|
|
|
|
আসছে দীপাবলি |
মহার্ঘ সরঞ্জাম, লাভ নিয়ে সংশয়ে শিল্পীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মেদিনীপুরে দীপাবলির ঐতিহ্য দেওয়ালি পুতুল। জেলা জুড়েই বাড়িতে বাড়িতে জ্বলে ওঠে রংবেরঙের পুতুল-সদৃশ এই প্রদীপ। সাধারণ মাটির প্রদীপ, তুবড়ি তৈরির পাশাপাশি চলছে দেওয়ালি পুতুল তৈরির কাজও। কেউ পুতুলে রং করছেন। কেউ বা চোখ আঁকছেন। কিন্তু মৃৎশিল্পীদের মন ভাল নেই। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের দাম বেড়েছে। সেই অনুপাতে দেওয়ালি পুতুলের দাম বাড়েনি যে। তাই কুমোরপাড়া জুড়েই কমবেশি ক্ষোভ রয়েছে। সঙ্গে লাভ নিয়ে সংশয়। শিল্পীদের বক্তব্য, বাজারে যে চাহিদা নেই তা নয়, তবে কেউই বাড়তি দাম দিয়ে পুতুল কিনতে চাইছেন না। কুমোরপাড়ার গৌতম দাসের কথায়, “পুতুল তৈরির জন্য মাটি, বালি, রঙের মতো নানা উপকরণ লাগে। প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেড়েছে। কিন্তু দেওয়ালি পুতুলের দাম বাড়েনি। ৮-১০ টাকার পুতুলই বেশি বিক্রি হয়। ছোট পুতুল বানিয়ে তেমন লাভ হয় না।” এই শিল্পীর আক্ষেপ, “বহু দিন ধরেই বাড়ির লোকজন এই কাজে জড়িত। তাই, কাজ ছাড়তেও পারি না। বিকল্প কাজের সুযোগও কম।” |
 |
দীপাবলি আসন্ন। আলোর উৎসবের প্রস্তুতি চলছে সর্বত্র। ব্যস্ততা তুঙ্গে
মেদিনীপুরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কুমোরপাড়াতেও। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
একটা সময় দীপাবলির কিছু দিন আগে থেকেই কুমোরপাড়ায় উপচে পড়ত ভিড়। বড়দের হাত ধরে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও আসত। দেদার বিক্রি হত দেওয়ালি পুতুল। মাটির প্রদীপের চাহিদাও ছিল যথেষ্ট। কয়েক বছর হল এ সবের চাহিদা কমেছে। কুমোরপাড়ার প্রদীপ দাসের কথায়, “দেওয়ালি পুতুল-প্রদীপ ছেড়ে মানুষ নানা রঙের বৈদ্যুতিক আলোর দিকে ঝুঁকছে। টুনির বদলে এখন এসেছে এলইডি বাল্ব। তবে গত কয়েক বছর বাজারে যে মন্দা ছিল, তা কেটেছে। দেওয়ালি পুতুল-মাটির প্রদীপের বিক্রি বেড়েছে।”
মেদিনীপুরের কুমোরপাড়ায় ৪০টি পরিবারের বাস। বছরভরই মাটির সরঞ্জাম তৈরি করেন এঁরা। তবে নজর থাকে দীপাবলির এই সময়টার দিকে। বর্ষার আগেই মাটি ও বালি মিশিয়ে দেওয়ালি পুতুল তৈরি হয়। ইদানীং উপকরণের দাম বেড়েছে। কারিগরেরা জানাচ্ছেন, আগে যেখানে ছোট এক লরি মাটির দাম ছিল ৭০০-৮০০ টাকা, এখন তা দু’হাজারের কমে মেলে নামুশকিল। গৌতম দাস বলেন, “অনেক সময় বাড়তি টাকা দিয়েও ভাল মাটি পাওয়া যায় না। অথচ ভাল মাটি ছাড়া কাজ শুরু করা অসম্ভব।”
কুমোরপাড়ার কচিকাঁচারাও দেওয়ালি পুতুল তৈরিতে ব্যস্ত। বছর সতেরোর সঙ্গীতা দাসের কথায়, “বাড়ির বড়রা পুতুল বানান। আর আমরা পুতুলে রং করি।” এদের হাতের ছোঁয়ায় প্রাণ পায় দেওয়ালি পুতুল। লাল-নীল-সবুজ নানা রঙে সেজে ওঠে জ্বলার অপেক্ষায়। আর শিল্পীরা থাকেন সামান্য লাভের আশায়। সংসারের অন্ধকারে সেটাই যে আলোর দিশা। |
|
|
 |
|
|