নির্মল আলোয় দীপাবলির উদ্যাপন চাইছে বাঙালি।
দূষণহীন মোমবাতির চাহিদা তাই তুঙ্গে। এই মোমবাতি আলো ছড়ায়, কোনও ভাবেই দূষণ নয়। পরিবেশ সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দীপাবলিকে নির্মল করে তোলার প্রবণতাও। আর ওই সুগন্ধী ভেষজ মোমবাতি তৈরি করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। তাদের নিজস্ব ওয়ার্কশপে যে মোমবাতি তৈরি হয়, তা চাহিদার তুলনায় নিতান্তই সামান্য। তাই বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও বেশি মোমবাতি তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যে সব সাদা বা রঙিন মোমবাতি দীপাবলিতে ঘরে ঘরে জ্বালানো হয়, তাতে দূষণের মাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দত্ত বললেন, “সাধারণ মোমবাতিতে রাসায়নিক রং ব্যবহার করা হয়। সে মোমবাতি জ্বালালে তার থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। আর ঘরের মধ্যে জ্বালানো হয় বলে মোমবাতি আরও বিপজ্জনক। ওই গ্যাস বয়স্ক ও শিশুদের জন্য ক্ষতিকারক। তা মাথায় রেখেই আমরা ভেষজ রং ব্যবহার করে মোমবাতি তৈরির কাজ শুরু করি।” বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মোমবাতি তৈরি হয়, তা মূলত গবেষণার কাজ হিসেবে। বাজারের চাহিদা মেটানোর সাধ্য নেই তার। তাই তাঁরা কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভেষজ মোমবাতি তৈরির ব্যবস্থা করেছেন।
|
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হওয়া ভেষজ মোমবাতি। ছবি: রাজীব বসু |
ওই মোমবাতি কেবল দূষণই কমায় না, জ্বলেও বেশি ক্ষণ। মোমবাতি তৈরির জন্য ব্যবহৃত মোমে তেলের ভাগ যত কম থাকে, তা ততই শুদ্ধ ও নির্মল হয়। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, “আমরা উচ্চমানের মোম ব্যবহার করি। তাই আমাদের মোমবাতি জ্বলে অনেক বেশি সময় ধরে। এবং পুরোটা। গলে গলে পড়ে নষ্ট হয় না।” ফুলের পাপড়ি, ফলের বীজ ইত্যাদি থেকে তৈরি জৈব রং তাঁরা ব্যবহার করেন রঙিন মোমবাতি তৈরির জন্য।
সিদ্ধার্থবাবু জানান, চারটি আকারে ওই মোমবাতি পাওয়া যাচ্ছে। আকার অনুযায়ী এক থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত জ্বলে মোমবাতি। স্বাভাবিক ভাবেই সাধারণ মোমবাতির তুলনায় এর দাম কিছুটা বেশি। ওই মোমবাতির কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। পরিবেশবন্ধু এবং সুগন্ধী ওই মোমবাতির চাহিদা থাকলেও বাণিজ্যিক পরিকাঠামো না থাকায় তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে না বিশ্ববিদ্যালয়।
সহ-উপাচার্য সেই দুর্বলতার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “আমরা এই বছর দেড় লক্ষেরও বেশি মোমবাতি তৈরি করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওয়ার্কশপের পাশাপাশি কোন্নগরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের কারিগরি সহায়তা নিয়ে মোমবাতি তৈরি করছে। ওই সংগঠন বেশ কিছু স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীকে নিয়োজিত করেছে মোমবাতি তৈরির জন্য।”
কেবল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সংস্থাই সুগন্ধী মোমবাতি তৈরি করে না। হাওড়ার কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীও নির্মল মোমবাতি তৈরি করছে। এমনই এক স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর বাগনান এবং টিকিয়াপাড়ার তিনটি ইউনিট দীপাবলির মরসুমে দেড় থেকে দুই লক্ষ মোমবাতি যোগান দেয় বাজারে। ওই সংস্থার কর্ণধার ভাস্কর মিত্র বলেন, “আমরা অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন রঙের ফুলের পাপড়ি থেকে আবির তৈরি করি। এখন মোমবাতিও করছি। তবে ফুলের রং যেহেতু জল দিয়ে তৈরি করতে হয়, তাই ওই রং আমরা মোমবাতিতে ব্যবহার করতে পারি না। মোমবাতিতে আমরা সিসাহীন রং ব্যবহার করি। আমাদের তৈরি মোমবাতি সুগন্ধীও বটে।” ভাস্করবাবুর দাবি, তাঁদের তৈরি একটি তিন গ্রাম ওজনের মোমবাতি জ্বলে টানা ৪৫ মিনিট। মোমও নষ্ট হয় না। এই মোমবাতি যাঁরা তৈরি করেন, তাঁরা সকলেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে প্রান্তিক মহিলা।
নির্মল মোমবাতি তৈরির উদ্যোগ দূষণ রোধের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার পাশাপাশি প্রান্তিক মহিলাদের স্বয়ম্ভরতার পথও দেখাচ্ছে। |