে এখন নিগমের ভাঁড়ারে কয়লা রয়েছে ৯৯ হাজার টন। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রোজ দরকার ৫৩ হাজার টন কয়লা। অর্থাৎ, মজুত ওই কয়লা দিয়ে পুরো দু’দিনও স্বাভাবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে না। কালীপুজোর আগে যথেষ্ট পরিমাণে কয়লা না পেলে দীপাবলীতে যে ফের সমস্যা হতে পারে, তা আগাম জানিয়ে রেখেছেন নিগম-কর্তারা।
এ দিকে, ইস্টার্ন কোল ফিল্ডস লিমিটেড (ইসিএল)-কে যে ৬০ কোটি দেওয়ার কথা হয়েছিল, সেই সংক্রান্ত ফাইলটি এ দিন অর্থ দফতরের কাছ থেকে চলে এসেছে বিদ্যুৎ দফতরে। আজ, মঙ্গলবারই নিগম ওই টাকা হাতে পেয়ে যাবে বলে বিদ্যুৎ কর্তারা জানিয়েছেন। তবে এতে নিগমের অবস্থার কোনও উন্নতি হবে না বলে জানিয়েছেন সংস্থার কর্তারা। এক নিগম কর্তা বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম ১০০ কোটি টাকার ভর্তুকি, পেলাম অল্প সুদে ৬০ কোটি টাকা ঋণ। এখন মাসুল বাড়িয়ে আয় না বাড়ালে ঋণ শোধ দেব কেমন করে?”
নিগম কর্তারা এই প্রশ্ন তুললেও বিদ্যুতের মাসুল বাড়ানো নিয়ে বণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে এ দিন তোপ দাগল বিদ্যুৎ মাসুল সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনাল। হুগলি চেম্বার অফ কমার্স ও ইস্টার্ন ইন্ডিয়া টেক্সটাইলস অ্যাসোসিয়েশন সোমবার জানায়, মাসুল বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তারা নালিশ করেছিল ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে, কমিশন ২০১০-১১ সালের জন্য বণ্টন সংস্থার যে মাসুল বাড়িয়েছিল, তা বাতিল করা হচ্ছে। তারা আরও বলেছে, সব তরফের মতামত জেনেই যেন মাসুল সংশোধনের প্রস্তাব বিবেচনা করা হয়। এই দুই বণিকসভার দাবি, এই নির্দেশের পর বণ্টন সংস্থার গ্রাহকদের মাসুল ইউনিট-প্রতি ৭২ পয়সা করে কমেছে। নতুন করে মাসুল সংশোধনের প্রস্তাবও জমা দেয়নি বণ্টন কোম্পানি।
হুগলি চেম্বারের প্রতিনিধি সন্দীপ পোদ্দার ও অন্য সংস্থার প্রতিনিধি পি কে পাতোদিয়া সোমবার বলেন, হাওড়া-হুগলি জেলায় তাঁদের যে ১১৩টি সদস্য শিল্পসংস্থা রয়েছে, সেখানে অন্তত ১৩ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন। বণ্টন সংস্থা আবারও মাসুল বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। মাসুল বাড়লে অনেক কারখানাই বন্ধ হয়ে যাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা। |