শনিবার ঝাড়গ্রামের সভা থেকে মাওবাদীদের সাত দিনের চরম সীমা দেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আজ, মঙ্গলবার মাওবাদী-রাজ্য সরকার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা তাঁর আরও এক বার মাওবাদীদের সুযোগ দেওয়ার মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।
শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা ছিল সাত দিনের মধ্যে মাওবাদীদের জানাতে হবে, তারা হত্যা বন্ধ করে রাজ্য সরকারের সঙ্গে শান্তি-আলোচনা করতে চায় কিনা। মাওবাদীরা হত্যা বন্ধ না করলে সরকার কড়া হবে। ওই কড়া বার্তা দেওয়ার পাশাপাশিই আজ মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চাইছেন, তিনি শান্তি-আলোচনা এবং গণতন্ত্র রক্ষায় যথার্থই ‘আন্তরিক’।
মাওবাদীরা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘কৌশল’-এ চাপে পড়ে আরও বড় ‘গণতান্ত্রিক’ সাজার চেষ্টা শুরু করেছে। রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং তার অন্যতম স্তম্ভ পুলিশের বিরুদ্ধেই মাওবাদীদের ‘যুদ্ধ’। অথচ, এখন সেই পুলিশকর্মীদের প্রতিই তাঁরা ‘সহানুভূতি’ দেখাচ্ছেন। মাওবাদী নেতা আকাশের নামে দেওয়া বিবৃতিতে শিলদা আইআরবি ক্যাম্পের ৭ জন জওয়ানকে সাসপেন্ড করার এবং আরও ২০ জনকে প্রাথমিক ভাবে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা করা হয়েছে। তাঁদের কাজে ফের বহালের দাবিও তোলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর মাসে অনশন আন্দোলন করার জন্য ওই জওয়ানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যদিও প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই জওয়ানরা সাসপেন্ড হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী ডিজি-কে বলেছিলেন, শাস্তিপ্রাপ্তরা কৃতকর্মের জন্য ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের কাজ করবেন না বলে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি
তাঁদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে রাজি আছেন। কিন্তু ডিজি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ওই জওয়ানরা তাতে রাজি হননি। তখন মুখ্যমন্ত্রী ডিজি-কে বলেন, তা হলে তাঁর আর কিছু করার নেই। সে ক্ষেত্রে সাসপেন্ড করার নির্দেশ বহাল রাখতেই হবে।
পাশাপাশিই আকাশের নামে ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছেপুলিশকর্মীরা সময়মতো ছুটি, বিশ্রাম পান না। পরিবারের সঙ্গে তাঁদের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। এ সবের জন্য জঙ্গলমহলে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা মানসিক অবসাদে ভুগছেন। অথচ, মমতার সরকার নিচুতলার পুলিশকর্মীদের ওই সমস্ত সমস্যা অনুধাবন না করে আইপিএসদের চোখ দিয়ে সেগুলি দেখছে। কিন্তু ঘটনা হল, নিচুতলার পুলিশকর্মীরা যে যাবতীয় সমস্যা সহ্য করে নেহাতই অন্নসংস্থানের জন্য চাকরি করেন, রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করেন নাসে কথা জেনেও ‘বিপ্লব’-এর স্বার্থে তাঁদেরই হত্যা করেন মাওবাদীরা। আবার এখন মমতার বিরোধিতা করার স্বার্থে সেই নিচুতলার পুলিশদের জন্যই তাঁদের ‘চোখের জল’ ফেলতে তত্ত্বে আটকাচ্ছে না! যার ফলে মমতার বিরুদ্ধে মাওবাদীদের তোলা ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগ তাঁদের দিকেই ব্যুমেরাং হচ্ছে হলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা।
অন্য দিকে, নন্দীগ্রাম সংক্রান্ত ৩৫টি মামলা প্রত্যাহার করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে বন্দি মুক্তি কমিটি। যাদের অনেক সদস্যই সরকার এবং মাওবাদীদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করছেন। সোমবার মহাকরণে কমিটির প্রতিনিধিরা নন্দীগ্রাম সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলাগুলি নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানেই ওই সিদ্ধান্ত হয়।
কমিটির চেয়ারম্যান তথা বিচারপতি মলয় সেনগুপ্ত জানান, নন্দীগ্রাম সংক্রান্ত ২০২টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে এ দিন বাছাই করা ৫০টি মামলা পর্যালোচনা করে ৩৫টির ক্ষেত্রে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ধর্ষণ, খুন, খুনের চেষ্টা ইত্যাদি সংক্রান্ত বাকি ১৫টি মামলা নিয়ে কমিটি এ দিন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। ২ নভেম্বর বন্দি মুক্তি কমিটির প্রতিনিধিরা নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলাগুলি নিয়ে বৈঠক করবেন।
|
বাহিনী চেয়েছে রাজ্য: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
এর আগে জঙ্গলমহলের গিয়ে মাওবাদীদের সাত দিন সময় দিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’দিন বাদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, তাদের কাছ থেকে দু’ব্যাটেলিয়ন (বা প্রায় দু’হাজার জওয়ান) কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, সাত দিনের সময়সীমা পেরোলেই জঙ্গলমহলে নতুন করে অভিযান শুরু করবে বাহিনী। মন্ত্রকের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।” মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, অভিযান শুরু হলেই দুই ব্যাটেলিয়ন কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হবে। |