দলের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ শিবুর পুত্রবধূর, অস্বস্তিতে জেএমএম |
খোদ দলের সর্বময় নেতার পুত্রবধূকে নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা। জেএমএম-এর প্রধান তথা ঝাড়খণ্ড সরকারের সমন্বয় কমিটির কর্তা প্রবীণ নেতা শিবু সোরেনের বিধবা পুত্রবধূ দলের বিরুদ্ধে কলকাঠি নাড়ছেন বলে কানাকানি শুরু হয়েছে।
জেএমএম-এর শীর্ষস্তরের এক নেতাই জানাচ্ছেন, শিবুর জ্যেষ্ঠ পুত্র অকালপ্রয়াত দুর্গা সোরেনের স্ত্রী সীতা দিল্লিতে কংগ্রেসের উঁচুতলার কিছু নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করছেন। রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র শৈলেশ সিন্হাও সরাসরি বলছেন, “সীতা আরও কয়েকজন বিধায়ককে নিয়ে দিল্লিতে দরবার করতে গিয়েছেন।” কাদের সঙ্গে শিবুর পুত্রবধূর কী কথা হয়েছে, তা রাজ্য কংগ্রেসের তরফে ‘জানা নেই’ বলে দাবি করলেও সীতার ‘বিদ্রোহে’ ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস নেতাদের একাংশ রাজ্যে ক্ষমতার খোয়াবও দেখতে শুরু করেছেন। দলীয় মুখপাত্র শৈলেশ বলেন, “কী হলে কী হবে, তা বলা শক্ত। তবে ক্ষমতাসীন জোট সরকার সঙ্কটে পড়লে কংগ্রেস যথাসাধ্য চেষ্টা করবে রাজ্যবাসীকে অকাল ভোটের ঝক্কি থেকে বাঁচাতে।”
তবে শিবুর বৌমার হাত ধরে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের কতটা সুবিধে হবে তা নিয়ে খোদ রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ বালমুচুরই সন্দেহ আছে। বালমুচু বলছেন, “সীতা এবং জেএমএম-এর কয়েক জন বিধায়ক সরকার ওল্টানোর চেষ্টা করলেও কংগ্রেস তাঁদের উপরে খুব একটা ভরসা করছে না। কারা সীতার সঙ্গে আছেন, তা আমি খুব ভাল জানি। এর আগে মধু কোড়ার সরকার ফেলা বা শিবু সোরেন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে সরকার গড়ার চেষ্টায় এই বিধায়কেরা কেউ কেউ সামিল হয়েছিলেন।” সীতা দেবীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি অবশ্য ফোন ধরেননি। |
জেএমএম ছেড়ে সম্প্রতি জেভিএমে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী দুলাল ভুইয়াঁ।
দীপাবলীর আগে তাই ঘরের রং বদল। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী |
মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডার মন্ত্রিসভা গঠনের আগে থেকেই মন্ত্রিত্ব পেতে মুখিয়ে ছিলেন ‘গুরুজি’ শিবু সোরেনের বড় বৌমা সীতা। কিন্তু তখন সে-আশা তাঁর পূরণ হয়নি। জেএমএম-এর সাইমন মরান্ডি, প্রাক্তন মাওবাদী নেতা পোলুস সুরিন, প্রাক্তন মন্ত্রী নলিন সোরেনের মতো কেউ কেউ সীতার পাশে আছেন বলেও রাজনৈতিক মহলের খবর। জেএমএম-এর সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় ভট্টাচার্য এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, “কংগ্রেস আমাদের দলের কোনও কোনও বিধায়ককে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে ওদের কিছুই লাভ হবে না। বর্তমান সরকার তাদের মেয়াদ পূর্ণ করবে।” সম্প্রতি রাজ্যের কিছু মাদ্রাসার অনুদান বন্ধ করা নিয়ে বিজেপি ও জেএমএম-এর বিরোধে দুমকায় মন্ত্রিসভার বৈঠক ভেস্তে গিয়েছিল। কিন্তু পরে শিবু সোরেন স্বয়ং বিবৃতি দিয়ে “সরকারের কোনও সঙ্কট নেই” বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
দিওয়ালির আগে বৌমার ‘গোঁসা’ ছাড়াও ‘গুরুজি’ অবশ্য আর একটি বড় ধাক্কা খেয়েছেন। তাঁর পুরনো সহযোগী তথা প্রাক্তন মন্ত্রী ঝাড়খণ্ডের পোড়খাওয়া বাংলাভাষী নেতা দুলাল ভুইয়াঁও দল ছেড়ে বাবুলাল মরান্ডির ঝাড়খণ্ড বিকাশ র্মোচাও যোগ দিয়েছেন। দল পাল্টানোর সঙ্গে-সঙ্গে দিওয়ালির আগে ঘরদোর নতুন রং করার সময়ে দুলালবাবু জামশেদপুরে তাঁর বাড়ির রংও পাল্টে ফেলছেন। আগে জেএমএম-এর পতাকার গাঢ় সবুজ রং বদলে এখন বাড়িতে জেভিএমের পতাকার হলদে-সবুজ রঙের পোঁচ দেওয়া চলছে। জেএমএম অবশ্য যাবতীয় ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দিতে ‘আত্মবিশ্বাসী’। ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা-নেত্রীদের তুষ্ট করতে রাজ্য খনিজ উন্নয়ন নিগম বা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের শীর্ষপদের মতো ‘কাঙ্খিত’ কোনও পদ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও রাজনৈতিক মহলের একাংশ জানাচ্ছেন। |