মাটি কাটায় বিপন্ন রাজাপুর
গ্রাম-গিলতে এগিয়ে আসছে নদী।
এই বুঝি বাড়িটাও চলে যাবে ভাগীরথীর কোলে। আতঙ্কে ঘুম ভুলেছে গ্রামবাসী। জমি-বাড়ি সবই বুঝি গিলে খাবে নদী। তবু ভিটে-মাটি আঁকড়ে ধরে রেখেছেন গ্রামবাসীরা। বিভিন্ন দফতরে মাথা কুটেও মেলেনি সাড়া। শুধু দিনভর মহুলার রাজাপুরের মানুষ শুনেছেন নিশ্চুপে ভেঙে পড়ছে নদী পাড়।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভাঙন ঠেকাতে প্রশাসনের তরফে কোনও উদ্যোগ তো হচ্ছেই না, উপরন্তু নদী পাড়ের ইটভাটায় অবাধে চলছে মাটি কাটার কাজ। নদী তাই ক্রমাগত গ্রামের ‘অধিকার’ নিচ্ছে।
ভাঙনের আতঙ্কে গ্রামবাসীদের দুশ্চিন্তা দিন দিন বাড়লেও ছেদ পড়েনি ইটভাটার কাজে। সোমবার সকালেও মহুলার রাজাপুরের হাজরা পাড়ায় প্রাকশ্যেই চলছে মাটি কাটা। সোমবার সকালেও ২টো ট্রাক্টর বোঝাই করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে গ্রামের বাইরে।
গ্রামবাসী বুধুমনি হাজরা বলেন, “টানা দু’বছর ধরে ভাগীরথীর ভাঙন চলছে। দিন দিন নদী আরও এগিয়ে আসছে। আমরা পঞ্চায়েতকে এ ব্যাপারে জানিয়েছি। তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার উপরে ইট ভাটার মাটি কাটার কাজ চলছে। নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে বড় বড় ট্র্যাক্টর বোঝাই করে তা চলে যাচ্ছে শহরের বাড়ির ইট তৈরিতে। এ দিকে নদীকে ঠেকানো যাচ্ছে না। এর পরে পাড় ভাঙলেই আমার বাড়িটাও নদী গিলে খাবে। বর্ষার রাতে ঘুম আসে না। শ্বশুরের স্মৃতি বলতে এই ভিটেটুকুই। তাই আঁকড়ে ধরে বসে আছি।”
মহুলায় নদী পাড়ে চলছে মাটি কাটা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
মহুলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের কাবেরী ঘোষ বলেন, “নদী ভাঙছে শুনেছি।” দেখতে যাননি? অস্বস্তিতে পড়ে তাঁর কবুল, “দেখি, আলোচনা করে একটা ব্যবস্থা নিতে হবে।” এই প্রসঙ্গে বেলডাঙা ব্রিক ফিল্ড অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ইলিয়াস মোল্লা বলেন, “রাজ্য ও জেলাস্তরে নদী পাড় থেকে এই ভাবে মাটি কাটা সম্পূর্ণ বেআইনি। আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের কেউই এর সঙ্গে যুক্ত নয়। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই কাজ করছে।” জেলা সেচ দফতরের আধিকারিক অসিত দত্ত বলেন, “নদীর পাড় থেকে ইটভাটার জন্য মাটি কেটে নেওয়ার কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ আমি কিন্তু পাইনি। তবে ভাঙনের ব্যাপারে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসারে আমরা অর্থ দফতরের কাছে পাঠিয়েছি। টাকা মঞ্জুর হলেই ওই নদীবাঁধ বাঁধানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “জমি মালিকদের নির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়া গেলে মাটি কাটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদের আধিকারিকদের পক্ষে সতর্ক করা ছাড়া আর কিছুই করা আপাতত সম্ভব নয়।”
কারা কাটছে মাটি? দিন ভর মহুলার রাজাপুরের পাড় কেটে চলা ওই ইটভাটার শ্রমিকেরা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আর ইটভাটার পক্ষে মাটি কাটার কথা স্বীকার করা হলেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছুই বলতে চায়নি তারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.