দীর্ঘদিন ধরে ঠিকমতো সংস্কার না হওয়ায় বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া বাইপাস রাস্তাটি খানা খন্দে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তার খানা খন্দ জলে ভরে যায়। ফলে গাড়ির চাকায় জল কাদা ছিটকে রাস্তায় পথচারিদের পোশাক নষ্ট হচ্ছে। খানা খন্দে পড়ে কিছু গাড়িও উল্টে যাচ্ছে। তাই মালবাহী অনেক গাড়ি দুঘর্টনা এড়াতে বিষ্ণুপুর শহরের ভিতরে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছে। তাতে শহরের যান সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে।
সকালে বাজার হাট করার সময় তো বটেই, দিনের অন্যান্য সময়েও জনবহুল পোকাবাঁধের পাড় বা চকবাজার, বোলতলা, বাহাদুরগঞ্জ যানজটে জেরবার হয়ে থাকে। বাসিন্দারা যাতায়াত করতে হিমশিম খান। শহরের ভিতরে যাত্রীবাহী বাস ও ছোট গাড়ি নিয়ে চালকেরাও সমস্যায় পড়েন। এই যানজটে আটকে পড়ায় অনেকেই গন্তব্যে দেরিতে পৌঁছাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁদের আক্ষেপ, প্রশাসনের কর্তাদের চোখের সামনে দিনের পর দিন এই সমস্যা চলছে, তবুও প্রশাসন উদাসীন। |
বিষ্ণুপুর পুরসভার পুরপিতা তৃণমূলের দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাইপাস রাস্তা বেহাল বলেই শহরের ভিতর যানজট বেড়ে গিয়েছে। বাইপাস রাস্তা সংস্কারের নামে তালিতাপ্পা মারা হয়। আমূল সংস্কার করা হয় না। তা হলে যানজট অনেকটাই কমে যাবে।” তিনি জানান, রাস্তাটির দায়িত্বে রয়েছে পূর্ত দফতর। তাদের রাস্তাটি সংস্কার করতে বলা হয়েছে।
দক্ষিণেশ্বর থেকে দ্বারকেশ্বর নদীতে বালি নিতে আসা লরির চালক রামপ্রকাশ যাদব ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “বাইপাস রাস্তার যা অবস্থা, যে কোনও সময় গাড়ি উল্টে যেতে পারে। তা ছাড়া গর্তে চাকা পড়ে এমনিতে গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে। আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। শহরে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে বাধ্য হচ্ছি। তেল খরচ বাড়লেও জীবন বাঁচাতেই এই পথ ধরতে হচ্ছে আমাদের।”
বাইপাসের কাঁটানধার থেকে সোনামুখী মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা ভয়াবহ। খারাপ রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে কয়েক মাস আগে স্থানীয় একটি কারখানার কর্মীবাহী বাস উল্টে যায়। কয়েক জন জখম হন। পরিবহণ কর্মীরা জানিয়েছেন, এই রাস্তায় খানাখন্দে পরে মালবাহী গাড়ির চাকা পাংচার হচ্ছে। তবুও পূর্ত দফতরের নজর নেই বলে তাঁদের ক্ষোভ।
ওই রাস্তায় যাতায়াত করেন রামসাগর, দ্বারিকা, চাকদহ ইত্যাদি গ্রামের বাসিন্দারা। বাঁকুড়া শহর বা অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারা গাড়ি ও মোটরবাইক নিয়ে বিষ্ণুপুর শহরের মধ্যে না ঢুকে বাইপাস রাস্তা দিয়ে অন্যত্র যেতেন। তাঁরাও রাস্তার বেহাল অবস্থার জন্য সমস্যায় পড়েছেন। রামসাগর গ্রামের বাসিন্দা সুদেব বাগদি বলেন, “মাঝে মধ্যে কাজের জন্য জয়পুর যাই। বাইপাস রাস্তা দিয়ে গেলে কম রাস্তা পেরিয়ে কিছুটা তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়। কিন্তু, বর্ষার পরে বাইপাস রাস্তার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। গাড়ি চালানোই যায় না। বাধ্য হয়ে ঘুর পথে বিষ্ণুপুর শহর হয়ে এখন জয়পুরে যাই।” এই পরিস্থিতির জন্য দোকান, বাজার, স্কুল, কলেজে যেতে অসুবিধায় পড়ছেন বাসিন্দারা। চকবাজারে আসা গোপাল নাগ বলেন, “এমনিতেই বিষ্ণুপুর শহরের রাস্তা সংকীর্ণ। তার উপরে বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি শহরের রাস্তায় ঢুকে পড়ায় দমবন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাজারে গেলে চিন্তা হয়, এই বোধ হয় চাপা পড়ে গেলাম।” সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বিষ্ণুপুর মহকুমা পূর্ত দফতরের সহকারি বাস্তুকার সঞ্জয়কুমার সিং। তিনি বলেন, “রাস্তাটি খুবই খারাপ হয়ে পড়েছে। পুজোর আগে প্রাথমিকভাবে বাইপাস রাস্তার কয়েকটি জায়গায় সংস্কারের কাজ হয়েছে। এখনও সেই কাজ চলছে। শীঘ্রই পূর্ণদ্যোমে সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।” |