|
|
|
|
চুরির ‘সহজ পাঠ’ শেখাল ধৃত দুই চোর |
শমীক ঘোষ |
রাতে বা ভরদুপুরে বেপাড়ায় ঘোরাঘুরি করলে পাড়ার লোকের সন্দেহ হয়। কিন্তু বিকেল সাড়ে তিনটের পরে অচেনা লোক দেখলে কেউ বড় একটা সন্দেহ করে না। বেশ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় তারা এটা বুঝেছে বলে নিজেরাই পুলিশকে জানাল দুই ‘সত্যবাদী’ চোর।
পুলিশের দাবি, পর্ণশ্রী থানা এলাকায় তিনটি চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫ অক্টোবর গ্রেফতার হওয়া দুই দুষ্কৃতী শেখ ছোটু (২০) এবং মহম্মদ শের আলি ওরফে মির বাবু (৩০) জেরায় জানিয়েছে এ কথা। এমনকী সরশুনা, হরিদেবপুর, ঠাকুরপুকুর এবং শকুন্তলা পার্ক এলাকায় কোন কোন বাড়িতে কবে, কখন চুরি করেছে, সে সমস্ত কথাও বিস্তারিত বলেছে দু’জনে।
পুলিশ জানায়, মির ও ছোটুর বাড়ি আক্রার বগা নোয়াপাড়ায়। দুপুরে খেয়েদেয়ে তারা ট্রেন ধরে চলে আসত ব্রেসব্রিজ অথবা মাঝেরহাটে। সেখান থেকে অটোয় চেপে সোজা নির্দিষ্ট এলাকায়। ট্রেনে না উঠলে ডাকঘর মোড়ে এসে সেখান থেকে অটোয় উঠত তারা। যে পাড়ায় চুরি করবে, সেখানে দু’জনে পৌঁছে যেত বেলা সাড়ে তিনটে-চারটের মধ্যে। তার পরে ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে গোটা পাড়া ঘুরঘুর। তার মধ্যেই প্ল্যান ছকা শেষ। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, বিকেল পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই তারা বুঝে যেত এলাকার কোন কোন বাড়িতে লোক নেই। নির্দিষ্ট একটি বা দু’টি বাড়িই হত তাদের ‘টার্গেট’।
পুলিশের দাবি, ছোটু জানিয়েছে, এর পরে সন্ধে নামলেই গৃহস্থের বাড়িতে ‘কলিং বেল’ বাজিয়ে অপেক্ষা করত তাদের এক জন। অন্য জন বাড়ির চারপাশে ঘোরাঘুরি করে দেখত আশপাশের বাড়ি থেকে তাদের উপরে কেউ নজর রাখছে কি না। তৃতীয় জন থাকত পাহারায়। সঙ্গে পাড়ার লোকজনের উপরে নজরদারির ভার তারও। বেশ কয়েক বার ঘণ্টা বাজিয়েও ভিতর থেকে সাড়াশব্দ না মিললে তারা নিশ্চিত হত বাড়ি ফাঁকা, লোকজন নেই। ব্যস! তার পরে সন্ধ্যা আরও ঘনালে বাথরুমের কাচ অথবা শিক খুলে ঝুপ করে ঢুকে পড়া। ঘণ্টা দেড়েকে দেরাজ-আলমারি ভেঙে সাফ সোনার গয়না, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, ঘড়ি, নগদ টাকা। প্যান্টের পকেট বা ছোট হাতব্যাগে ভরা যাবে, শুধু এমন জিনিসই চুরি করত তারা।
ছোটু আর মির ছাড়া আর কে কে আছে দলে? পুলিশের দাবি: মীর জানিয়েছে, দল চালায় বেবি নামে বছর পঁয়তাল্লিশের এক মহিলা। মির সম্পর্কে তার বৈমাত্রেয় ভাই। এ ছাড়া দলে রয়েছে শাহজাদা নামে বছর চল্লিশের আর এক দুষ্কৃতী। সে বেবির জামাই। এদেরও বাড়ি বগা নোয়া পাড়াতেই। বেবি আর শাহজাদাকে এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। |
|
|
 |
|
|