কাজে গিয়ে ‘বন্দি’, মুক্তি মিলল রাজ্যের হস্তক্ষেপে
পেটের টানে ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কর্মস্থলে কার্যত ‘বন্দি’ ছিলেন এ রাজ্যের ১৫ জন শ্রমিক। অতিরিক্ত খাটুনি তো ছিলই, প্রাপ্য মজুরিও মিলছিল না। সঙ্গে জুটছিল ‘অত্যাচার’। তাঁদের দুর্দশার খবর পেয়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে সোমবার মুক্তি পেয়েছেন ওই ১৫ জন শ্রমিক।
কর্নাটকের ম্যাঙ্গালোরে কাজ করতে যাওয়া ১৫ জনের মধ্যে ১১ পুরুলিয়ার হুড়া ব্লকের লায়েকডি ও লক্ষ্মণপুর গ্রামের বাসিন্দা। অন্য চার জনের বাড়ি বাঁকুড়ার ছাতনা থানার কাঠারিয়া গ্রামে। পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি ওই ১৫ জনের দুর্দশার কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছিল শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুকে। সোমবার শ্রমমন্ত্রী বলেন, “এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি মুখ্যসচিবের মাধ্যমে কর্নাটকের মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওই রাজ্যের শ্রম দফতরকে সব জানানো হয়। তার পরেই ওই শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়েছে।” এ বার শ্রমিকদের এ রাজ্যে ফিরিয়ে আনার আশ্বাসও দিয়েছেন পূর্ণেন্দুবাবু। তাঁর কথায়, “এটা রাজ্য সরকারের কর্তব্য।”
খেতমজুর সমিতির মুখপাত্র স্বপন গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত ২৩ অগস্ট লায়েকডি, লক্ষ্মণপুর ও কাঠারিয়া গ্রামের ওই ১৫ জন বাসিন্দা ঠিকা শ্রমিক হিসাবে কাজ করার জন্য ম্যাঙ্গালোর যান। এলাকার অনেক যুবকই এ ভাবে ভিন্ রাজ্যে গিয়ে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করেন। এই ১৫ জনও লায়েকডি গ্রামের বাসিন্দা দিবেশ দাসের মারফত বর্ধমানের কুলটি থানা এলাকার ডিসেরগড়ে যান। স্বপনবাবু বলেন, “দিবেশ ঠিকা শ্রমিক সরবরাহকারী এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। তিনি ওই ১৫ জনকে ডিসেরগড়ের এক বাসিন্দার কাছে নিয়ে যান। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ওই ব্যক্তিও শ্রমিক সরবরাহকারী এজেন্ট। ভোলানাথের মাধ্যমেই ওই ১৫ জন ম্যাঙ্গালোরে যান।”
এর পর থেকেই ১৫ জনের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের খুব বেশি যোগাযোগ হয়নি। কেউ কেউ মাঝেমধ্যে ফোন করলেও ‘ভাল আছি’ বলে ফোন কেটে দিতেন। লায়েকডি গ্রামেরই বাসিন্দা আদরি দাসের ছেলে বিষ্ণু রয়েছেন ওই ১৫ জনের দলে। আদরিদেবী বলেন, “আমার ছেলে এক পড়শির বাড়িতে ফোন করেছিল। ফোনেই ওর গলায় ভয়ের সুর স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম। বলছিল, ‘আমি কোনও রকমে কাজের জায়গা থেকে পালিয়ে ফোন করছি। যে ভাবে পারো এখনই আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাও। আমরা ভাল নেই’।” ওই ১৫ জনের অন্যতম বিপ্লব গোপ নামে এক শ্রমিকের কাকা ধনঞ্জয় গোপের কথায়, “আমরা জানতে পেরেছি, ম্যাঙ্গালোরে কাজের জায়গায় ওদের উপরে খুব অত্যাচার হচ্ছিল। সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি ছিল। সামান্য খেতে দেওয়া হত। প্রতিবাদ করলে জুটত গালিগালাজ, মারধর।”
পরিবারের লোকজন খেতমজুর সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করে। লায়েকডির বাসিন্দা তথা খেতমজুর সমিতির স্থানীয় নেতা বিপ্লব মণ্ডলের কথায়, “আমরাও জানতে পারি, ওই ১৫ জনকে ক্রীতদাসের মতো খাটানো হচ্ছে।” তাঁরা সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্বকে সব জানান। স্বপনবাবু বলেন, “আমরা গ্রামের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, ওখানে শ্রমিকদের উপরে নির্যাতন চলছে। ঘুম থেকে দেরিতে উঠলে শ্রমিকদের গায়ে গরম জলও ঢেলে দেওয়া হয়েছে। বাড়ি ফিরতে দেওয়া হচ্ছিল না। ক্রীতদাসের মতো জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছিলেন তাঁরা। মজুরিও দেওয়া হচ্ছিল না।” রবিবার স্বপনবাবুরা শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে লিখিত ভাবে সমস্ত ঘটনা জানান। তাঁর হস্তক্ষেপে এ দিন সকালে কর্নাটকের স্থানীয় পুলিশ ও শ্রম দফতরের প্রতিনিধিরা শ্রমিকদের উদ্ধার করেন।
লায়েকডির যে এজেন্টের মাধ্যমে ম্যাঙ্গালোর গিয়েছিলেন ওই ১৫ জন, সেই দিবেশ দাসের বাড়িতে এ দিন গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মা সমলা দাসের দাবি, “ও-ই তো শ্রমিকদের নিয়ে গিয়েছিল! তাই সব শুনে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। বলেছে, ওদের সঙ্গে নিয়েই ফিরবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.