হিসারের হারে অণ্ণার জয় দেখছে না কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
হিসারে গোহারান
হারল কংগ্রেস।
জন লোকপাল বিল নিয়ে চাপ বাড়াতে হরিয়ানার এই লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছিল অণ্ণা-শিবির। আজ ভোটের ফল বেরোলে দেখা গেল, কংগ্রেস প্রার্থী জয় প্রকাশ শুধু হারেননি, জামানত জব্দ হয়েছে তাঁর। পেয়েছেন তৃতীয় স্থান। গত বারও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভজনলালের এই আসনে কংগ্রেস তৃতীয় হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের চেয়ে এ বার ৫০ হাজার ভোট কমেছে তাদের। জিতেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভজনলালের ছেলে, বিজেপি সমর্থিত কুলদীপ বিষ্ণোই।
প্রত্যাশিত ভাবেই উল্লসিত অণ্ণা শিবির। আপাতত মৌনী হলেও ফল জানার পর মন্তব্যহীন থাকেননি অণ্ণা হজারে। মনমোহন সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে নিজের ব্লগে হুমকি দিয়েছেন, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে জন লোকপাল বিল পাশ না হলে তিনি আবার নির্বাচনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার করবেন।
কংগ্রেস অবশ্য এই হারকে অণ্ণার দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের প্রভাব বলে মানতে না রাজি নয়। যেমন ভজনলালের পুত্র বিষ্ণোই নিজেও মনে করছেন না, অণ্ণার কংগ্রেস-বিরোধী প্রচারে তাঁর কোনও লাভ হয়েছে। কারণ, আসনটা শূন্য হয়েছিল তাঁর বাবার মৃত্যুতে। আর কংগ্রেস এই কেন্দ্রে এক বারও জেতেনি গত তিন দশকে। তবু হিসারের ফল চিন্তায় ফেলেছে কংগ্রেস নেতৃত্বকে। অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “দলের হার সব সময়ই দুঃখের। কেন
উপনির্বাচনে আমরা হেরে গেলাম, তার পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।” কারণ শুধু হরিয়ানা নয়, মনমোহন-সরকারকে অশনি সঙ্কেত পাঠিয়েছে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র ও বিহারের তিনটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফলও। সব ক’টিতে হেরেছে কংগ্রেস।
হিসারের হারের পিছনে কংগ্রেসের এক-এক নেতা আজ এক-এক রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যদিও তাঁদের কেউই হিসার বা অন্য কেন্দ্রের ফলকে অণ্ণার আন্দোলনের প্রভাব বলে মানতে রাজি হননি। হরিয়ানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক বি কে হরিপ্রসাদের যুক্তি, বাবার মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনে সহানুভূতি ভোট কুড়িয়েছেন বিষ্ণোই। অণ্ণার প্রচারের কোনও প্রভাব পড়েনি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের যুক্তি, ওখানে জাতপাতই বড় হয়ে উঠেছিল। কারণ, কংগ্রেসের প্রার্থী জয় প্রকাশ এবং আইএনএলডির অজয় চৌটালা (প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালার ছেলে) দু’জনেই জাঠ। জাঠ ভোট ভাগ হওয়ারই ফায়দা তুলেছেন অ-জাঠ নেতা বিষ্ণোই।
অণ্ণার প্রভাব খারিজ করতে কংগ্রেসের আরও যুক্তি, দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলনের প্রভাব সত্যিই থাকলে হিসারে কংগ্রেসই জিতত। কারণ, বিষ্ণোইয়ের বিরুদ্ধেও যথেষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রেণুকা চৌধুরী তাই অণ্ণা শিবিরকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “এর পরে টিম অণ্ণা বিষ্ণোইকে দুর্নীতিমুক্ত বলে শংসাপত্র দেয় কি না, তা জানতে আমি কৌতূহলী।” তাঁর যুক্তি, গত লোকসভা ভোটেও কংগ্রেস ওই আসনে কংগ্রেস তৃতীয় হয়েছিল। তাই কৌশলগত কারণেই হিসারকে বেছে নিয়েছিল অণ্ণা শিবির। তাঁদের আন্দোলনেই কংগ্রেস হারছে এটা বোঝানোর কাজটা যাতে সহজ হয়।
কংগ্রেস প্রকশ্যে এই সব যুক্তি দিলেও, হিসেব বলছে ভোটের হার কমেছে তাদের। যেটা অবশ্যই ভাবাচ্ছে দলের নেতৃত্বকে। বিষ্ণোই পেয়েছেন প্রায় ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ভোট। তাঁর থেকে ৬ হাজারের মতো ভোট কম পেয়েছেন দ্বিতীয় স্থানের চৌটালা। সেখানে কংগ্রেসের প্রার্থী তৃতীয় হলেও দেড় লক্ষ ভোটও পাননি।
কংগ্রেসকে হারাতে হিসারে অণ্ণার ভিডিও প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আজ তিনি বলেন, “এই রায় জন লোকপাল নিয়ে মানুষের রায়। কংগ্রেসের উচিত এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ওই বিল পাশ করানো।” পিছিয়ে নেই বিজেপিও। তারা প্রচার চালিয়েছিল, এই ভোট মনমোহন সরকারের ‘লিটমাস পরীক্ষা’। কংগ্রেস গোহারান হারায় বিজেপির মুরলীমনোহর জোশী আজ বলেন, “এই রায় দেখিয়ে দিয়েছে, দুর্নীতি মোকাবিলার প্রশ্নে কংগ্রেস যে নীতি নিয়ে চলছে, তার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন মানুষ।”
চিন্তার ভাঁজ হরিয়ানার কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিংহ হুডার কপালেও। বিষ্ণোই দাবি করেছেন, এই ভোট থেকেই রাজ্যে হরিয়ানা জনহিত কংগ্রেস এবং বিজেপি জোটের সরকার গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হল। তাঁর যুক্তি, মানুষ রাজ্যের কংগ্রেসের সরকারের কাজে বীতশ্রদ্ধ হয়েই এই রায় দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হুডার দুর্নীতি ও জাতপাতের রাজনীতির ফলেই কংগ্রেস প্রার্থীর তৃতীয় স্থান জুটেছে।
|
অণ্ণাকে নোটিস সুপ্রিম কোর্টের
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
তাঁর হিন্দ স্বরাজ ট্রাস্টের আর্থিক অসঙ্গতির জেরে জনস্বার্থ মামলা নিয়ে এ বার অণ্ণা হজারেকে নোটিস দিল সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি, শীর্ষ আদালত আজ এই অসঙ্গতির কথা জানিয়ে কেন্দ্র, গুজরাত সরকার এবং সিবিআইকেও তাদের বক্তব্য জানাতে বলেছে। অণ্ণার হিন্দ স্বরাজ ট্রাস্টে দীর্ঘ দিন ধরে আর্থিক অনিয়ম হচ্ছে এবং এর তদন্ত ভার সিবিআইকে দেওয়া হোক বলে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আফতাব আলম এবং রঞ্জনা দেশাইয়ের ডিভিশন বেঞ্চ আজ সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই নোটিস দেওয়ার কথা বলেছে। |