বাংলাদেশের সঙ্গে জমি হস্তান্তরে লাভই হয়েছে, দাবি গগৈয়ের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
জমি হস্তান্তর বিতর্ক সামলাতে আজ দিনব্যাপী অসম বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন চলল। বিরোধীদের আপত্তির জবাবে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সাফ জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে জমি হস্তান্তর চুক্তি বাতিল করা সম্ভব নয়। চুক্তি বাতিল হলে তা অসমের স্বার্থের পরিপন্থী হবে। গগৈয়ের দাবি, জমি হস্তান্তরে পরোক্ষে লাভবানই হয়েছে অসম। একধাপ এগিয়ে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা অভিযোগ তোলেন, আলফা সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়ার উস্কানিতেই জমি হস্তান্তর চুক্তি নিয়ে হইচই করছে বিরোধী দলগুলি।
বিধানসভায় আজ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন মন্ত্রী নীলমণিসেন ডেকা। বিরোধী পক্ষের তরফে জমি হস্তান্তর চুক্তির কড়া সমালোচনা করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত, ফণিভূষণ চৌধুরী, প্রশান্ত ফুকনরা। প্রফুল্ল মহন্ত বলেন, “জনগণকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে অসমের জমি বাংলাদেশকে দিয়ে ঠিক করেননি গগৈ। এ বিষয়ে বিধায়কদের মতামত নেওয়া আবশ্যক ছিল। অসমের জনগণকেও নানা রকম পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়ে ঠকানো হচ্ছে।” বিজেপি বিধায়ক প্রশান্ত ফুকন জমি হস্তান্তর নিয়ে সরকারকে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান।
হিমন্ত বিরোধীদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করান। তিনি বলেন, “মহন্ত মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর আমলেই অসমের দুই কিলোমিটার সীমানা বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া বসানো হয়। ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বা র্যাডক্লিফ সীমানা অনুযায়ী অসম আজ অবধি কিছুই পায়নি। এই প্রথম, অসম জমি লাভ করল।” হিমন্তের হিসেব, “মাত্র ১৯৩ একর জমি অসমকে দেওয়ার বিনিময়ে অসম ১২৯৫ একর জমি পেয়েছে। অথচ বিরোধী দলগুলি এই চুক্তি বাতিল করে অসমের ক্ষতি করতে চান।”
গগৈ সরকার তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে, তিন মাসের মধ্যে আসু ১৫৮টি প্রতিবাদ আন্দোলন, বিক্ষোভ, বন্ধ চালিয়েছে। বিরোধীদের এই নেতিবাচক ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন হিমন্ত। বিরোধীদের এই ভূমিকা, বাংলাদেশের ‘বন্ধু’ সরকারকে বিপদে ফেলেছে মন্তব্য করে হিমন্ত বলেন, “চুক্তির পুরো তথ্য প্রকাশ করা বা বিধানসভায় আলোচনা করা শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গের সামিল। কিন্তু, বিরোধীদের চাপে, অসম সরকারকে বাধ্য হয়ে এই কাজ করতে হল। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সাংবাদপত্রগুলি শেখ হাসিনার সমালোচনায় মুখর। অসমকে জমি দিয়ে অসমবাসীদের জন্যই বিপদে পড়লেন হাসিনা।” হিমন্তের অভিমত, আলফার সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়ার ষড়যন্ত্রেই জমি হস্তান্তরের বিষয়টি নিয়ে এত কাটাছেঁড়া হচ্ছে।
গগৈয়ের মতে, কূটনীতি বা বিদেশনীতি, কখনওই, প্রকাশ্যে আলোচনা করে, বা জনগণকে জানিয়ে করা যায় না। সেটি রুদ্ধদ্বার বিষয়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, চুক্তির আগে, তিনি একাধিকবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে রাজ্যবাসীকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে আগে জানাজানি হলে, চিন বা পাকিস্তান বাংলাদেশকে চুক্তি বাতিল করার জন্য চাপ দিতে পারত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পড়শি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা অর্থনৈতিক উন্নতি, যোগাযোগ, সন্ত্রাস দমনের পক্ষে আবশ্যক। চুক্তি করার আগে আলোচনার নিয়ম নেই। নিজের দখলে থাকা কোনও জমি আমি বাংলাদেশকে দিইনি। কেউ তা প্রমাণ করতে পারলে পদত্যাগ করব।” |