অন্ধ্র-মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের হার, কারণ খুঁজছে এনসিপিও |
সংবাদসংস্থা • মুম্বই ও হায়দরাবাদ |
আশা-আশঙ্কার দাঁড়িপাল্লায় শেষ পর্যন্ত ভোট পড়ল আশঙ্কার দিকেই। তাও বিপুল পরিমাণে। হরিয়ানা থেকে মহারাষ্ট্র হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ, লোকসভা এবং বিধানসভার তিন উপনির্বাচনেই হেরে গেল কংগ্রেস। কোথাও ছিল নীতির লড়াই, কোথাও ভাবমূর্তির, কোথাও বা সম্মানের। জাতীয় রাজনীতিতে সঙ্কটের সময়ে কোনও পরীক্ষাতেই ‘পাশ’ করতে পারল না তারা।
হিসার উপনির্বাচনে হার নিয়ে তাও কংগ্রেসের একটা যুক্তি রয়েছে। ওই আসনে আগের বারেও তারা জয় পায়নি। অণ্ণা হজারের প্রভাবের কথাও তুলছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির। কিন্তু সেই হিসাবে মহারাষ্ট্রের হারের ব্যাখ্যা করতে পারছেন না কংগ্রেস নেতারা। পুণের খাড়াকাসলা বিধানসভা কেন্দ্রের লড়াইয়ে রাজ্যের ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক এনসিপির প্রার্থী হর্ষদ ওয়াঞ্জলেকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী ভীমরাও তাপকির। তাও খোদ এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলের লোকসভা কেন্দ্রে। ব্যবধান সাড়ে তিন হাজার ভোটের।
আর অন্ধ্রে নিজামাবাদ জেলার বাঁশওয়াড়া বিধানসভা আসনে তেলেঙ্গানা ঝড়ে কার্যত উড়ে গিয়েছেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের প্রার্থী শ্রীনিবাস গৌড়। হারের ব্যবধান প্রায় পঞ্চাশ হাজার। জিতেছেন তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির প্রার্থী শ্রীনিবাস রেড্ডি। এই ভোটে প্রার্থী দেয়নি তেলুগু দেশম পার্টি এবং বিজেপি। ফলে লড়াই হয়েছিল দ্বিমুখী। গণনা শেষে দেখা গিয়েছে, প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজারের মধ্যে ৮৩ হাজারেরও বেশি ভোটদাতা সমর্থন করেছেন তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির প্রার্থীকে। জয়ের পর শ্রীনিবাস রেড্ডি দাবি করেছেন, এই ফল পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য নিয়ে অন্ধ্রের সাধারণ মানুষের মনোভাবেরই প্রতিফলন।
এর মধ্যে মহারাষ্ট্রের পরাজয়ে রাজ্যে ক্ষমতাসীন হিসেবে কংগ্রেসের ‘সম্মানহানি’ হলেও মুখ পড়েছে প্রধানত তাদের জোট শরিক এনসিপির। পুণের খাড়াকাসলা বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত রমেশ ওয়াঞ্জলে ছিলেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রতিনিধি। তাঁর স্ত্রী তথা কংগ্রেস নেত্রী হর্ষদ পুণেরই একটি জেলা পরিষদের দীর্ঘদিনের সদস্যা। তাই প্রাথমিক ভাবে স্থির ছিল, কংগ্রেসের টিকিটেই খাড়াকাসলা থেকে লড়বেন হর্ষদ। তবে জোটসঙ্গী এনসিপি জানিয়ে দেয়, ওই আসনটি তাদের ‘কোটা’র মধ্যে পড়ে। ফলে, বিজেপির বিরুদ্ধে কারা প্রার্থী দেবে, সেই নিয়ে জটিলতা ছিল।
কিন্তু ১৩ অক্টোবর, উপনির্বাচনের ঠিক আগেই হর্ষদকে এনসিপিতে এনে চমক দেন দলের নেতা তথা মহারাষ্ট্রের উপ মুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার। উদ্দেশ্য একটাই, স্থানীয় স্তরে হর্ষদের ‘জনপ্রিয়তা’ কাজে লাগানো। পুণের পুরসভায় অজিতের অনুগামীরাই ক্ষমতাসীন, তার উপর নির্বাচনী এলাকাটি পড়ছে শরদ-কন্যা সুপ্রিয়ার বারামতী লোকসভা এলাকার মধ্যেই। ফলে লড়াইটা ছিল মূলত এনসিপি বনাম বিজেপির। স্বাভাবিক ভাবেই এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের ফলাফলকে ‘গৈরিক জয়’ বলে দাবি করেছে বিজেপি-শিবসেনা শিবির। আর রামদাস অটওয়ালের ভারতীয় গণতান্ত্রিক দলের (আরপিআই) দাবি, তাদের সঙ্গে বিজেপি-শিবসেনা জুটি বাঁধার ফলেই এই জয় এসেছে। হারের দায় নিজের কাঁধে নিয়ে এনসিপি সাংসদ তথা শরদ-কন্যা সুপ্রিয়া জানিয়েছেন, দলের মধ্যে এই পরাজয়ের কারণ নিয়ে অন্তর্তদন্ত হবে। |