মাওবাদীদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পুলিশে চাকরির আবেদন করা নিয়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে জঙ্গলমহলে। এক সময়ে পুলিশ-বয়কট করেছিল যে লালগড়, এখন সেখান থেকেও বিস্তর আবেদন জমা পড়ছে পুলিশে চাকরির আশায়!
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে প্রথম বার জঙ্গলমহলে এসেই পুলিশের বিভিন্ন পদে দশ হাজার নিয়োগের ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পুলিশে সেই নিয়োগ ছত্তীসগঢ়ের ‘সালওয়া জুড়ুমের’ অনুকরণে ‘দমনের নতুন হাতিয়ার হতে চলেছে’ বলে প্রচারে নামে মাওবাদীরা। গ্রামে-গ্রামে রাতের অন্ধকারে এ নিয়ে বৈঠক করে লোকজনকে হুঁশিয়ারিও দেয় তারা। তার পরেও হোমগার্ড ও এনভিএফের পাঁচ হাজার পদের জন্যে ইতিমধ্যেই ৪১ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া পুলিশ জেলার মাওবাদী প্রভাবিত ২৮টি থানা এলাকায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীর কথায়, “খুনি-সন্ত্রাসকারীদের রক্তচক্ষুকে মানুষ উপেক্ষা করছেন। জঙ্গলমহলের যুবশক্তি যে পুলিশের পেশায় ভরসা পাচ্ছেন, তার প্রমাণ মিলেছে।”
আগামী ২০ অক্টোবর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত আবার জুনিয়র কনস্টেবলের পাঁচ হাজার পদের জন্য আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে। রেশনকার্ড, ভোটারকার্ড ও বসবাসের শংসাপত্রের যে কোনও একটি দেখিয়ে স্থানীয় থানা থেকেই আবেদনপত্র সংগ্রহ ও সেখানেই তা জমা করা যাবে। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, সংবাদপত্রে সে সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর থেকেই প্রতিদিন দলে দলে যুবক থানায় খোঁজ নিতে আসছেন। শালবনি থানার এক পুলিশকর্মী বলেন, “কী ভাবে আবেদন করতে হবেএখন প্রতিদিনই তা নিয়ে নানা জনকে আমরা পরামর্শ দিচ্ছি।”
রাজ্য পুলিশের কর্তাদের দাবি, পুলিশ সম্পর্কে জঙ্গলমহলের যুব সম্প্রদায়ের মনোভাবে ব্যাপক ‘পরিবর্তন’ ঘটেছে। এ জন্য ‘জঙ্গলমহল ফুটবল প্রতিযোগিতা’র ভূমিকা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করছেন তাঁরা। পুলিশ ও রাজ্য ক্রীড়া দফতরের যৌথ ব্যবস্থাপনায় ৬০০-রও বেশি ক্লাবকে নিয়ে পুজোর আগে মাস দেড়েক ধরে জঙ্গলমহলে চলেছিল ওই প্রতিযোগিতা। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ওই প্রতিযোগিতার সূত্র ধরেই পুলিশ চাকরির আগ্রহও তৈরি হয়েছে।
জঙ্গলমহলের যুব-সম্প্রদায় অবশ্য ভিন্ন মত। বেলপাহাড়ির জিতেন হাঁসদা, বাঁশপাহাড়ির বচন সর্দারদের মতো অনেকেরই প্রশ্ন, “এলাকায় চাষ শুধু বর্ষার সময়ে। তা-ও আবার অনাবৃষ্টি-অতিবৃষ্টি আছে। সারা বছর পেট চালাতে হলে ভিন্ জেলায় খেতমজুর হিসেবে খাটতে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। তার চেয়ে পুলিশের চাকরি পেয়ে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে লাগতে পারলে ক্ষতি কী!”
লালগড়ের ধরমপুর অঞ্চলের সাগেন হেমব্রম, ঝাড়গ্রামের সাপধরা অঞ্চলের মিন্টু শবর কিংবা শালবনির রঞ্জিত মাহাতোরা এতটাই ‘উৎসাহিত’ যে এনভিএফ এবং হোমগার্ড পদে আবেদন করার পরে তাঁরা এ বার জুনিয়র কনস্টেবল পদেও আবেদন করবেন বলে ঠিক করেছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশে চাকরি-প্রার্থী এক যুবক আবার বলেছেন, “পেটে খেলে সব সয়। খেতেই যদি না পাই, কোনও দল কি খাওয়াবে?” |