ডানকুনি ও ফুরফুরাশরিফের মধ্যে প্রস্তাবিত রেল যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য জমি সংগ্রহ এবং জমি-মালিকদের ক্ষতিপূরণের চেক বিলি শুরু হল একই সঙ্গে।
সোমবার হুগলির মশাটে পূর্ব রেলের সাইট-অফিসে ওই কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫ জন জমি-মালিকের হাতে চেক তুলে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ঘোষণা মতো, ওই জমি-মালিকদের হাতে তাঁদের পরিবারপিছু এক জনের চাকরির ফর্মও তুলে দেওয়া হয়। জমি মালিকেরা চেক নিয়ে তাঁদের জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র তুলে দেন রেল কর্তৃপক্ষের হাতে। এই প্রকল্পের জন্য বিঘাপ্রতি ২ লক্ষ টাকা দাম দেওয়া হচ্ছে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
গত বছর রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডানকুনি থেকে ফুরফুরাশরিফ পর্যন্ত ১৯.৫ কিলোমিটার পথে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ওই বছরেরই ১৩ এপ্রিল তিনি ফুরফুরায় প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। |
ফুরফুরাশরিফে প্রস্তাবিত স্টেশনের মডেল। ছবি: দীপঙ্কর দে। |
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ডানকুনির দিকে তাদের হাতে ১.৪ কিলোমিটার জমি রয়েছে। বাকি জমি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ডানকুনি এবং ফুরফুরাশরিফ দু’দিকের দুই প্রান্তিক স্টেশন ছাড়া ১৯.৫ কিলোমিটার পথে আরও চারটি স্টেশন হবে। সেগুলি হল চণ্ডীতলা, কুমিরমোড়া, কৃষ্ণরামপুর-জঙ্গলপাড়া এবং মশাট। গোটা প্রকল্পের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ১৪৮.৮ কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই রেল বিকাশ নিগমকে প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ৯৯ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্পটি যাতে দ্রুত রূপায়ণ করা যায়, তার জন্য বর্তমান রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর কাছে তদ্বির করেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে, প্রথম দিনের চেক বিলি ও জমি সংগ্রহের কাজ একেবারে নির্বিঘ্নে হয়নি। কেউ কেউ জমির দামের ফারাক রয়েছে বা জমির কম দাম দেওয়া হচ্ছে এমনই সব অভিযোগ তুলে চেক নেননি। অনেকে আবার অভিযোগ করেন, এ দিন থেকে যে চেক বিলি হবে, তা ঠিকমতো জানানো হয়নি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে না থাকায় তাঁদের ফিরে যেতে হয়।
এ দিন ওই প্রশাসনিক কাজের শুরুতে যে কিছুটা সমস্যা হয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন রেলের কর্তারা। তাঁদের আশ্বাস, দ্রুত কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুলত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। নির্দিষ্ট ভাবে আপত্তি জানিয়ে আবেদন করলে তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেল কর্তাদের দাবি, গত বছর প্রকল্পের কথা ঘোষণা হওয়ার পরে ওই এলাকায় জমির যে দাম ছিল, সেই দামই দেওয়া হচ্ছে জমির মালিকদের।
প্রকল্পের মুখ্য আধিকারিক অনুজ মিত্তল বলেন, “এখানে মানুষের যেমন উৎসাহ দেখছি, তাতে প্রকল্প রূপায়ণে কোনও সমস্যা হবে না। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং সাধরাণ মানুষ যথেষ্ট সহযোগিতা করছেন। কিছু ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি হচ্ছে। সে সব তথ্য লিপিবদ্ধও করা হচ্ছে। জমি-মালিকরা নির্দিষ্ট ভাবে আপত্তির কথা জানালে সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া হবে।”
এ দিন মূলত, ফুরফুরা এলাকার জমির-মালিকদের থেকে জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র নিয়ে চেক বিলি করা হয়। এ ব্যাপারে ফুরফুরায় রেলের একটি কাউন্টার থেকে ঘোষণাও করা হয়। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কাল, বুধবার পর্যন্ত এই কাজ চলবে। সকাল ১০টা থেকে সাইট-অফিস খোলা থাকবে। ওই এলাকার মোট ১৯১ জনের থেকে জমি নিয়ে তাঁদের হাতে চেক তুলে দেওয়া হবে। এ নিয়ে সম্প্রতি শুনানি হয় কয়লাঘাটায় পূর্ব রেলের সদর দফতরে।
রেলের এই প্রকল্পের জন্য ২১ শতক জমি দিয়ে এ দিন চেক নিয়েছেন ফুরফুরার বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম। তিনি বলেন, “চেক পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি। আমি চাকরিও চাই। সে জন্য বন্ডে (ফর্মে) সই করেছি। রেলকর্তারা কোনও অসুবিধা হবে না বলে জানিয়েছেন।” নিজের ১৫ কাঠা জমি দিতে রাজি ফুরফুরার ধাড়াপাড়ার অশোক সাঁতরা। কিন্তু ওই দাম নিতে তাঁর আপত্তির কথাও জানিয়েছেন।
তাঁর বক্তব্য, “প্রকল্পের কথা ঘোষণা হওয়ার পরে এখানে এক বছরে জমির দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমরা কম দামে জমি দেব কেন? আমরা চাই এখানে রেলের প্রকল্প হোক। আমাদের উপযুক্ত দামও দেওয়া হোক।” জমির দাম নিয়ে একই রকম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আর এক স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ সফিকুল ইসলাম এবং তাঁর মতো আরও কয়েক জন।
স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় অবশ্য ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা রেলকে জানানোর অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, “এক সময়ে এখানে সাইট-অফিস ভাঙচুর হয়েছিল। এ দিনও দেখলাম, কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের বলছি, সমস্যার কথা রেলকে জানান।” |