বিএসইউপি প্রকল্পে বাড়ি তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠল দুর্গাপুর পুরসভার বিরুদ্ধে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বাড়ি তৈরি ও বিলিতে দুর্নীতির অভিযোগে সম্প্রতি মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে যুব তৃণমূল। মেয়র রথীন রায় অবশ্য জানান, এই প্রকল্পে বেশ কয়েক হাজার বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। দু’একটি বাড়িতে ত্রুটি থাকতে পারে। তবে বাড়ি বিলি করা হয়েছে নিয়ম মেনেই। তবু কোনও অনিয়ম ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাঁর আশ্বাস।
দুর্গাপুর ২ ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় জানান, বিধানসভা ভোটের পরে তাঁরা পুরসভার বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে খোঁজ-খবর শুরু করেন। তখনই জানতে পারেন, বিএসইউপি প্রকল্পের কাজ ঠিক মতো হয়নি। তিনি বলেন, “এমন দায়সারা ভাবে কাজ সারা হয়েছে যে, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করতে আসার আগেই একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরে।” যুব তৃণমূল সদস্য খোন্দেকার পারভেজ আলির অভিযোগ, “ভয় দেখিয়ে উপভোক্তা ও বিরোধীদের চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” দেবব্রতবাবুর আরও অভিযোগ, দুর্নীতি হয়েছে বাড়ি বিলিতেও। তিনি বলেন, “বস্তিবাসীদের জন্য সিএমইআরআই কলোনিতে ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করেছিল পুরসভা। অথচ সেখানে সিপিএম নেতা-কর্মীদের ঘনিষ্ঠ অনেকে বাস করছেন। এমনকী তাঁদের কেউ কেউ সরকারি বা আধা সরকারি সংস্থায় চাকরিও করেন।” তাঁর দাবি, অন্তত তিন জন সিপিএম নেতার আত্মীয় বেআইনি ভাবে বাড়ি পেয়েছেন। দেবব্রতবাবু বলেন, “লিখিত ভাবে সব তথ্য মেয়রকে জানিয়েছি।” |
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে প্রায় চার হাজার বাড়ি তৈরি হয়। বাড়ি পিছু বরাদ্দ ছিল এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। এক ঠিকাদার সংস্থা এই বাড়িগুলি তৈরি করেছিল। কিন্তু ওই সংস্থা বাড়ি তৈরির কাজে বিলম্ব করছিল। এ দিকে, বেশ কিছু উপভোক্তা বাড়ির গুণমান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তত দিনে পুরসভা আরও প্রায় দেড় হাজার বাড়ি তৈরির অনুমোদন পেয়েছে। সব দিক বিচার করে পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয়, ‘নিজের বাড়ি নিজে করুন’ নীতি নেওয়া হবে। এই নিয়মে বাড়ি গড়ার দায়িত্ব উপভোক্তার। বাড়ি তৈরি হলে বাস্তুকারেরা পরীক্ষা করে দেখার পরে টাকা দিয়েছে পুরসভা। কিছুটা স্বচ্ছল উপভোক্তারা সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি নিজেরাও টাকা দিয়ে ইচ্ছা মতো বাড়ি তৈরি করেছেন।
মেয়র তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রথীনবাবু বলেন, “ওই প্রকল্পে প্রায় ছ’হাজার বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল। দু’একটিতে গণ্ডগোল হতে পারে।” বাড়ি বিলিতে অনিয়ম প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, স্বচ্ছতা বজায় রেখেই কাজ করা হয়েছে। তবু যদি খোঁজ নিয়ে কোনও অনিয়ম ধরা পড়ে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়রের এই আশ্বাসে অবশ্য খুব একটা আশ্বস্ত নয় যুব তৃণমূল। সংগঠনের নেতা শান্তনু সোম বলেন, “আগেও বিষয়টি মেয়রকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ফল হয়নি। এ বার তিনি কী পদক্ষেপ করেন, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।” |